এটা ইস্তেহার নয়, ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। কর্নাটকে ওদের সরকার রাতারাতি সেখানকার সমস্ত মুসলমানদের ব্যাকওয়ার্ড করে দিয়েছে। আর তার সমীক্ষাও হয়নি, এমনকী কোনও কমিশনও গঠন করা হয়নি, বললেন শাহ

Amit Shah Interview: অমিত শাহ এক্সক্লুসিভ: কীভাবে ৩৭০ পার করবে বিজেপি? কোথায় কতগুলি আসন মিলবে? হিসাব দিলেন অমিত শাহ

নির্বাচন নিয়ে তরজা এখন তুঙ্গে। ক্রমাগত ভেসে আসছে বিরোধীদের আক্রমণের তীর। সবরমতীর তীরে এসে সেই সব প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর সঙ্গে কথা বললেন নেটওয়ার্ক 18 গ্রুপের প্রধান সম্পাদক রাহুল জোশী।

রাহুল জোশী: অমিতজি, নিউজ 18 নেটওয়ার্ককে এই এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমরা আপনার শহরে রয়েছি। আপনার নির্বাচনী এলাকা হল গান্ধিনগর। আমরা সবরমতী রিভারফ্রন্টে রয়েছি। আপনি বলছিলেন যে, আপনি এর ক্রুজও উদ্বোধন করেছেন। তো চলুন শুরু করা যাক… আপনি যদি প্রথম দুই পর্যায় দেখেন, তাহলে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা কম হয়েছে। কিছু কিছু রাজ্যে ভোটারদের উপস্থিতি ৫-৬ শতাংশ কমেছে। তাহলে আপনাদের তো ৪০০ পারের স্লোগান রয়েছে, ৩৭০ ভারতীয় জনতা পার্টি… তাহলে কি গাড়ি লাইনে আছে?

অমিত শাহ: একেবারে ট্র্যাকেই রয়েছে। ফলাফলের দিন দেখবেন, সাড়ে বারোটা বেজে যাওয়ার আগেই এনডিএ ৪০০ ছাড়িয়ে যাবে। মোদিজি আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। কম ভোটার হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। প্রায় ১২ বছর পর ভোটার তালিকার পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হল, সামনে থেকে কোনও লড়াই-ই নেই। যার কারণে ভোটদানে এক ধরনের প্রভাব পড়ছে। কিন্তু আমাদের দলীয় টিম এবং আমি নিজে খুব বিশদে বিশ্লেষণ করেছি। আমরা দুই ধাপে ১০০ অতিক্রম করে এবং ১০০টিরও বেশি আসনে জয়লাভ করে এগিয়ে যাচ্ছি। তাই ৪০০ অতিক্রম করার লক্ষ্যে তো আমি কোনও সমস্যা দেখছি না।

রাহুল জোশী: অমিতজি প্রথমে বিষয়গুলো দিয়ে শুরু করা যাক… এমন কোন বিষয় রয়েছে, যা নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি আজ তৃতীয় বারের জন্য জনগণের মধ্যে যাচ্ছে? সংক্ষেপেই বলুন, কোন কোন বিষয়ের কথা আপনারা জনগণের মাঝে তুলে ধরছেন?

অমিত শাহ: দেখুন, প্রথমত, এই দেশে সন্ত্রাসবাদ এবং নকশালবাদ ছিল। আর এই দুটি এমন সমস্যা, যা কয়েক দশক ধরে দেশের উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠছিল।

১০ বছরের মধ্যে নরেন্দ্র মোদিজি সন্ত্রাসবাদ থেকে প্রায় ১০০ শতাংশ মুক্তি দিয়েছেন। আর নকশালবাদের ক্ষেত্রেও আপনি বলতে পারেন যে, তিনি এটি প্রায় ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্মূল করে দিয়েছেন, বললেন অমিত শাহ
১০ বছরের মধ্যে নরেন্দ্র মোদিজি সন্ত্রাসবাদ থেকে প্রায় ১০০ শতাংশ মুক্তি দিয়েছেন। আর নকশালবাদের ক্ষেত্রেও আপনি বলতে পারেন যে, তিনি এটি প্রায় ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্মূল করে দিয়েছেন, বললেন অমিত শাহ

আজ বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র – এই ৭টি রাজ্য থেকে নকশালবাদ সম্পূর্ণ রূপে নির্মূল হয়েছে। তবে ছত্তিশগড়ের ৪টি জেলায় এখনও নকশালবাদ রয়েছে। যদিও এখন সেখানেও ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার গঠিত হয়েছে এবং বিগত ৩ মাসের মধ্যে প্রায় ১০০ নকশালবাদীকে হত্যাও করা হয়েছে। আমার পূর্ণ বিশ্বাস যে, মোদিজি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এক-দুই বছরের মধ্যে গোটা দেশ নকশালবাদ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে।

