কলকাতা: অনশন তুলে নেওয়া জন্য আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বার বার অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এ দিন ধর্মতলায় চিকিৎসকদের অনশন মঞ্চে যান রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিব৷ স্বরাষ্ট্রসচিবের ফোনের মাধ্যমেই ধৈর্য ধরে জুনিয়র চিকিৎসকদের সব দাবি একে একে শোনেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তবে চিকিৎসকদের অনশন তোলার আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নরমে গরমে বুঝিয়ে দিয়েছেন, জুনিয়র চিকিৎসকদের সব দাবি রাজ্য সরকারের পক্ষে অবিলম্বে মানা সম্ভব নয়৷
এ দিন ফোনে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বার বারই মুখ্যমন্ত্রী অনশনকারীদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে দেখার জন্য আন্দোলনকারীদের অনুরোধ করেন৷ শুধু তাই নয়, চিকিৎসকদের বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তোমাদের কথা দিচ্ছি, আমি যা যা বললাম, বিকেলের মধ্যে সব লিখিত আকারে তোমাদের কাছে পৌঁছে যাবে৷’ মুখ্যমন্ত্রীকে এমনও বলতে শোনা যায়, ‘আমি তোমাদের দিদি হয়ে বলছি, দয়া করে অনশনটা তুলে নেও৷’
আরও পড়ুন: রাজ্য সরকারকে ৭২ ঘণ্টা সময়, দাবি পূরণ না হলে মঙ্গলবার ধর্মঘটে চিকিৎসকরা!
জুনিয়র চিকিৎসকরা বার বারই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরও একবার মুখোমুখি আলোচনার দাবি জানান৷ মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল পাঁচটায় নবান্নে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন৷ তবে এবার সর্বাধিক দশ জন প্রতিনিধি নিয়ে নবান্নে যাওয়ার জন্য চিকিৎসকদের জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী কিছুটা কড়া সুরেই জানিয়ে দেন, এবার যেন চিকিৎসকরা তাঁকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে না রাখেন৷
শুধু তাই নয়, জুনিয়র চিকিৎসকরা দাবি তুললেও এ দিনও স্বাস্থ্য সচিবকে অপসারণের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে তা তদন্ত করে দেখা হবে৷ এই প্রসঙ্গেই কঠোর মনোভাব দেখিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে নিশ্চয়ই তদন্ত করা হবে, কিন্তু এভাবে বললে সরকারের পক্ষে কি সেই দাবি মানা সম্ভব? একটা পরিবার থেকে সবাইকে তুমি তাড়িয়ে দেবে? তুমি ঠিক করবে সরকার কোন অফিসারকে রাখবে কাকে তাড়াবে?’
তবে স্বাস্থ্যসচিবকে অপসারণের দাবি খারিজ করলেও মেডিক্যাল পরীক্ষায় বেনিয়াম বন্ধে কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনও চার মাসের মধ্যে করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি৷ আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অধিকাংশ দাবির সঙ্গেই সহমত পোষণ করে রোগীদের কথা ভেবে আন্দোলন প্রত্যাহারে আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী৷
এ দিন একে একে চিকিৎসকদের দশ দফা দাবিই শোনেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অধিকাংশ দাবির সঙ্গেই সহমত পোষণ করে ন্যায়সঙ্গত বলেও জানান মমতা৷ এমন কি দশ দফা দাবির পরেও আরও দুই দফা দাবি আছে বলে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়৷ তবে সেই দাবিগুলি মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হয়ে জানানোর কথা বলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা৷ মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য তাতেও ধৈর্য় না হারিয়ে বলেন, ‘তোমরা বিষয়টা ঝুলিয়ে রেখো না৷ আরও কী দাবি আছে আমাকে বলো, আমি শুনছি৷’
হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য সিভিক ভলেন্টিয়ার অথবা বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগে আপত্তি জানান জুনিয়র চিকিৎসকরা৷ মুখ্যমন্ত্রী তখন জানান, রাজ্য সরকার ৬ হাজার পুলিশকর্মী নিয়োগ করতে তৈরি৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে ওবিসি মামলা চলায় সেই নিয়োগ আটকে রয়েছে৷ ফলে চাইলেও রাজ্য সর্বত্র পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী নিয়োগ করতে পারছে না৷