Kunal Ghosh: ‘আমাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে?’, তৃণমূলে থাকার চেষ্টা করবেন, ক্ষোভ উগরে দিলেন অভিমানী কুণাল

কলকাতা: দল তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করার পর মুখ খুললেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ৷ দাবি করলেন, দল বিরোধী কোনও কাজ তিনি করেননি৷ তবে কুণালের দাবি, এই দুই পদই তিনি নিজে থেকে ছাড়তে চেয়েছিলেন৷ একই সঙ্গে দলের বিরুদ্ধে জমানো ক্ষোভও উগরে দিয়ে কুণালের প্রশ্ন, ‘তৃণমূলের যাঁরা লড়াকু কর্মী, তাঁদের রোজ অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে?’ দলের প্রতি তাঁর কী অবদান, সেকথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন কুণাল৷ পাশাপাশি, যে ডেরেক ও ব্রায়েনের সই করা বিবৃতি দিয়ে এ দিন কুণালের শাস্তি ঘোষণা করেছে তৃণমূল, রাজ্যসভার সেই সাংসদকে ক্যুইজ মাস্টার বলেও কটাক্ষ করেছেন কুণাল৷

এ দিন সকালে শ্যামবাজার এলাকায় একটি ক্লাবের রক্তদান শিবিরে একই মঞ্চে হাজির হয়ে কলকাতা উত্তরের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের প্রশংসা করেছিলেন কুণাল৷ দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দলের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষও করেছিলেন কুণাল ঘোষ৷ এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কুণালের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করে তৃণমূল কংগ্রেস৷ দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় কুণাল ঘোষকে৷ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন বিবৃতি দিয়ে কুণালের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপের কথা জানান৷

আরও পড়ুন: কুণালকে পদ থেকে সরাল তৃণমূল, তাপস রায়ের প্রশংসা করেই পড়লেন দলের রোষে?

তৃণমূলের এই পদক্ষেপের পর জবাব দিতে গিয়ে কুণাল প্রথমে হালকা মেজাজে বলেন, ‘চিঠি টাইপ হচ্ছে খবর পেয়ে ফোন বন্ধ করে ঘুমোতে চলে গিয়েছিলাম৷ এখন ময়দানে হাওয়া খেতে যাবো৷’

পরে অবশ্য সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন কুণাল৷ ডেরেক ও ব্রায়েনের নাম না করে তাঁর কটাক্ষ, ‘ক্যুইজ মাস্টারকে ডেকে জিজ্ঞেস করব, আপনি কি জানেন কবে আমি এই দুটো পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছি? আমি এই দুটো পদ নিজের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মুছেও দিয়েছিলাম৷ এখনও হোয়াটসঅ্যাপ, ই মেল মারফত আমাকে কিছু জানানো হয়নি৷ আমার জানারও ইচ্ছে নেই৷ যাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা মহানুভব, মহান ব্যক্তি, ঈশ্বর তাঁদের মঙ্গল করুন৷ তৃণমূলের সাধারণ কর্মী হিসেবে ছিলাম, তাই থেকে যাওয়ার চেষ্টা করব৷’

আত্মপক্ষ সমর্থন করে কুণাল আরও বলেন, ‘আজকে আমি কারও সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করিনি৷ অরাজনৈতিক মঞ্চ ছিল৷ আমি শুধু বলেছি, তাপস রায় দক্ষ নেতা, ভাল জনপ্রতিনিধি৷ বক্তব্যে তো বলেছি আমার দলের প্রার্থীর নাম সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর হয়েই প্রচার করব৷ ভুলটা কোথায় বললাম? তাপস রায় দীর্ঘদিনের সহকর্মী ছিলেন, তার আগে থেকে আমাদের পরিচয়৷ সেখানে গিয়ে কি আমি তাপস রায়ের সঙ্গে মারামারি করব? আমি কী দোষ করেছি, সেটাই তো বুঝতে পারলাম৷ যে মিঠুন চক্রবর্তী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন, আর দেব তাঁকে বাবার মতো বলেন, তখন ক্যুইজ মাস্টার আর তাঁর পিছনের পরিচালকরা জেগে ওঠেন না?’

তিনি তৃণমূলেই থাকার চেষ্টা করবেন বলে দাবি করেও নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কুণাল৷ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘আমাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে? তৃণমূলের যাঁরা লড়াকু কর্মী, তাঁদের রোজ অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে? অরাজনৈতিক মঞ্চে গিয়ে কারও সঙ্গে সৌজন্য দেখালেও আমার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠবে? আজ বিকেল থেকে জেলা থেকে পরের পর মেসেজ এসে আমার হোয়াটসঅ্যাপ উপচে গিয়েছে৷ ব্রাত্য বসু সাক্ষী, তাপস রায়ের কাছে ছুটে গিয়ে বোঝাতে গিয়েছিলাম দল ছেড়ো না৷ সেটা একদিন একটা রক্তদান শিবিরে যাওয়ায় মিথ্যে হয়ে যাবে?’

কারা তাঁর বিরুদ্ধে এই শাস্তির সিদ্ধান্ত নিল, সেই প্রশ্নের জবাবে কুণাল বলেন, ‘দলের শীর্ষ নেতৃত্ব হবেন, ঈশ্বর তাঁদের মঙ্গল করুন৷ আমি তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলাম, আছি এবং তৃণমূল কংগ্রেসেই থাকার চেষ্টা করব৷ ২০১৩ সালেও শুনেছিলাম আমাকে কে কী চিঠি পাঠিয়েছে সেই চিঠি আজও এল না৷ ফোন করে তো বলতে পারত যে আমি যে পদগুলি ছাড়তে চেয়েছিলাম তা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল৷ আমি তো দল বিরোধী কোনও কাজ করিনি৷ দল যখন শো কজ করেছিল, তার উত্তর দিয়েছি৷’

অভিমানের সঙ্গে কুণাল বলেন, ‘১৯৯৩ সালে  মেয়ো রোডে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আহত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গিয়েছিলাম৷ এর পর জীবনে আমার অনেক উত্থান পতন হয়েছে৷ ২০২১ সালে যখন অনেক নেতা দল ছাড়ছেন, তখনও দলের সঙ্গে থেকেছি৷ এর পর এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি আমার যদি প্রাপ্য হয়, তাহলে তাই৷’