আর একটি বড় সমস্যা রয়েছে। প্রায় সমস্ত দিক থেকেই দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে পড়েছিল। আগে পলিসি তৈরিই হয়নি, উৎপাদনের গতিবিধিও হ্রাস পেয়েছিল। রফতানির পরিমাণও কমছিল। দেশের সমস্ত সরকারি ব্যাঙ্কের ব্যালেন্স শীট তৈরি করতে গেলেও তৈরি করা সম্ভব হত না। এই তো ছিল পরিস্থিতি। এদিকে মূল্যবৃদ্ধিও আকাশছোঁয়া ছিল। আর বাজেটের ১৬টি প্যারামিটারের মধ্যে ১৬টিই নেগেটিভ বলেই দেখা যাচ্ছিল। মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই মোদিজি এই দৃশ্যপট পুরোপুরি বদলে দিয়েছেন। শেয়ার বাজার আজ আকাশছোঁয়া। এফএফআই-এর বিক্রির পরেও, ভারতীয় মিউচুয়াল ফান্ডগুলি বাজারকে আরও শক্তিশালী করেছে। পিএলআই স্কিম এবং একটি শক্তিশালী ইকো-সিস্টেমের কারণে ভারত ফেভারিট ডেস্টিনেশন ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের জন্য বিশ্বের এক নম্বর স্থানে পৌঁছে গিয়েছে। আমাদের বাচ্চারা প্রতিদিন স্টার্ট-আপ রেজিস্টার করছে। আমাদের কোম্পানিগুলো প্রতিদিন পেটেন্ট রেজিস্টার করছে। এমনকী বহু স্বরোজগারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সমস্ত ব্যাঙ্কের ব্যালেন্স শীট আজ খুব ভাল ভাবে তৈরি হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথের যে সমস্ত প্যারামিটার রয়েছে, তা ২৫ বছরের শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এক্সপোর্ট রেকর্ড ভেঙে তো এগিয়েই চলেছে।

এইভাবে, আমরা আগামী ২৫ বছর পর্যন্ত গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে কিছু ক্ষেত্রে চালিত করতে চলেছি। ভারত আজ সেই সমস্ত ক্ষেত্রে অগ্রগামী হয়ে উঠেছে। যেমন গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদন, একটু দেরিতে হয়েছে ঠিকই, তবে সেমি-কন্ডাক্টর, বৈদ্যুতিক মোটর গাড়ির মোটর, ব্যাটারি উৎপাদন, মহাকাশ ক্ষেত্র দেরিতে হলেও আমি আরও একবার প্রতিরক্ষার কথাও বলব। এই ধরনের বেশ কিছু ক্ষেত্র আগামী ২৫ বছরের পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথ ও অবস্থা নির্ধারণ করতে চলেছে। আজ ভারত সেখানে একটি মজবুত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে এবং এই ভিত্তির উপর ভর করেই একটি বড় ইমারত তৈরি করতে হবে। তাই দেশের অর্থনীতির তো উন্নতি হয়েছেই এবং তা সুরক্ষিতও হয়েছে। এই দেশের অর্থনীতি আগে ১১-তম স্থানে ছিল, তবে আজ এই দেশের অর্থনীতি পঞ্চম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে।

গ্রাম হোক বা শহর, বন হোক কিংবা মরুভূমি, সমুদ্রের তীর হোক অথবা শহর… সব জায়গাতেই পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। আজ পরিকাঠামোর উপর ১০ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় ভারতীয় বাজেটে একটি অতি সাধারণ বিষয়। জিএসটি কালেকশন এবং ডিরেক্ট ট্যাক্স কালেকশন তো নিজের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে এগিয়ে চলেছে। দেশের অভ্যন্তরে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করার কাজটিও খুব ভাল ভাবেই করেছেন নরেন্দ্র মোদিজি। জনসাধারণের চোখে উজ্জ্বল ভারতের ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত আস্থা তৈরি করার যে দায়িত্ব ছিল, তাতে নরেন্দ্র মোদিজি খুব ভাল ভাবেই সফল হয়েছেন। আজ সকল ১৩০ কোটি মানুষ এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলেছেন যে, আমরা বিশ্বে সর্বপ্রথম স্থানে যেতে পারি। উচ্চশিক্ষা হোক, নতুন অর্থনৈতিক নীতি হোক কিংবা রাম জন্মভূমিই হোক, আর্টিকেল ৩৭০ অপসারণ, তিন তালাকের বিলুপ্তি, ইউসিসি বা দেশের ফৌজদারি আইনে আমূল পরিবর্তন করাই হোক… সমস্ত ক্ষেত্রের এই দশটা বছর স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো ১০ বছর। জনসাধারণও অনুভব করছেন যে, নরেন্দ্র মোদিজির নেতৃত্বের কারণেই করোনার মতো মহামারীর সঙ্গে এত ভাল ভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে।

