অনন্য এক আসর

ওদের দৃষ্টি নেই, কিন্তু সৃষ্টির মায়াজাল আছে! কলকাতার বুকে এক অনন্য ‘প্রতিযোগিতা’

কলকাতা: ‘হাসির মধ্যে লুকিয়ে ক্ষত, তবুও বাঁচি ইচ্ছে মতো/ যন্ত্রণাটা ভীষণ গোপন, মনের ঘরে খুবই আপন..’–হ্যাঁ, ওদের হাসির মধ্যেও লুকিয়ে থাকে যন্ত্রণার ক্ষত, ওরা গোপন করে রাখে, কিন্তু ইচ্ছেকে কি গোপন করা যায়? তাই তো ওদের জন্যই এত আয়োজন! বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন দৃষ্টিহীন মানুষদের প্রতিভার খোঁজে সারা বাংলা সঙ্গীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় তাই প্রতিযোগিতা কম, বরং জীবনের জয়গান হল বেশি করে, অন্ধকারে আলোর খোঁজ পেল ওরা কতজন…

উত্তর কলকাতার দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী সংগঠন ‘শ্যামপুকুর আস্থা ও নতুন স্বপ্ন’ গত ৩০ জুন শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে আয়োজন করেছিল এমনই এক প্রতিযোগিতার, যেখানে প্রতিযোগীদের চোখের দৃষ্টি অবরুদ্ধ হলেও মনের সৃষ্টি বাঁধনছাড়া। ৩০ জুন, দিনভর ওরা গাইল, কবিতা পাঠ করল, সুরের মায়াজালে জড়িয়ে রাখল উপস্থিত সকলকে। অনুষ্ঠানে সভাপতির আসনে ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের শেরিফ (২০১৩) স্বপন কুমার ঘোষ, আর ছিলেন অসংখ্য মুগ্ধ শ্রোতারা।

পুরস্কারের পালা...
পুরস্কারের পালা…

ওই অনুষ্ঠানে পুরুষ প্রতিযোগী ছিলেন ৬০ জন, মহিলা প্রতিযোগী ৪০ জন। হয়ত আক্ষরিক অর্থে তাঁরা প্রতিযোগী, কিন্তু প্রত্যেকেই যে একেকজন যোদ্ধা। জীবনের কঠিন পথে হাঁটতে গিয়ে তাঁদের হয়ত হোঁচট লাগে বেশি, কিন্তু ইচ্ছের মায়াজাল তাঁরা বুনে দিতে পারেন আমাদের মতো করেই। হয়ত বা আমরা যে সীমানার পর আর দেখে উঠতে পারি না, তাঁদের দৃষ্টি, সৃষ্টি ছাড়িয়ে যায় সেই সীমাবদ্ধতাকেও। তাই এ প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার কোনও নিছক একজন বা দু’জন নন, বরং প্রত্যেক প্রতিযোগীই বুঝিয়ে গেলেন, ‘আমরা সবাই রাজা…’