চাপানউতোরে ভোগান্তি

Howrah News: ভারী বৃষ্টিতে হাওড়ায় জমা জল, রেলের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে উঠল প্রশ্ন

হাওড়া: নাগাড়ে ভারী বৃষ্টি শুরু হতেই বিপত্তি। হাওড়ার দু’টি নিকাশি খাল, রানি ঝিল ও সাঁতরাগাছি ঝিল  সংস্কারের অভাবে জল টেনে বের করতে পারছে না৷ পুর নিগমের দাবি তারা খাল সংস্কারে এগিয়ে এলেও, রেল কোনও সহযোগিতা করছে না৷ বামুনগাছি, বেলগাছিয়া, সালকিয়ার কামিনী স্কুল রোড, পঞ্চাননতলার কিছু অংশ, বেলিলিয়াস রোড, দাসনগর এলাকায় জল জমে ছিল৷ সালকিয়ার ঘোষপাড়া, বামুনগাছি ও কোনার বিস্তীর্ণ এলাকার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত৷ কোনার ভূতবাগান, পেয়ারাবাগান এলাকায় এখনও অনেক ঘরের ভিতরে জল জমে যায় ভারী বৃষ্টি হলে৷

পুরকর্তাদের অভিযোগ, জল ফেলার ব্যাপারে রেলের তরফে তাঁদের কাছে কোনও চিঠি বা বার্তা দেওয়া হয়না। উল্টে পুরকর্মীরা রেললাইনের কাছে কাজ করতে গেলে তাঁদের মারধর করা হয়৷ অভিযোগ এর আগে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি-শালিমার টার্মিনালের লাইন সম্প্রসারণের জন্য রেলের নয়ানজুলি মাটি ফেলে বোজানো হয়েছে। পুরসভার অভিযোগ, ইতিমধ্যেই নয়ানজুলির প্রায় এক-চতুর্থাংশ বুজে তো গিয়েছেই। পাশাপাশি, সাঁতরাগাছি সেতুর নীচের ঝিলটির জল বেরোনোর জন্য যে দু’টি পাইপলাইন ছিল, সেগুলিও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে মাটি চাপা পড়ে। ফলে নিকাশির নোংরা জল উপচে গিয়ে ঢুকে পড়ে ৪৪, ৪৫, ৪৭ এবং ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলিতে।উল্লেখ্য, এর আগে সাঁতরাগাছি স্টেশন সম্প্রসারণের সময়ে পাশের একটি ঝিল বোজানো নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সঙ্গে পুরসভার বিবাদ গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত।

পুর কর্তারা অভিযোগ করেছিলেন, রেল জলা জমি বুজিয়ে এলাকার নিকাশি সমস্যা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশও দূষিত করছে। পরে অবশ্য আদালতের নির্দেশেই রেল ফের কাজ শুরু করে।হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, সাঁতরাগাছি স্টেশনের কাছে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারে যে ওয়ার্ডগুলি রয়েছে, সেগুলির নিকাশির জল মূলত জমা হয় সাঁতরাগাছি রেল সেতুর নীচে একটি ঝিলে। ওই ঝিলটিকে স্থানীয় বাসিন্দারা সাঁতরাগাছি ‘ব’ বলেন। বর্ষায় ঝিলের জল বেড়ে গেলে একটি নিকাশি নালার মাধ্যমে বাড়তি জল রেল লাইনের নীচ দিয়ে গিয়ে পড়ে ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশি নালায়। সেখান থেকে বড় নর্দমার মাধ্যমে তা গিয়ে মেশে গঙ্গায় সংযোগকারী পচা খালে। প্রতি বছর একটু বেশি বৃষ্টি হলেই হাওড়ার রেল ইয়ার্ডে জল জমে যায়। লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি মেল অথবা এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয় এর জেরে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় যশ, আমফান এবং তার জেরে অতিবৃষ্টির কারণে লাইনে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।

পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের আধিকারিকরা অবশ্য বলেন, তাদের নিজস্ব নিকাশি ব্যবস্থা থাকলেও তা রেলের এলাকার ভিতরে। বাইরে সেই জল বের করার জন্য পুরসভার উপর নির্ভরশীল তারা। টিকিয়াপাড়া রেল ইয়ার্ডের কাছে দশরথ ঘোষ লেন থেকে একটি নর্দমার মাধ্যমে পচা খালে গিয়ে পড়ে ওই জল। আবার পিলখানার কাছে কপূর গলি ও নন্দ ঘোষ লেন দিয়ে একটি নর্দমা গঙ্গার দিকে গিয়েছে। পুরসভা এই নর্দমাগুলি ঠিকমতো পরিষ্কার না করায় দ্রুত জল নামছে না। পাম্প চালালেও নামানো যাচ্ছে না জল। এই জমা জলের জন্য শুধু পরিষেবাই নয়, ব্যাহত হচ্ছে টিকিয়াপাড়া রেল ইয়ার্ডের কাজও। তাই তারা নিজেদের জন্য কারশেড এলাকার জল পাঁচটি পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করে তা পাম্পের সাহায্যে সরাসরি গঙ্গায় ফেলার পরিকল্পনা করছে। এই প্রকল্পে খরচ হবে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। এ নিয়ে এক নিত্যযাত্রী বলেন, কয়েক দশক ধরে এই সমস্যা চলছে। এই সিদ্ধান্ত নিতে কেন রেল এত দেরি করল, সেটাই প্রশ্ন। সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাইছেন ভুক্তভোগীরা।