রাহুল জোশী: আর্থিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে তো আপনার দখল খুবই ভাল। আপনি এই উত্তরটা খুব ভাল ভাবেই দিলেন। আমার এই সম্পর্কিত একটি প্রশ্ন রয়েছে। যখন প্রচার শুরু হয়েছিল, তখন গত কয়েক মাস ধরে সরকার অর্থনীতির কথা বলছিল, উন্নয়নের কথা বলছিল। এইমাত্র আপনি যে কথাগুলি বললেন। এই সব কথা বলেই জনগণের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রথম পর্বের পর দেখা গেল তা তুষ্টিকরণের দিকে ঘুরে গিয়েছে, আবার কিছুটা হিন্দু-মুসলিমের দিকে। আপনারা ইস্তেহার প্রসঙ্গে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন। রাজস্থানে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, কংগ্রেসের ইস্তেহারে আরবান নকশালের গন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মাওবাদী চিন্তাধারা ফুটে উঠেছে। তাহলে এটা কোথা থেকে এসেছে?

দেখুন, যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে আনা আমাদের দায়িত্ব।দেখুন, যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে আনা আমাদের দায়িত্ব।
দেখুন, যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে আনা আমাদের দায়িত্ব।

অমিত শাহ: দেখুন, যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে আনা আমাদের দায়িত্ব। আপনি আমায় বলুন যে, এই যুগে কোন রাজনৈতিক দল কি পার্সোনাল ল নিয়ে কথা বলতে পারে? দেশ কি শরিয়তের ভিত্তিতে চলবে? এক দিকে আমরা আমাদের ইস্তেহার ও রেজোলিউশনে বলছি যে, আমরা ইউনিফর্ম সিভিল কোড আনব আর কংগ্রেস বলছে যে, আমরা ব্যক্তিগত আইনের প্রচার করব। কংগ্রেসের জবাব দেওয়া উচিত। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

রাহুল জোশী: সেই কারণেই আপনি বলছেন যে, এতে মুসলিম লিগের ছাপ স্পষ্ট?

অমিত শাহ: একদমই, মুসলিম লিগের ছাপ রয়েছে।

রাহুল জোশী: মুসলিম লিগের ছাপ রয়েছে এটা নিয়েই বিতর্ক?

অমিত শাহ: আপনি আমায় বলুন। ওরা বলছে যে, দেশের কনট্র্যাক্টসে সংখ্যালঘুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। চুক্তিতে প্রথম সবথেকে দরিদ্র কে? অতীত কর্মক্ষমতা কী? কাজ করার যোগ্যতা আছে না কি নেই? এর ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে না কি কন্ট্র্যাক্টরের ধর্মের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে? ওরা কীভাবে দেশ চালাতে চায়? এটা নিয়ে দেশের মানুষকে ভাবতে হবে। বহু সময় পরে নরেন্দ্র মোদিজি দেশকে তুষ্টিকরণের রাজনীতি থেকে বার করে এনেছেন। কংগ্রেস জয়ের আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে বলেই তারা আবারও সেই দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশকে।

রাহুল জোশী: ওই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, সবার আমানত যাচাই করে সম্পদ পুনর্বণ্টন করা হবে। আর এই সম্পদ পুনর্বণ্টন করা হবে মুসলিম এবং অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে। এটা কোথা থেকে এসেছে?

অমিত শাহ: এটি দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বক্তব্য, বড়ই প্রসিদ্ধ ছিল সেই বক্তব্য যে, এই দেশের সম্পদের উপর সংখ্যালঘুদের এবং সংখ্যালঘুদের মধ্যেও মুসলমানদের প্রথম অধিকার রয়েছে। এখন যখন সম্পদ বণ্টনের কথা আসে, তখন তা হবে সম্পদের ভিত্তিতে। সরকার জনগণের সম্পত্তি নিয়ে বণ্টন করবে। আর আমি বলি যে, এটা যদি সত্যি না হয়, তাহলে কংগ্রেস দলকে বলতে হবে এর অর্থ কী?

