রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে যে ডাল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এমনকি এটি হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল। ডাল এবং মটরশুটি প্রোটিন এবং ফাইবার আছে, যার কারণে এটি সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল।রক্তে শর্করার মাত্রা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন: আপনার কি রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্যের প্রয়োজন? একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষাতে দেখা গিয়েছে যে আপনার খাদ্যতালিকায় ডাল, বিশেষ করে শিম, মটর, মসুর এবং ছোলা অন্তর্ভুক্ত করা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।এছাড়াও, গবেষণায় এটিও পাওয়া গিয়েছে যে ডাল হার্টের স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) কমায় এবং এইচডিএল (ভাল কোলেস্টেরল) বাড়ায়, যার ফলে হার্টের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়।নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে এই গবেষণার একটি পর্যালোচনা প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে লেখা হয়েছে যে স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগ প্রতিরোধে ডাল একটি সম্ভাব্য ভূমিকা রাখে।আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ মেডিসিনের সহকারী সহযোগী অধ্যাপক টেলর সি. ওয়ালেস বলেন, ডাল খেলে সেই বিপজ্জনক ও দীর্ঘমেয়াদী রোগগুলি এড়ানো যায়। এ ধরনের রোগে আক্রান্ত মানুষ নিয়মিত ডাল খেলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ থেকে নিরাপদ থাকবেন।ডাল উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস, ফাইবার, ফোলেট এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ। এগুলিতে জিঙ্ক, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ রয়েছে। তাছাড়া এতে চর্বিও কম থাকে।ডালে রয়েছে উপকারী মনো এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডাল অন্তর্ভুক্ত করে অনেক উপকার পেতে পারে। কিন্তু কোন ডাল খাওয়া ভাল?বিশেষ করে ডায়াবেটিসের মতো রোগের রোগীরা এই নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ থাকেন। কোন ডালটি তাঁদের জন্য বেস্ট বুঝতে পারেন না অনেকেই। বলুন তো, এতো রকমের ডালের মধ্যে কোন ডালটি সুগার পেশেন্টদের জন্য সেরা?একটি সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুম্বইয়ের অ্যাপোলো স্পেকট্রা হাসপাতালের ডায়েটিশিয়ান ডাঃ জিনাল প্যাটেল বলেছেন, আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে আপনাকে আপনার ডালটি বুদ্ধির সঙ্গে বেছে নিতে হবে।ডাঃ জিনাল প্যাটেল বলেন, “মুসুর ডাল বেছে নিন কারণ এটি রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং এমনকি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ, “পাশাপাশি উরদ ডাল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং শক্তি জোগাবে। তবে মিস করবেন না মুগ ডালকেও। এতে ক্যালোরি কমে এবং এতে অত্যাবশ্যক পুষ্টি, ফাইবার এবং প্রোটিন রয়েছে”।ফাইবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ, ভিটামিন এবং খনিজের ভাণ্ডার, মসুর ডাল ডায়াবেটিসের জন্য দুর্দান্ত। এছাড়াও, ৩৩ এর কম গ্লাইসেমিক সূচকের কারণে, এই ডাল খাওয়ার পরে রক্তের গ্লুকোজের মান বৃদ্ধি পায় না কোনও ভাবেই।এছাড়াও ডায়াবেটিসের খাদ্য তালিকার অন্যান্য বিকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেগুলি : ছোলা: ডায়াবেটিস কমাতে (গমের পরিবর্তে) রুটি তৈরিতে ছোলার আটা ব্যবহার করা যেতে পারে। এই খাদ্যে পুষ্টিগুণ প্রচুর। একইসঙ্গে একজন ব্যক্তিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ রাখতে সাহায্য করে ছোলা।রাজমা – “আপনি কি রাজমা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন শুধু এই কারণে যে আপনি ডায়াবেটিক? জানেন কী আদতে কিডনি বিনসে খুবই কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স – ১৯। উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং উচ্চ ফাইবার বিশিষ্ট রাজমা ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়ার জন্য খুবই উপযুক্ত।বাঙালি ছোলার ডাল – ‘চানে কি ডাল’ বা ছোলার ডাল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুপারফুড হিসাবে কাজ করে। এর কারণ হল এর উচ্চ প্রোটিন মান এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৮। ফলিক অ্যাসিড এবং আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে কাজ করে।ছোলার ডালের উচ্চ ফাইবার উপাদান হজমের উন্নতি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্ভাবনা কমায়। এছাড়াও, ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বজায় রাখার জন্য দায়ী।ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও একটি ভাল ডাল। এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াতেও সাহায্য করে।ভাঙা এবং খোসা ছাড়ানো কালো ছোলার ডাল (উড়দ ডাল) – “সমস্ত দক্ষিণ ভারতীয় খাবার যেমন ইডলি এবং দোসা তৈরি হয় উরদ ডাল দিয়ে। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৪৩। এটিকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি উপযুক্ত ডাল হিসেবে কার্যকরী বলে বিবেচনা করা হয়।উড়দ ডাল প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। এর ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার উপাদান কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে, যখন পটাসিয়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় বলেই ডায়েটিশিয়ান এবং ডায়াবেটিস শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞ গরিমা গোয়ালের পরামর্শ।
