বিস্ফোরক দিলীপ ঘোষ

‘আজ থেকেই আমি এই কাজ শুরু করছি…’, ভোটের ফলাফল সামনে আসতেই বিস্ফোরক দিলীপ ঘোষ!

কলকাতা: সরকার গঠনের পথে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। জোট শরিকদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই এক প্রস্থ বৈঠক করেছেন বিজেপির জোট নেতৃত্ব। কিন্তু কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে গেরুয়া শিবিরের বেনজির খারাপ পারফরম্যান্স। বাংলায় এক ধাক্কায় ১২টি আসনে নেমে আসার মতোই বড় ধাক্কা দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের চরম পরাজয়।

প্রাথমিক ভাবে খবর, বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন থেকে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ভোটে হারার পরে আপাতত নিজেকে ‘গৃহবন্দি’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, তাঁকে হারানোর দলেই ‘চক্রান্ত’ হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে যে কাঠি করে মেদিনীপুর থেকে সরানো হয়েছে, সেটা তো সকলেই জানে! মাঝখান থেকে আমাকে হারাতে গিয়ে মেদিনীপুর আসনটাও হাতছাড়া হয়ে গেল!’’

বৃহস্পতিবার অবশ্য সকাল সকাল ইকো পার্কে পুরনো মেজাজেই পাওয়া গেল দিলীপ ঘোষকে। একের পর এক সাংবাদিকদের প্রশ্নে দিলেন যুৎসই জবাব। দিল্লিতে সরকার গঠন নিয়ে বেনজির দর কষাকষি প্রসঙ্গে এদিন দিলীপ ঘোষ বলেন, “হাতি কাদায় পড়লে ব্যাঙ লাথি মারে। হাতি তো কাদায় পড়ে গিয়েছে। তবে মোদি শাহ জুটি আছেন। এরা পুরনো পার্টনার। চিনি এঁদের। একটু বেশি দর হাঁকছেন। মানুষ ম্যান্ডেট দিয়েছে। সুশাসন দিতেই হবে। সেটা যেন কেউ ভুলে না যায়। আঞ্চলিক দল সবসময় নিজের কথা ভাবে। অনেকে আগে নিজের স্বার্থেই জোট ছেড়েছে আবার নিজেই ফিরে এসেছে।”

বিকশিত ভারত কী ধাক্কা খাবে?
দিলীপ ঘোষের উত্তর, “নরেন্দ্র মোদি ভোটের জন্য রাজনীতি করেন না। তিনি উন্নয়নের জন্য সরকার চালান। উনি একটা রোড ম্যাপ তৈরি করেছিলেন। আমার মনে হয় না এই সব ঘটনায় ওই কাজে খুব বাধা আসবে। কারণ দেশের আর্থিক স্থিতি ভাল। পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা গত মাসে জি এস টি কালেকসন হয়েছে। টাকার অভাব নেই। ইচ্ছার অভাব নেই। যারা এগুলোতে বাধা দেবেন তাদের নিজের এলাকায় গিয়ে জবাব দিতে হবে। ২০০৪ সালের কথা মনে আছে। বাজপেয়ীর সঙ্গে যারা বেশি দর কষাকষি করেছিলেন তারা পরে সাপ হয়ে গিয়েছেন। তার মধ্যে মমতা বন্যোপাধ্যায়ের দলও ছিল।”

কর্মীদের মনোবল আবার চাঙ্গা করা যাবে?

“ভোট এলেই এই রাজ্যে এই জিনিস হয়। যারা বিজেপি করেন, তারা এটা জেনেই বিজেপি করেন। প্রায় দশ বছর ধরে এটাই চলে আসছে। পুলিশের ওপর আর কেউ ভরসা করে না। তা সত্বেও দলীয় কর্মীরা পার্টির সঙ্গেই আছেন। ১৯ তারিখ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে।”

আপনি নিজে মনোবল বাড়াবেন?

আমি সব জেলায় যাব। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলব। আজ থেকেই আমি এই কাজ শুরু করছি। আগেও করেছি। এখনও করব।

পরাস্ত প্রার্থীরা ফোন পেয়েছেন দল থেকে?

না এখনও সেরকম কিছু হয়নি। আগে সরকার গঠন হোক। পরিস্থিতি পর্যালোচনা হোক।

মেদিনীপুরের সংসদ হিসেবে আপনার ভূমিকা অ্যাক্টিভ ছিল। এবার আপনি কি করবেন?

আমাকে মেদিনীপুর থেকে ওরা ফোন করেছিল। ওদের মন খারাপ। ভেবেছিল আমি প্রার্থী হয়েছি। জিতে যাব। আমি যাব ওখানে। বর্ধমানেও যাব। ওখানেও কর্মীরা আক্রান্ত। আমি রাজ্য সভাপতি থাকার সময় পুরো রাজ্যে ঘুরতাম। দল আমাকে সেই দায়িত্ব দিক বা না দিক, আমার সেই একই ভূমিকা থাকবে। যতদিন আমি রাজনীতি করব আমার ভূমিকা পাল্টাবে না।

তৃণমূলের তারকা জয়ী প্রার্থীদের আর এলাকায় দেখা যাবে?

ইতিহাস তো উল্টো কথা বলছে। মুনমুন সেন, সন্ধ্যা রায়, মিমি, নুসরত। মানুষকে লোভ দেখানো হয়। দিয়ে বিভ্রান্ত করে ভোট টেনে নেওয়া হয়। ভোট মিটলে আর খেয়াল থাকে না। উল্টে ওরা বলে বিজেপির লোক কোথায়? আমরা তো ছিলাম। কাজের দায়িত্ব কিন্তু আমাদের নয়। এই দায়িত্ব সরকারের। এবার মানুষের এটা বোঝা উচিত।

দলে ক্ষোভ বাড়ছে?

ভোটে হারজিত হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সংগঠন শুয়ে পড়েছে। কর্মীরা বেরোননি। আমি নিজে মেদিনীপুরে বুথ লেভেল পর্যন্ত সংগঠন তৈরি করেছিলাম গতবার। সেখানে প্রচুর কাজ করেছিলাম সংসদ কোটার টাকায়। মানুষ খুশি ছিল। সব দলের লোক আমার পক্ষে ছিল। যেকোনও কারণে হোক পার্টি ওখানে আর আমাকে দেয়নি। সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল এটা প্রমাণ হয়ে গেল। দলের সংগঠন ঢিলে হয়ে গেছে। আমরা এবার প্রথম লোক খুঁজেই পাইনি। তাই সব জায়গায় আমাদের ভোট কমে গেছে আর পরাজয় হয়েছে।

সংখ্যালঘু ভোট

বিজেপির রাজনীতি দেশের স্বার্থে। কিছু প্রকল্প করেও কোনো লাভ হয়নি। সংখ্যালঘু মানুষ সব থেকে বেশি কেন্দ্রীয় গরীব কল্যাণ যোজনার লাভ পেয়েছে। কিন্তু আমাদের ভোট দেয়নি। দেয়নি তো দেয়নি। আমরা চেষ্টা করেছি। সবার জন্য কাজ করছে বিজেপি। সবাই ভোট দেয়নি তো কি হয়েছে।

অভিজিৎ চন্দ