রাহুল জোশী: না, রাহুল গান্ধি স্পষ্ট ভাবে বলেছেন যে, তারা সরকার গঠন করলে দেশব্যাপী একটি এক্স-রে করা হবে, যাতে জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। কোন শ্রেণী, কোন জাতির কত সম্পদ, কত টাকা এবং প্রতিষ্ঠানে কতটা অংশগ্রহণ থাকবে, সেই অনুযায়ী পুনঃবন্টন হবে?

অমিত শাহ: তাই সেই অনুযায়ী পুনর্বণ্টনে তাদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাহুল জোশী: ওঁরা বলেন যে, বৈষম্য দূর করার এটাই উপায়?

অমিত শাহ: এটা ওঁদের চিন্তাধারা। আমি মনে করি যে, এই ধরনের একটি পুরনো দল সংখ্যালঘু এবং চরম বাম মতাদর্শসম্পন্ন মানুষদের কাছে নিজেদের ইস্তেহার আউটসোর্স করেছে।

রাহুল জোশী: তাহলে ওই মঙ্গলসূত্রের ব্যাপারটা কোথা থেকে এল?

অমিত শাহ: স্বাভাবিক ভাবেই যখন সম্পদ আসে, তখন সব কিছুই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

রাহুল জোশী: স্যাম পিত্রোদাজি উত্তরাধিকার কর নিয়ে কথা বলেছিলেন, এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

অমিত শাহ: দেখুন আমার মনে হয় যে, স্যাম পিত্রোদা একটি আইভরি টাওয়ারে বসবাস করছেন। এই দেশের মূল্যবোধ, এই দেশের মানুষের চিন্তাভাবনা, এই দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কই নেই।

রাহুল জোশী: তাহলে আপনারা কখনওই এই উত্তরাধিকার কর আনবেন না? অর্থাৎ উত্তরাধিকার ট্যাক্স কখনওই আরোপ করা হবে না?

অমিত শাহ: আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে জনগণের সামনে আমাদের ইস্তেহার পেশ করেছি। এখানে সব কিছু বলা রয়েছে। আমরা কিছুই গোপনে করব না।

এটা ইস্তেহার নয়, ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। কর্নাটকে ওদের সরকার রাতারাতি সেখানকার সমস্ত মুসলমানদের ব্যাকওয়ার্ড করে দিয়েছে। আর তার সমীক্ষাও হয়নি, এমনকী কোনও কমিশনও গঠন করা হয়নি, বললেন শাহ
এটা ইস্তেহার নয়, ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। কর্নাটকে ওদের সরকার রাতারাতি সেখানকার সমস্ত মুসলমানদের ব্যাকওয়ার্ড করে দিয়েছে। আর তার সমীক্ষাও হয়নি, এমনকী কোনও কমিশনও গঠন করা হয়নি, বললেন শাহ

রাহুল জোশী: আর একটি বিষয়, যা এই মুহূর্তে চর্চার শিরোনামেয রয়েছে। অর্থাৎ, কংগ্রেসের ইস্তেহার দেখে আপনারা বলছেন যে, ওবিসি রিজার্ভেশন কেটে মুসলমানদের দেবেন। এর ভিত্তি কী?

অমিত শাহ: এটা ইস্তেহার নয়, ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। কর্নাটকে ওদের সরকার রাতারাতি সেখানকার সমস্ত মুসলমানদের ব্যাকওয়ার্ড করে দিয়েছে। আর তার সমীক্ষাও হয়নি, এমনকী কোনও কমিশনও গঠন করা হয়নি। ধর্মের ভিত্তিতে সমস্ত মানুষকে অনগ্রসর বা ব্যাকওয়ার্ড বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর তাঁদের সংরক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এখন যে রিজার্ভেশন কাটা হয়েছে, তা শুধুমাত্র ওবিসিদের ক্ষেত্রেই কাটা হয়েছে। একই ভাবে অন্ধ্রপ্রদেশে, সংযুক্ত অন্ধ্রে যখন ওদের সরকার ছিল, তখন ওরা মুসলিমদের চার শতাংশ সংরক্ষণ দিয়েছিল। তাহলে এটা কার ভাগ কেটেছে? শুধুমাত্র এসসি-এসটি এবং ওবিসিদেরই কাটা। আমি যখন বলেছিলাম যে, আমরা ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ শেষ করে দেব, তখন আমার ভিডিওটি বিকৃত করে জনগণের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
কংগ্রেসের দায়িত্ব নেওয়ার পর রাহুল গান্ধি রাজনৈতির স্তরের ক্রমাগত অবনতি করে চলেছেন। আপনারা সংসদে প্রশ্ন করতে পারবেন না, শোরগোল সৃষ্টি করবেন, বহিষ্কার করে দেবেন, অন্যদের কথা বলতে দেবেন না, বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন না, আর বাইরে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বলবেন যে, আমাদের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। আপনারা কি মনে করেন দেশের মানুষ এসব জানেন না? দেশের মানুষ আসলে এসব ভাল করেই জানেন। গণতন্ত্রে সুস্থ বিতর্ক হওয়া উচিত। আর আপনারাও তো ওঁদের কোনও প্রশ্ন করেন না। আপনাদেরও প্রশ্ন করা উচিত। কিন্তু আপনারা শুধু আমাদেরই প্রশ্ন করেন, ওঁদের তো করেন না।

