নয়াদিল্লি: দিল্লি হাই কোর্টের প্রথম মহিলা বিচারপতি হলেন ঔপনাসিক বিক্রম শেঠের মা লীলা শেঠ। প্রথমে তিনি দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব সামলান। এরপর প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁকে হিমাচল প্রদেশ হাই কোর্টে বদলি করা হয়। পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘ঘর অউর আদালত’-এ সেই সব দিনের কথা বিস্তারিতভাবে লিখেছেন লীলা।
ভাইকে সব সম্পত্তি দিয়ে দিল বোন: লীলা সেই সময় দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘‘একদিন তিন বোনের কাছ থেকে হলফনামা পেলাম যে তাঁরা তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি দুই ভাইয়ের নামে লিখে দিচ্ছেন। আমি অবাক। কোনও প্রতারণা হচ্ছে না তো! সন্দেহ হল। প্রশ্ন জাগল, মেয়েরা কেন তাঁদের অধিকার ছেড়ে দিচ্ছে? পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখার জন্য আমি তাঁদের আদালতে আসতে বলি।’’
ভাই আদালতে আসতে রাজি নয়: লীলা লিখেছেন, ভাইয়েরা আদালতে আসতে রাজি নয়। কখনও বলে অনেক দূর। আবার কখনও খরচের কথা তোলে। অনেক চেষ্টাচরিত্রের পর ভাইয়েরা আদালতে আসতে রাজি হল। আমি তিন বোনকে চেম্বারে ডাকলাম। বললাম, আইনি অধিকার সম্পর্কে তাঁরা কিছু জানে কি না। প্রত্যেকেই ঘাড় নাড়ল। তখন জিজ্ঞেস করলাম, পৈতৃক সম্পত্তি না নিয়ে কেন কাগজপত্রে সই করলেন? উত্তরে তাঁরা জানান, ভাইদের সঙ্গে তাঁরা সম্পর্ক নষ্ট করতে চান না। বাবার মৃত্যুর পর ভাইদের বাড়িই একমাত্র জায়গা যেখানে তাঁরা যেতে পারেন, কিংবা কোনও ঝামেলায় সাহায্য চাইতে পারেন। কিন্তু সম্পত্তির ভাগ চাইলে সম্পর্কে প্রভাব পড়বে।
লীলা শেঠ লিখেছেন, ‘‘আমি তিন বোনকে হলফনামা প্রত্যাহারের জন্য অনেক বোঝাই। কিন্তু তাঁরা রাজি হননি। আমি এই নিয়ে অনেক ভেবেছি।’’ আত্মজীবনীতে একটি মজার ঘটনাও উল্লেখ করেছেন লীলা। তিনি লিখেছেন, একবার বিচারপতি সাচার এবং আমি একটি ফৌজদারি মামলা শুনছিলাম। এক তরুণ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা তেমন কোনও প্রমাণ পাইনি। ফলে আমরা তাঁর সাজা খারিজ করে দিই। শুনানির সময় প্রতিদিন তাঁর মা-ও আসতেন। আমাদের রায় ঘোষণার পর তিনি আনন্দে লাফিয়ে উঠে, আমাদের আশীর্বাদ করতে শুরু করেন। বলেন, ‘প্রার্থনা করি, আপনাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হোক’।