Justin Langer in Dharavi - The Nightly

Justin Langer: বিলাসী জীবন যখন বাস্তবের মাটিতে পা দেয়; লখনউ টিমের সতীর্থের ধারাভি বস্তিতে হাজির জাস্টিন ল্যাঙ্গার

মুম্বই: চমকে গেলেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার। বস্তির মানুষ এভাবে থাকে! থাকতে পারে! বিলাসবহুল জীবন কাটিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। দারিদ্র্য কি দেখেননি? দেখেছেন। কিন্তু মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তি দেখে বাকরহিত তিনি।

আইপিলে লখনউ সুপার জায়ান্টসের মেন্টর ল্যাঙ্গার। তাঁর দলেরই ফিজিওথেরাপিস্ট রাজেশ চন্দ্রশেখর। ধারাভি বস্তির এক কামরার ঘরে থাকেন। সতীর্থের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। ফিরলেন এক আকাশ অভিজ্ঞতা নিয়ে।

আরও পড়ুন– ‘টাইম টু ট্রাভেল’ অফার চালু করল এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, বিমানের টিকিট শুরু মাত্র ১,১৭৭ টাকা থেকে !

‘দ্য নাইটলি’-র একটি পোস্টে নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন ল্যাঙ্গার, “আমাদের জীবনযাত্রাকে চরম বিলাসিতা বলব। মানুষ যে এভাবে দিন গুজরান করতে পারে, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি”। শহরের একদিকে আলোর রোশনাই, আর অন্য দিকে গাঢ় নিকষ অন্ধকারের এমন বৈপরীত্য ছুঁয়ে গিয়েছে ল্যাঙ্গারকে।

ল্যাঙ্গারের চুল কেটে দেওয়ার জন্য জেদ ধরেছিলেন রাজেশ। সেখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। “প্রথমে নিমন্ত্রণ নিয়ে বেশি কিছু ভাবিনি। তারপর দিন যায়। হঠাৎ রাজেশ আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করে চুল কাটব কি না। আমি বললাম কাটো। কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্লিপার, কাচি, জলের স্প্রে নিয়ে হাজির”।

চুল কাটতে কাটতে শুরু হয় গল্প। নিজের জীবনের কথা বলতে শুরু করেন রাজেশ। ল্যাঙ্গার বলেন, “আমি থ হয়ে যাই”। কীভাবে রাজেশ জীবন কাটিয়েছেন, কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এখানে উঠে এসেছেন, সেই সব কথা নাড়িয়ে দেয় ল্যাঙ্গারকে।

আরও পড়ুন– উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি চলবে, সপ্তাহের শেষে ফের ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে !

অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ব্যাটসম্যান এবং কোচের কথায়, “রাজীব বলছিলেন, মুম্বইয়ের বস্তিতে থাকেন। স্থানীয় ফুটবল দলের ম্যাসাজারের কাজ পান। সেখান থেকেই শুরু হয় ওঁর যাত্রা। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, বস্তিতে থাকতে কেমন লাগে”?

রাজেশের উত্তর শুনে অবাক হয়ে যান ল্যাঙ্গার। লখনউ টিম যে হোটেলে ছিলাম, তার বাথরুমের যে সাইজ, সেই রকম একটা ঘরে রাজেশ তাঁর বাবা, মা, ভাই, বোন এবং জামাইবাবুকে নিয়ে থাকেন। রাজেশের বাবা হেল্পার। ভাই সেলুনে কাজ করেন।

ল্যাঙ্গার বলেন, “বিলাসবহুল হোটেলের বাথরুমটা চমৎকার। আমি একবার ভাল করে দেখলাম। পার্থে এই সাইজের লন্ড্রি রুম আছে আমার। রাজেশের কথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না”। এরপর ল্যাঙ্গার রাজেশকে বলেন, তিনি রাজেশের বাড়িতে যাবেন। ভারতে ২৪ মে পর্যন্ত ছিলেন ল্যাঙ্গার, তার আগেরদিন।

এমন কথায় রাজেশ তো অবাক, “আপনি আমার বাড়িতে যাবেন”?  ল্যাঙ্গার বলছেন, “আমার ভাই আইপিএলের শেষ দুটি ম্যাচ দেখতে এসেছিল। সেও আমার মতোই মুগ্ধ। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা থেকে বিশ্ব কতদূরে সেটা বুঝতে হবে”।

ল্যাঙ্গার বলে চলেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা, “কংক্রিটের ঘুপচি ঘর। সরু পায়ে চলা পথ। যেন গোলকধাঁধা। সেখান দিয়ে আমরা যাচ্ছি। মনে হল, এখানে এলে হারিয়ে যাওয়া কোনও ব্যাপার নয়। দু’জন কোনওরকমে পাশাপাশি হাঁটতে পারে। চারদিকে অন্ধকার। মাথার উপরে জট পাকানো বিদ্যুতের লাইন”।

“অবশেষে আমরা রাজেশের বাড়ির দরজার সামনে এসে পৌঁছলাম। চার পাঁচ মিটারের ঘর। জুতো খুলে ঘরে ঢুকলাম। মনটা কেমন হয়ে গেল। প্রথমেই নজরে পড়ল সিঙ্গল ম্যাট্রেস। ম্যাসাজ টেবিলের মতো নয়। এক কোণে ছোট্ট রান্নাঘর, একটা উনুন আর ছোট্ট একটা ফ্রিজ। রান্নাঘরের স্ল্যাবের নিচে পেঁয়াজ আর রসুন”।

ল্যাঙ্গার বলেন, “পরিবারের ৬ সদস্যের পোশাকের জন্য আলাদা আলাদা আলমারি। রাজেশের বাড়ি দেখে আমি চমকে উঠেছিলাম। ওঁদের প্রয়োজনের কিছুই ছিল না বলেই আমার মনে হয়েছিল। কিন্তু সুখী হওয়ার জন্য যা যা দরকার, তার সব কিছু ওঁদের ছিল”।