আমাদের শরীর একটা সিস্টেমে চলে। আমাদের শরীরের নিজস্ব বায়োলজিক্যাল ক্লক আছে। তার মানে আমাদের শরীর সময়ের গতি অনুযায়ী চলে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, খাবার হজম করার জন্য, পাকস্থলীতে অনেক ধরনের এনজাইম এবং যৌগ নিঃসৃত হয় যা খাবারকে ভেঙে তা থেকে পুষ্টি আহরণ করতে সাহায্য করে। কিন্তু এই নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী খাবার না খেলে এনজাইমের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। একইভাবে, অন্যান্য জিনিসের ক্ষেত্রেও শরীরের নিজস্ব নিয়ম আছে, যার অন্যথা করলে হয়ে যায় দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি।কিন্তু আধুনিক জীবনধারায় আমরা কোনও কাজই ঠিকমতো করি না। রাতের বেলা এমন বহু কাজ করে থাকি, যা আদতে করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর৷ সেগুলি আমাদের শরীরকে ভিতর থেকে ঝাঁঝরা করে দেয়। সমস্যা হল অধিকাংশ মানুষই এই মতো কাজ করে। আসুন জেনে নিই, ঘুমোতে যাওয়ার আগে কোন কোন কাজ শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর৷অ্যাপোলো হাসপাতালের চিফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ডাঃ প্রিয়াঙ্কা রোহাতগি জানাচ্ছেন, গভীর রাতে ডিনার করে সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় শুয়ে পড়া খুবই খারাপ অভ্যাস। প্রথমত, আপনি যদি রাতে দেরি করে ঘুমোন, তাহলে আপনার শরীরের পুরো হরমোন সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটে এবং দ্বিতীয়ত, এনজাইমের ভারসাম্যও বিঘ্নিত হয়। এর ফলে মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায় এবং আপনি ধীরে ধীরে অনেক ধরনের রোগের শিকার হন।যদি ঘুমানোর ঠিক আগে সিগারেট-মদ পান করেন, তবে তা অবিলম্বে পরিবর্তন করুন৷ কারণ, এটি করে আপনি আপনার শরীরকে রোগের বাসা বানিয়ে ফেলছে। রাতে ঘুমোনোর সময়, শরীরের অভ্যন্তরীণ অংশগুলিও কম সক্রিয় থাকে৷ তবে সিগারেট এবং অ্যালকোহলের ক্ষতিকারক উপাদানগুলি এটি নষ্ট করতে কাজ করে। এটি করলে পাকস্থলীর অ্যাসিড রিফ্লাক্স, বুকজ্বালা এবং হজমের সমস্যা দিনে দিনে বাড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে এটি করলে অনেক রোগ হতে পারে।বেশিরভাগ মানুষই রাতে ডিনার করার পরপরই বিছানায় শুয়ে পড়েন। এই পদ্ধতিও সঠিক নয়। এই কারণে, হজম নষ্ট হতে পারে এবং বিপাক প্রক্রিয়াও ধীর হয়ে যেতে পারে। তাই রাতের খাবার খাওয়ার পর অন্তত ১০ মিনিট হাঁটুন। এতে শান্তির ঘুম আসবে।প্রযুক্তির এই যুগে, খুব কমই এমন কেউ থাকবেন যে ঘুমানোর আগে মোবাইল স্ক্রিনে সময় কাটান না। ঘুমোনোর আগে কিছুক্ষণ মোবাইলে কিছু দেখতে সবাই পছন্দ করে। কিন্তু এটা নানাভাবে ক্ষতিকর। প্রথমত, এটি আপনার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল করে, দ্বিতীয়ত আপনি দ্রুত ঘুমোতে পারেন না, তৃতীয়ত স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এর ফলে। এই সময় এটি হয়ত ভাল মনে করছেন, কিন্তু এর কারণে আপনি পরের সারা দিন চাপে থাকবেন এবং আপনার মনের মধ্যে কোনও না কোনও বিষয়ে আটকা পড়ে যাবেন।অনেকেরই রাতে ঘুমানোর আগে চা-কফি পান করার অভ্যাস থাকে। এটা করা একেবারেই অন্যায়। চা এবং কফিতে ক্যাফেইন যৌগ থাকে। ক্যাফেইন শরীরকে আয়রন এবং ক্যালসিয়াম শোষণ করতে বাধা দেয়, যার কারণে শরীর প্রয়োজনীয় খনিজগুলি পায় না।
