পাঁচমিশালি, লাইফস্টাইল Light: বলুন তো লাল, হলুদ আর সবুজ ‘আলো’ কেন শুধু থাকে ট্রাফিক লাইটে? চমকে যাবেন জানলে! Gallery May 28, 2024 Bangla Digital Desk সাধারণ জ্ঞান এমন এক বিষয় যার পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে আশ্চর্য সব তথ্য। কখনও তা যেমন চোখ খুলে দেয় দৈনন্দিন নানা বিষয়ে, তেমন আবার এই সাধারণ জ্ঞানই বলে দেয় কত জানা অজানা মজাদার সব খবর যা জানা জরুরি। বর্তমানে বই পড়ার পাশাপাশি টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমেও জানা যায় এমন সব আশ্চর্য জ্ঞান যা বার বার অবাক করে। আজ এই প্রতিবেদনে এমনই একটি মজাদার তথ্য শেয়ার করা যাক যা আমরা প্রতিদিনই প্রায় দেখি কিন্তু উত্তর বোধহয় কেউই জানি না। রাস্তায় আসা-যাওয়ার সময় প্রতিদিনই নিশ্চয়ই ট্রাফিক সিগন্যাল চোখে পরে। আপনি কখনও তাকালে সেখানে লাল, সবুজ আবার কখনও বা হলুদ আলো দেখতে পাবেন। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন ট্রাফিক সিগন্যালের ধারণা আসলে কার? এটি কোথা থেকে এসেছে এবং কেন শুধুমাত্র লাল, হলুদ এবং সবুজ বাতিই জ্বলে এই সিগন্যালে? অন্য কোনও রঙ কেন থাকে না? ট্রাফিক সিগন্যালের ধারণা কোথা থেকে এল?সে প্রায় ১৮৬৮ সালের কথা। তখনকার দিনে লন্ডনে ঘোড়া, টেক্কাগাড়ি ও গাড়ি চলত। এই রাইডারে রাস্তা ভরে যেত। যার ফলে পথচারীরা তাঁদের পথ খুঁজে পেতেন না। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল জনাকীর্ণ সংসদ চত্বরে। সেখানে প্রায়ই কেউ ঘোড়ার ধাক্কায় আহত হতেন। যানজট নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকত না। এই সমস্যা মোকাবেলায় ট্রাফিক সিগন্যাল বসানোর চিন্তা আসে। ১৮৬৮ সালের ১০ ডিসেম্বর লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ারে বিশ্বের প্রথম ট্রাফিক সিগন্যালপ্রথমবারের মতো ইনস্টল করা হয়েছিল। কিন্তু এটি আজকের সংকেত থেকে খুবই আলাদা ছিল। তখনকার ট্রাফিক সিগন্যালগুলিকে ম্যানুয়ালি চালাতে হতো রেলওয়ে সিগন্যাল সিস্টেমের মাধ্যমে। একটি স্তম্ভের মতো পাইপে বসানো থাকত লাল ও সবুজ দুই ধরনের আলো। এটি গ্যাসে চলত। একজন পুলিশ সদস্য পাইপের মাধ্যমে এতে গ্যাস ভরতেন এবং তারপর এটি পরিচালনা করতেন। গ্যাস- চালিত এই ট্রাফিক লাইটগুলিও খুব বিপজ্জনক ছিল। একবার পাইপ দিয়ে গ্যাস ভর্তি করার সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় এবং অপারেটর গুরুতর আহত হন। এর পরে, পরবর্তী ৫০ বছরের জন্য ট্র্যাফিক লাইট কার্যত নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। লন্ডন এবং আমেরিকার মধ্যে সংযোগ:১৯২৯ সালে ব্রিটেনে আবার ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করা হয়। কিন্তু এর আগে ১৯২১ সালে আমেরিকার ডেট্রয়েটের একজন পুলিশ অফিসার উইলিয়াম পট তিন সেকশনের ট্রাফিক সিগন্যাল আবিষ্কার করেছিলেন। বৈদ্যুতিক ট্রাফিক সংকেত:১৯২৩ সালে, আফ্রিকান-আমেরিকান বিজ্ঞানী গ্যারেট মরগান বৈদ্যুতিক ট্রাফিক সংকেত আবিষ্কার করেন। তিনি তাঁর আবিষ্কারটি জেনারেল ইলেকট্রিকের কাছে ৪০,০০০ ডলারে বিক্রি করেন। এরপর ধীরে ধীরে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ট্রাফিক সিগন্যাল বসানোর কাজ শুরু হয়। লাল, হলুদ ও সবুজ আলো কেন?ট্রাফিক সিগন্যালে শুধু লাল, হলুদ ও সবুজ বাতিই কেন? লাইফসায়েন্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্র্যাফিক সিগন্যালে যে রঙটি প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল তা জাহাজের নেভিগেশন সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। সামুদ্রিক জাহাজে লাল ও সবুজ সংকেত বসানো হয়। এটি দেখে জাহাজের ক্রুরা সহজেই বলতে পারতেন জাহাজটি কোন দিকে যাচ্ছে। এই লাইটগুলি জাহাজের সংঘর্ষ রোধে দারুণ সহায়ক ছিল। বিশেষ করে রাতে খুব সহায়ক প্রমাণিত হত। লাল এবং সবুজ রং ব্যবহার করার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অন্যান্য রঙের তুলনায় অনেক বেশি। এই দুটি রঙই দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়। এ কারণে জাহাজগুলি নৌচলাচলের জন্য ব্যবহার করা হত। পুরনো লাইট হাউসেও একই রং ব্যবহার করা হত। পরে সেগুলিও ট্রাফিক সিগন্যালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হলুদ আলো পরে এসেছে:মজার ব্যাপার হল, শুরুতে ট্রাফিক সিগন্যালে হলুদ বাতি ছিল না। শুধু লাল আর সবুজ বাতিই ছিল। ১৯২১ সালে উইলিয়াম পট যখন তিন রঙের সংকেত নিয়ে আসেন, তখন তিনি এতে হলুদ রঙ যোগ করেন। এখন ট্রাফিক সিগন্যাল কেমন?১০০ বছরে ট্রাফিক সিগন্যালের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন সারা বিশ্বে প্রধানত দুই ধরনের সংকেত রয়েছে। প্রথম – যা নিয়মিত পরিবর্তিত হয়। লাইক- ৩০ সেকেন্ড, ৬০ সেকেন্ড বা তার বেশি বা কম সময়ে পরিবর্তন হয়। দ্বিতীয়ত, অন্য ট্রাফিক সিগন্যাল যা ট্রাফিকের ভলিউম অনুযায়ী সামঞ্জস্য রেখে বদলে যায়। সংকেত পরিবর্তনের দাবি কেন?সাম্প্রতিক সময়ে, ট্রাফিক সংকেত পরিবর্তনের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে অনেক অটোমোবাইল কোম্পানি স্বয়ংক্রিয় যান (চালক ছাড়া গাড়ি) তৈরি করা শুরু করেছে। মানব মস্তিষ্ক সহজেই বিভিন্ন রঙের কোড চিনতে পারে কিন্তু স্ব-চালিত যানবাহনের তা ভুল হতে পারে। তাই একটি আলো বিশিষ্ট একটি ট্রাফিক সিগন্যাল স্ব-চালিত যানবাহনের জন্য বেশি ভাল।