রাত জাগা কর্মসূচির ডাক এবার রাজ্যের মন্ত্রীর

Manas Bhunia: জল বাড়ছে, ডিভিসিকেই দুষলেন সেচমন্ত্রী, ‘রাত জাগা কর্মসূচি’-র ডাক মানস ভুঁইয়ার

আবীর ঘোষাল, কলকাতা: এবার রাত জাগা কর্মসূচির ডাক দিলেন রাজ্যের সেচ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তবে একেবারেই অন্য প্রেক্ষাপটে তাঁর এই কর্মসূচির ডাক। মঙ্গলবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি রাত জাগা কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘আজ রাত থেকে চলুন আমরা সবাই রাত জাগি,সজাগ থাকি। ঘাটাল মহকুমা এবং আরামবাগ মহাকুমার সবাইকে রক্ষা করি। ডিভিসি ২ লাখ ৫০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। আমাদের মানবদরদী মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিদ্রাহীন, ক্লান্তিহীন সময় কাটিয়ে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে আমাদের রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। আজ রাত, কাল রাতদিন আর পরশু মানুষকে বাঁচানোর লড়াইটা করি। আমরা অনেক বিশ্রাম নিয়েছি। আসুন এবার মানুষের জন্য রাত জাগি।’’

আরও পড়ুন– বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হতে পারে কয়েক জেলায়, আপাতত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই রাজ্যে

প্রতি বছরের মতো চলতি বছরেও ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয় রাজ্যের একাধিক জেলা। এদিকে এহেন পরিস্থিতির মাঝেই জল ছাড়ে ডিভিসি। এরপরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘ম্যান মেড’ বন্যার অভিযোগ এনেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে গত কয়েক দিন ধরে নিম্নচাপ ও মৌসুমী অক্ষরেখার জোড়া ফলার জেরে বিপর্যস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা। প্রভাব পড়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমানেও। জমা জলের চাপও বেড়েছে। আর এরই মাঝে ফের ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া হয়েছে । রাজ্য জুড়ে বন্যা-পরিস্থিতি। দক্ষিণবঙ্গের নানা দিকে প্রবল বর্ষণ ও প্লাবনে বিপর্যস্ত বাংলা। বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা– সর্বত্র জল আর জল। এক টানা বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে গোঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা। বৃষ্টির জেরে ও বাঁকুড়ার দিক থেকে গড়িয়ে আসা জলে আবারও বিপত্তি এলাকায়। কামারপুকুর-গড়বেতা ও কামারপুকুর-জয়রামবাটি রাস্তার উপর দিয়ে জলের স্রোত বইছে।

রাত জাগা কর্মসূচির ডাক এবার রাজ্যের মন্ত্রীর
রাত জাগা কর্মসূচির ডাক এবার রাজ্যের মন্ত্রীর

আরও পড়ুন– প্রাইজ পোস্টিং! বিনীত গোয়েলের বিরুদ্ধে আন্দোলন নিয়ে বড় হুঁশিয়ারি শমীকের

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কামারপুকুর ও জয়রামবাটী। ওদিকে টানা বৃষ্টির জেরে জল বেড়েছে বীরভূমের প্রায় সব ক’টি নদীতে। ময়ূরাক্ষী নদীর তিলপাড়া ব্যারেজ থেকে ছাড়া হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কিউসেক জল। পাশাপাশি, ময়ূরাক্ষী নদীর জল বাড়ায় সাঁইথিয়ার অস্থায়ী ফেরিঘাটটি ভেঙে পড়েছে। এর ফলে যাতায়াতে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। সরকার দুর্গতদের পাশে রয়েছে। জেলা প্রশাসনগুলিকে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া ও হুগলি জেলার বন্যা পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। শনিবার থেকে এই জেলাগুলিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়।

সোমবার সন্ধ্যার পর নিম্নচাপটি ঝাড়খণ্ডের উপর সরে গেলেও এ রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে দিনভর প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। অজয়, দামোদর,  কংসাবতী, কেলেঘাই, দ্বারকেশ্বরী, গন্ধেশ্বরী, দ্বারকা, কুয়ো নদী ফুঁসছে। এর মধ্যেই আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের দামোদর অববাহিকা ও সংলগ্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত চলবে আরও কিছু সময়। এই পূর্বাভাসও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের। ঝাড়খণ্ডে দামোদর অববাহিকায় আরও বেশি বৃষ্টি হলে ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়াতে বাধ্য হবে। সেক্ষেত্রে বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি ও হাওড়া জেলার নিম্ন দামোদর অববাহিকা এলাকা প্লাবিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা। এছাড়া, কংসাবতী নদীর উপর মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে ৩০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। সেচদফতর সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, সোমবারই মাইথন, পাঞ্চেত, মুকুটমণিপুর, ম্যাসাঞ্জোর, তেনুঘাট, চান্ডিল বাঁধের জলস্তর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতার কাছাকাছি চলে আসে।