এরকমই অবস্থা হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের৷

Kavach: ঢাক পেটানোই সার, কোথায় গেল কবচ? কাঞ্চনজঙ্ঘা দুর্ঘটনায় সামনে আনল ভয়ঙ্কর তথ্য

নয়াদিল্লি: অনেক ঢাক পিটিয়ে ভারতীয় রেলের কবচ প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে প্রচার করেছিল রেল৷ সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার উদ্দেশ্যেই হল কোনও কারণে একই লাইনে চলে আসা দুটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ আটকানো৷ অর্থাৎ মানুষ অথবা যন্ত্রের কোনও ভুলে দুটি ট্রেন কাছাকাছি চলে এলে কবচ ট্রেন থামিয়ে দুর্ঘটনা আটকাবে৷

সোমবার এনজেপি-র কাছে রাঙাপানিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে মালগাড়ির ধাক্কার পর প্রশ্ন উঠছে, কোথায় গেল কবচ? দুর্ঘটনার পর রেল বোর্ডের প্রধান জয়া ভার্মা সিনহা স্বীকার করে নিয়েছেন, গুয়াহাটি- দিল্লি লাইনে কবচ প্রযুক্তির ব্যবহার এখনও শুরুই হয়নি৷ ওই রেল পথ ধরেই সোমবার সকালে এনজেপি হয়ে শিয়ালদহের দিকে আসছিল আগরতলা থেকে রওনা দেওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস৷

রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বরং যা তথ্য দিয়েছেন, তাতে পরিষ্কার, দেশের যেটুকু অংশে কবচ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে, তার কয়েকগুন রেলপথে এখনও কবচ প্রযুক্তি চালু করা বাকি৷ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পর রেল বোর্ডের প্রধান জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত দেশের মোট ১৫০০ কিলোমিটার রেল পথে কবচ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে৷ আগামী বছরের মধ্যে আরও ৬ হাজার কিলোমিটার রেল পথে কবচ প্রযুক্তি চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রেল৷ এর মধ্যে এ বছরই যে ৩০০০ কিলোমিটার রেল পথে কবচ বসানোর কথা, তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া-দিল্লি রুট৷

আরও পড়ুন: সেই জুন, করমণ্ডলের মতোই দুর্ঘটনায় কাঞ্চনজঙ্ঘা! দুই বিপর্যয়ে অবাক করা মিল

২০২২-২৩ সালে প্রথম ২০০০ কিলোমিটার রেল পথে কবচের ব্যবহার শুরুর লক্ষ্যমাত্রা নেয় ভারতীয় রেল৷ ভারতীয় রেলের লক্ষ্য, দেশের ৩৪ হাজার কিলোমিটার রেলপথে এই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করা৷ ভারতীয় রেলে মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ১ লক্ষ কিলোমিটার৷

ভারতীয় রেলের প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর প্রেমপাল সিং এনডিটিভি-কে বলে্ন, কবচ প্রযুক্তি থাকলে হয়তো এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত৷ যদিও এই ব্যবস্থা খুবই খরচ স্বাপেক্ষ৷

কবচ কী?

কবচ একটি অটোমেটিক ট্রেন প্রোটেকশন সিস্টেম যা তিনটি ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে মিলে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে রিসার্চ ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অরগানাইজেশন বা আরডিএসও তৈরি করেছে৷ এই ব্যবস্থা ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি সম্ভাব্য কোনও বিপদ সম্পর্কে চালককে সতর্ক করে দেয়৷ বিশেষত, দৃশ্যমানতা কম থাকাকালীন এই প্রযুক্তি খুবই কার্যকরী হয়৷

কবচ কীভাবে কাজ করে?

ট্রেনের চালক যদি সময় মতো ব্রেক না কষেন, তাহলে বিপদ বুঝে কবচই ব্রেক কষে ট্রেন থামিয়ে দেবে৷ এই প্রযুক্তিতে রেল ট্র্যাক, তার সঙ্গে যুক্ত সিগন্যাল এবং স্টেশনের ইয়ার্ডে বিশেষ ধরনের আরএফআইডি চিপ লাগানো থাকে৷ এর ফলে কোনও ভাবে দুটি ট্রেন একই লাইনে কাছাকাছি চলে এলে ৫ কিলোমিটার দূরত্বেই কবচ তাদের থামিয়ে দেবে৷

পাশাপাশি কবচ প্রযুক্তির সাহায্যে বিশেষ একটি ব্যবস্থায় ইঞ্জিনের ভিতরে বসেই সামনের সিগন্যাল সহজে দেখতে পাবেন চালক৷ বিশেষত খারাপ আবহাওয়ার কারণে অথবা অন্য কারণে দৃশ্যমানতা কম থাকলেও কবচ প্রযুক্তির সাহায্যে সিগন্যাল দেখতে অসুবিধা হয় না চালকের৷ সামনের সিগন্যাল লাল থাকলে কবচ প্রযুক্তিই ট্রেন চালককে সতর্ক করে দেয় কবচ৷ তার পরেও চালক ট্রেন না থামালে প্রয়োজনে ব্রেক কষেও ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেবে এই প্রযুক্তি৷ ২০২২ সালে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব নিজে ট্রেনে উঠে কবচ প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক ব্যবহার দেখে প্রশংসা করেছিলেন৷ তার পরের দু বছরে করমণ্ডল, কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো একাধিক ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল ভারতীয় রেল৷