এই জীব জগৎ বড়-ই অদ্ভুত! প্রতিটি বাঁকে তার কত না চমক! কতরকম প্রাণী, তাদের কতরকম বৈশিষ্ট্য! কেউ মলত্যাগের সময় মারা যায়, কেউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, কেউ বা দুধ ও ডিম দুটোই দেয়, কেউ বা ভীষণ ছোট, কেউ বা বিশালাকায়, কেউ নাক দিয়ে খায়, কার-ও বা হৃৎপিণ্ড রয়েছে মাথায়, কেউ সারাদিন ঘুমায়, আবার এমন প্রাণীও আছে যে গোটা জীবদ্দশায় একফোঁটাও ঘুমায় না, কোন-ও প্রাণীর রূপ দেখলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়, আবার কোন-ও প্রাণী এতটাই কদাকার যে গা-গুলিয়ে ওঠে। আচ্ছা বলুন তো, এই বিশ্বের সবথেকে খারাপ দেখতে প্রাণী কোনটা?
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর প্রাণী যেহেতু আছে, কুৎসিত বা কদাকার প্রাণীও আছে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, বিশ্বের সবথেকে খারাপ দেখতে প্রাণীটির নাম হল ব্লবফিশ। বৈজ্ঞানিক নাম Psychrolutes marcidus। এই মাছের দেখা মেলে, সারা শরীর যেন জেল দিয়ে তৈরি।
২০১৩ সালে ‘আগলি অ্যানিম্যাল প্রিজারভেশন সোসাইটি’ অনলাইন একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সবচেয়ে কুৎসিত প্রাণী খুঁজে বার করার জন্য। ভোটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ নির্ধারণ করবেন সবচেয়ে কুৎসিত প্রাণী কোনটি। প্রায় ৩ হাজার মানুষ এ ভোটে অংশগ্রহণ করেন। সবচেয়ে খারাপ দর্শণ প্রাণী হিসাবে ৭৯৫টি ভোট পায় ব্লবফিশ। তখন থেকেই ব্লবফিশকে বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত প্রাণীর তকমা দেওয়া হয়৷
২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ডের উপকূলে প্রথম ব্লবফিশ দেখতে পাওয়া যায়৷ অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া বা নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রের ৬০০-১২০০ মিটার গভীরে দেখতে পাওয়া যায় ব্লবফিশ। তবে সমুদ্রের গভীরে মাছটির আবার ভিন্ন রূপ, দেখতে অপূর্ব।
ব্লবফিশ কখনওই নিজের ইচ্ছায় ‘টোয়াইলাইট জোন’ বা সমুদ্রের সূর্যের আলোবিহীন অঞ্চলের উপরে আসে না। সমুদ্রের গভীরে জলের চাপ থাকে অনেক বেশি। সেই জলের চাপ সহ্য করে টিকে থাকার মত করেই ব্লবফিশ অভিযোজিত হয়েছে৷ এই কারণে ব্লবফিশের হাড় নরম এবং মাংস জেলির মত৷
জলের প্রচণ্ড চাপে এই মাছের হাড় কিংবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেঙে যায় না৷ পাশাপাশি তাদের শরীরে সাঁতার কাটার উপযোগী ব্লাডার বা গ্যাস ভর্তি কোনও গহ্বর নেই। কারণ জলের প্রচণ্ড চাপে এই গহ্বর ফেটে যায়।
এই বিশেষ শারীরিক গঠনের কারণে ডাঙায় বা জলের উপরে, যেখানে জলের চাপ কম, সেখানে উঠে এলে তারা ফুলে ওঠে এবং কদাকার রূপ ধারণ করে৷
Post navigation
Just another WordPress site