রাহুল জোশী: না, না, আমরা তো ওঁদেরকেও প্রশ্ন করছি। আমাদের দল সেই কাজেই ব্যস্ত। জাতি আদমশুমারিরও একটা ব্যাপার রয়েছে। এই সংক্রান্ত প্রশ্ন রয়েছে যে, ওঁরা তো জাতি আদমশুমারির কথা বলতে থাকেন। বলেন যে, জনসংখ্যা যত বেশি হবে, অধিকারও তত বেশি। আপনি এটা কীভাবে দেখেন?

অমিত শাহ: কত বছর পর্যন্ত এই দেশে কংগ্রেসের শাসন ছিল? ৫৫ বছর ধরে চলেছে তাদের শাসন। অথচ কখনওই এটা করায়নি। এখন যেহেতু ওরা ক্রমাগত হেরে যাচ্ছে, তাই সব কিছুর মোড় ঘোরানোর চেষ্টা করছে। এটা তাদের উদ্দেশ্য নয়। এদেশে অনগ্রসর শ্রেণি বিরোধী কোনও দল থাকলে একমাত্র দল হল কংগ্রেস। বছরের পর বছর ধরে ওরা কাকা সাহেব কালেলকর কমিশনই খোলেননি। মণ্ডল কমিশনকে দমন করে রেখেছিল। এমনকী ওবিসি অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষদেরও কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ দেওয়া হয়নি। যখন মণ্ডল কমিশন কার্যকর করা হচ্ছিল, তখন রাজীব গান্ধি বিরোধী দলের নেতা হিসাবে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে প্রতিবাদ ভাষণ দিয়েছিলেন। রাহুল গান্ধির সেই ভাষণ পড়ে নেওয়া উচিত। আর আমরা তো দেশকে অনগ্রসর শ্রেণি এবং দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা একজন আদর্শ নেতা ও থেকে সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেওয়ার কাজটা করেছি।

রাহুল জোশী: একটা ন্যারেটিভ বানানোর চেষ্টা চলছে যে, যদি ৪০০ পেরিয়ে যায়, তাহলে আপনি বাবা সাহেবের সংবিধান পরিবর্তন করবেন। এর পরে আপনি কি ওবিসি, এসসি-এসটি সংরক্ষণেরও পরিবর্তন করবেন?

অমিত শাহ: রাহুলজি, আমাদের কাছে ১০ বছর ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ রয়েছেন। এই দেশের মানুষ বিগত ১০ বছর ধরে নরেন্দ্র মোদিজিকে সংবিধান পরিবর্তন করার ক্ষমতা দিয়েছেন। ১০ বছরে আমরা কি কিছু করেছি? আমরা কখনওই সংরক্ষণ বাতিল করার চেষ্টা করিনি। আমরা আর্টিকেল ৩৭০ ধারা অপসারণ এবং তিন তালাক রদ করতে এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যবহার করেছি। ইউসিসি আনার ক্ষেত্রে এবং ইংরেজদের আইন পরিবর্তন করতে এটি করেছি। কাশ্মীরের অভ্যন্তরে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য এটা করেছি। আমাদের কাছে প্রায় ১০ বছর ধরে অধিকার রয়েছে। রাহুল গান্ধির একটা নীতি রয়েছে, মিথ্যা বলুন, জোরে বলুন আর বারবার বলুন। তিনি এই নীতিই অনুসরণ করছেন।

রাহুল জোশী: আপনি কি মনে করেন যে, তিনি বারবার এই কথা বলেন বলেই এই ন্যারেটিভ তৈরি হয়েছে?

