বড়মার ভোগ 

এলাহি ভোগ নিবেদনে পুজো হয় নৈহাটির বড়মার, জানেন কী থাকে মেনু-তে!

উত্তর ২৪ পরগনা: নৈহাটির অরবিন্দ রোডে চলছে বড়মার সুবিশাল মূর্তি তৈরীর কাজ, নবনির্মিত মন্দিরেও অগণিত ভক্তরা লাইন দিয়ে দিচ্ছেন পুজো।

বড় মা কালীর পুজো ঘিরে তাই এখন রীতিমতো উৎসবের চেহারা নিয়েছে গোটা এলাকা। ইতিমধ্যেই মন্দিরে পৌঁছে গিয়েছে কয়েকশো বস্তা চাল, ডাল, তরি-তরকারি সহ ভোগ রান্নার সামগ্রী।

শুরু হয়েছে মিষ্টি তৈরির কাজও। এবছর প্রায় ৫ হাজার কেজি ভোগ রান্না হবে বড়মাকে নিবেদনের জন্য। কিন্তু জানেন কি, ৩১ বছর ধরে বড়মার জন্যই ভোগ রান্না করে আসছেন এক বছর ৭২ এর ব্যক্তি!

আরও পড়ুন- ১ টাকা দেবেন,পাবেন ৫০০!কোন কোন দেশে ভারতের টাকার দাম এত্ত বেশি?শুনলে যেতে চাইবেন

বড়মার ভোগের জন্যই পরিবারকে ছেড়ে থাকেন নৈহাটিতে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কে এই বড়মার রান্নার ঠাকুর। অতীতে মাত্র পাঁচ কেজি চাল ডাল দিয়ে প্রথম শুরু হয় রান্নার ঠাকুর চন্দ্রকান্ত মিশ্রর ভোগ রান্নার কাজ।

বর্তমানে সেই ভোগ রান্নার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ কুইন্টালে। যা প্রায় চার হাজার কেজি। বড়মার ভোগ রান্নার জন্য রয়েছে বিরাটাকার আলাদা আলাদা পিতলের বাসন, কড়াই, ডেচকি, গামলা, হাতা, খুন্তি।

বড়মার রান্নার ঠাকুর চন্দ্রকান্ত বাবু জানালেন, বিশেষ পদ্ধতি মেনেই উপোস থেকে করা হয় বড়মার ভোগ রান্না। এবছরও ১০০ বস্তা চাল অর্থাৎ ২৫ কুইন্টাল চাল ও ১০ কুইন্টাল ডাল ইতিমধ্যেই বড়মার ভোগের জন্য চলে এসেছে মন্দিরে।

ভোগে দেওয়া হয় সাদা অন্ন, পোলাও, খিচুড়ি, সঙ্গে থাকে এঁচোড়ের তরকারি, ছানার তরকারি, পনিরের তরকারি, অরর ডাল, পাঁচ রকম ভাজা সহ চাটনি, পায়েস, সুজি ও লুচি।

আরও পড়ুন- ‘গরিবের ড্রাই ফ্রুট’, বছরে ৩ মাস মেলে, শুকোনোর পর দাম বেড়ে যায় ১০ গুণ !

কালীপুজোর আগের দিন থেকেই শুরু হয়ে যাবে তরকারি কাটার কাজ। তিন চারটি উনুন জ্বালিয়ে রাত থেকেই শুরু হয় মসলা তৈরি থেকে ভোগ রান্নার কাজও।

৩৫-৪০ ডেচকি করে নামতে থাকে পোলাও, খিচুড়ি সহ ভোগের নানা আইটেম। পুজোর ক’দিন এই রান্নার কাজের জন্য তার সঙ্গে সহযোগিতায় থাকেন আরও প্রায় ৪০ জন।

মায়ের মাহাত্ম্যেই আজ ৭২ বছর বয়স হলেও, এখনও নিজে হাতে তিন চার হাজার কেজি ভোগ রান্না করেও কোনরকম ক্লান্তি অনুভব করেন না নৈহাটির বড়মার বিশেষ রান্নার ঠাকুর চন্দ্রকান্ত মিশ্র। তাঁর নিজের আদি বাড়ি ওড়িশাতেয তবে বড়মার টানেই ভোগ রান্নার জন্য একলা থেকে গিয়েছেন নৈহাটিতে।

যদিও পরিবারের নানা সদস্যই থাকেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে কলকাতার নানা প্রান্তে। তাই বড়মার ভোজনের দায়িত্ব সামলানো চন্দ্রকান্তকে নিয়ম মেনে করতে হয় ভোগ তৈরির সমস্ত কাজ।

বিসর্জনের দিনও এক কুইন্টাল বেসন দিয়ে তৈরি হবে বিশেষ রসালো মিষ্টি বোঁদে, যা রীতি অনুযায়ী বড়মার বিসর্জনের পর বিতরণ করা হয়। ইতিমধ্যেই বড়মার মন্দিরে শুরু হয়ে গিয়েছে মিষ্টি তৈরীর কাজ।

তৈরি হচ্ছে দরবেশ, ৭৫ কেজি ছানা দিয়ে হচ্ছে পান্তুয়া সঙ্গে হচ্ছে রসগোল্লাও। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্বে নানা জায়গায় কাজ করার সুবাদে নৈহাটি এলাকাতেও রান্নার কাজ করতেন, এরপরই প্রাক্তন বড়মার মন্দিরের পুরোহিতের সঙ্গে যোগাযোগ হয় এই রান্না ঠাকুরের।

চন্দ্রকান্ত কে নিযুক্ত করা হয় ভোগ রান্নার জন্য। সেই থেকেই ভোগের ঘর সামলাচ্ছেন বছর ৭২ এর চন্দ্রকান্ত মিশ্র। আজ নৈহাটির সকলেই তাঁকে এক নামে চেনেন বড়মার রান্নার ঠাকুর বলে। এখন তাই নাওয়া খাওয়া ভুলে দিন-রাত এক করে চলছে কালীপুজোর আগে ভোগ রান্নার চূড়ান্ত প্রস্তুতি।

Rudra Narayan Roy