অমিত শাহ: এই ন্যারেটিভ তৈরিই হয় না। আমাদের হাতে ১০ বছর ধরে এই অধিকার রয়েছে।

রাহুল জোশী: আপনি নিরাপত্তার কথা বললেন, তাই আমি এই বিষয়েও একটু কথা বলতে চাই। আপনি বলেছেন যে, সম্প্রতি আপনারা নকশালদের বিরুদ্ধে প্রচুর ক্র্যাকডাউন করেছেন। আপনি বলেলেন যে, ২-৩ বছরের মধ্যে আপনারা ছত্তিশগড় থেকেও নকশালদের নির্মূল করবেন… তো কিছু কংগ্রেস নেতা বলেছিলেন যে, তাঁরা শহিদ। আপনি এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?

অমিত শাহ: দেখুন, তুলসীদাসজি রামচরিত মানসে বলেছেন যে, যাঁর খারাপ সময় চলে, প্রভু রাম সবার আগে তাঁর মতি হরণ করে নেন। কংগ্রেসিদের ক্ষেত্রেও সম্ভবত সেই সময় এসেছে। আমাদের জওয়ানরা নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঘন জঙ্গলের ভিতরে অভিযান চালিয়ে নকশালদের হত্যা করেন আর নকশালরা বলে যে, আমাদের ক্যাডার নিহত হয়েছে। এদিকে কংগ্রেস পার্টি বলে, এগুলো ভুয়ো এনকাউন্টার। ঈশ্বরই তাঁদের রক্ষা করুন। এমনকি ঈশ্বরও মনে হয় রক্ষা করতে পারবেন না।

রাহুল জোশী: আপনাদের আগের মেয়াদে আপনারা অনেক বড় বড় কাজ করেছেন। আপনারা আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল করেছেন। সিএএ জারি করেছেন। ফৌজদারি কার্যবিধি আইন এনেছেন। আপনারা এই ধরনের এত বড় বড় কাজ করেছেন। কিন্তু আপনি যদি আজকের এই বিরোধিতার দিকে দেখেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে, অনেক বিরোধীরা বলছেন, তাঁরা ৩৭০ ফিরিয়ে আনবেন এবং সিএএ কার্যকর হতে দেবেন না। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, চিদাম্বরমজির মতো সকল বড় নেতারা এই রকম কথা বলেন। তাহলে আপনি এটা কীভাবে দেখেন?

অমিত শাহ: দেখুন, সংখ্যালঘু ভোট পাওয়ার জন্য এটা ওঁদের কৌশল। ওঁরা ক্ষমতায় তো আসছেনই না, আর ৩৭০-ও আর ফিরবে না। আবার না ওঁরা ক্ষমতায় আসবেন, না সিএএ বাতিল হবে। এই বিষটয়টা ওঁরা ভাল করেই জানেন। অথচ তাঁরা সংখ্যালঘুদের তুষ্ট করে সংখ্যালঘু ভোট পেতে চান। এই কারণেই তাঁরা মিথ্যাচার করছেন। এই সাক্ষাৎকারে রাহুলজি আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশের জনতাকে এটা জানাতে চাই যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সংসদে ভারতীয় জনতা পার্টির একজনও সাংসদ থাকেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ৩৭০ ফিরে আসতে পারবে না। সিএএ-ও শেষ করা যাবে না। এখন ৩৭০ ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছে এবং তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে।

রাহুল জোশী: আপনি কি তাড়াহুড়ো করে এটি বাস্তবায়ন করেছেন না কি এটি কিছু লোককে নাগরিকত্ব দেবে? আর এটি কখন সম্ভব হবে এবং এর সময়সীমা কী?

অমিত শাহ: দেখুন, আবেদন তো আসতে শুরু করেছে। নিয়ম অনুযায়ী এর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আমার মনে হয়, নির্বাচনের আগে অর্থাৎ চূড়ান্ত ভোটের আগেই নাগরিকত্ব দেওয়া শুরু হয়ে যাবে।

রাহুল জোশী: অমিতজি, আপনারা ইউনিফর্ম সিভিল কোডের কথা বলছেন। আর কংগ্রেস ব্যক্তিগত আইনের কথা বলছে। আপনি এটা কীভাবে দেখছেন? কোথাও না কোথাও আপনারা নিজের-নিজের ভোট সংগ্রহ করছেন?

অমিত শাহ: ব্যক্তিগত ভোট নয়। ইউনিফর্ম সিভিল কোড আমাদের সংবিধানের ম্যান্ডেট। সংবিধান আমাদের জন্য যে পথপ্রদর্শক নীতি প্রণয়ন করেছে, তাতে লেখা রয়েছে যে, এদেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার জন্য দেশের আইনসভা ও দেশের সংসদকে উপযুক্ত সময়ে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমার মনে হয় যে, সঠিক সময় এসে গিয়েছে। আর আজ থেকে আমরা এসব বলছি না। আমাদের দল গঠনের আগে ইস্তেহারে বলা হয়েছিল, এদেশে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও আইন হবে না, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি থাকতে হবে। এই দেশ যদি ধর্মনিরপেক্ষ হয়, তাহলে ধর্মের ভিত্তিতে আইন হবে কী করে? হওয়া উচিতই নয়।

রাহুল জোশী: সলমন খুরশিদের একটি বক্তব্য ভাইরাল হচ্ছে। তিনি বলছিলেন, ইউপিএ-১ ও ইউপিএ-২-এর যে সরকার গঠিত হয়েছে, তা শুধু এই কারণে যে, ওঁরা মুসলিমদেরকে আবার নিজেদের দিকে টানতে পারেন। আপনি এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?

অমিত শাহ: সম্ভবত এই ভিত্তিতেই ওঁদের ইস্তেহার তৈরি হয়েছে। সলমন খুরশিদজি কেন এমন ইস্তেহার বনালেন, তার রহস্যই ফাঁস করে দিলেন। তাঁরা ফের এটা করতে চান। কিন্তু তাঁরা জানেন না যে, দেশের মানুষ সচেতন হয়ে গিয়েছেন। আপনাদের তুষ্টিকরণের নীতি আর সফল হবে না কারণ আপনারা যখন তুষ্টিকরণ করেন, তখন অন্য অংশটি দ্রুত জাগরণ দিয়ে এর মোকাবিলা করতে সক্রিয় হয়। এখন তাঁরা সফল হবেন না।

রাহুল জোশী: এখানে অনুপ্রবেশকারীদের কথা বলা হচ্ছে। আপনারা সিএএ জারি করেছেন। ইস্তেহারে এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনা নেই। এমনটা কেন?

অমিত শাহ: দেখুন, কোভিডের কারণে সিএএ বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে। আর আমরা বিশ্বাস করি যে, সিএএ প্রথমে মাটিতে প্রয়োগ করা উচিত। সেই প্রক্রিয়া এখন চলছে। আর যতদূর অনুপ্রবেশের প্রশ্ন আসে, এখন দেশের এক রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশ ঘটছে। বাংলা থেকে। কারণ এক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আশীর্বাদ রয়েছে। তিনি অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যেই নিজের ভোটব্যাঙ্ক দেখছেন। আর অনুপ্রবেশকে তাঁরা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আশঙ্কা হিসেবে দেখেন না। তাঁদের শুধু মনে হয় যে, আমার তো ভোট বাড়ছে। এটা শুধু বাংলার জন্যই নয়, সারা দেশের জন্য খুবই বিপজ্জনক চিন্তা। আমি এবার ভারতীয় জনতা পার্টিকে সফল করার জন্য বাংলার মানুষের কাছে আন্তরিক ভাবে আবেদন করতে চাই। এরপর সেখানে বিজেপি সরকার গঠন হোক। এমন একটা সীমান্ত তৈরি করব যে, সেখানে একটা পাখিকেও মারা যাবে না।

রাহুল জোশী: সেই কারণেই তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সিএএ-র তীব্র বিরোধিতা করছেন? তিনি বলছেন যে, আমরা কখনওই সিএএ কার্যকর হতে দেব না?

অমিত শাহ: তিনি কি জানেন না যে, এটি কেন্দ্রের বিষয়। এতে রাজ্যর কিছু করার নেই। সম্ভবত জানেন। অথচ তিনি সংখ্যালঘুদের বিভ্রান্ত করার জন্য এই কথা বলছেন।

রাহুল জোশী: অমিতজি, ২২ জানুয়ারি রাম মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এটা আপনাদের একটা বড় প্রতিশ্রুতি ছিল, যা আপনারা রেখেছেন। কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, আপনারা এই নির্বাচনে রামের নামে ভোট চাইছেন।

অমিত শাহ: দেখুন, আমরা যখন মন্দির তৈরি হয়নি, তখন রামের নামে ভোট পেতাম এবং বলতাম আমরাই তৈরি করব। আমরা তো ভোট নেওয়ার যে কারণ ছিল, সেটাই শেষ করে দিয়েছি। বিরোধীরা উদ্বিগ্ন এবং গোটা দেশ তাঁদের উপর ক্ষুব্ধ কারণ যখন রাম মন্দির তৈরি হয়েছিল, তখন তা শান্তিপূর্ণ ভাবেই নির্মিত হয়েছিল। এমনকী সাংবিধানিক ভাবেই তা হয়েছিল। যখন প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছিল, তখন তাঁরা তা বর্জন করেছিলেন। সংখ্যালঘুদের ভয়ে তিনি ভগবান শ্রীরামের প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে যাননি। এই কারণে তাঁর উপর গোটা দেশ ক্ষুব্ধ। আমরা কি কখনও বলেছি যে, রাম মন্দির তৈরি হয়েছে, তাই আমাদের ভোট দিন। কিন্তু সারা দেশের মানুষ জানেন যে, এই মানুষগুলো ৭০ বছর ধরে আটকে ছিলেন। মাত্র ৫ বছরে মোদিজি মামলা জিতেছেন, ভূমিপূজা করেছেন এবং প্রাণ প্রতিষ্ঠাও করে দিয়েছেন। আজ একটি বিশাল রাম মন্দির তৈরি হয়েছে, যা সমগ্র দেশকে আনন্দ দিচ্ছে।

রাহুল জোশী: অমিতজি, আমি আপনাকে হিন্দু-মুসলিম নিয়ে চর্চার প্রসঙ্গে একটি শেষ প্রশ্ন করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী এক বছর আগে পসমন্দা মুসলমানদের কাছে একটি আউটরিচও করেছিলেন। তাঁদের নিয়ে কথাবার্তাও বলেছিলেন। তাঁদের জন্য তিনি অনেক চিন্তাও করেন। একদিকে এই ঘটনা ঘটছে, অন্য দিকে এই… এর মধ্যে কি কোনও দ্বন্দ্ব নেই?

অমিত শাহ: একদমই না। প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র পসমন্দা মুসলমানদেরই সীমার বাইরে গিয়ে সাহায্য করেননি, আদিবাসীদেরকেও তা করেছেন। দলিতদের জন্যও করা হয়েছে, আর অনগ্রসর শ্রেণীর জন্যও করা হয়েছে। আবার এটা করা হয়েছে গরিবদের জন্যও। কৃষকদের জন্যও করা হয়েছে। মাতৃশক্তি ও মহিলাদেরও করা হয়েছে। তরুণদের জন্যও করা হয়েছে। এটা তাঁর কাজ আর দায়িত্ব। উন্নয়নের দৌড়ে যাঁরা পিছিয়ে আছেন, তাঁদের সকলকে একসঙ্গে আনা সরকারের দায়িত্ব। আমি এর মধ্যে কোনও অসঙ্গতি দেখছি না।

রাহুল জোশী: নির্বাচনের পরিবেশ আর আপনি আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। মানুষ আপনার ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে দীর্ঘকাল ধরে বলেন যে, অমিতজি আগে যা বলেছিলেন, তা সঠিক ছিল। তো কিছু রাজ্যের কথায় যাওয়া যাক। আমরা এখন গুজরাতে আপনার সঙ্গে রয়েছি, তাই এখান থেকেই শুরু করা যাক। গত দুই নির্বাচন থেকে ২৬টির মধ্যে ২৬টি আসন এসেছে, তাই এবার কি হ্যাটট্রিক করবেন বলে আশা করছেন?

অমিত শাহ: অবশ্যই আমরা গুজরাতের ২৬টি আসনের মধ্যে ২৬টিতেই জিতব। আর ব্যবধানও আমাদের ২০১৯ সালের নির্বাচনের তুলনায় বেশি হবে সব আসনেই।

রাহুল জোশী: বলা হচ্ছিল যে, যাঁরা ক্ষত্রিয়, তাঁরা একটু রাগ করে আছেন আপনাদের উপর। তাঁদের উদ্দেশ্যে আপনি কোনও বার্তা দিতে চান?

অমিত শাহ: দেখুন, আমরা তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আমার পূর্ণ আস্থা আছে যে, সব কিছু নিজের জায়গায় ঠিক হয়ে যাবে। আমরা ২৬টি আসনের মধ্যে ২৬টিতেই জিতব এবং আমাদের ব্যবধানও বাড়বে।

আমি আজ সকালেই ভারতীয় জনতা পার্টির অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছি। কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অথচ প্রিয়াঙ্কাজি এবং রাহুলজি বলছেন, কেন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। ওঁরা হয়তো আমাদের অবস্থানটা জানেন না, বললে শাহ
আমি আজ সকালেই ভারতীয় জনতা পার্টির অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছি। কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অথচ প্রিয়াঙ্কাজি এবং রাহুলজি বলছেন, কেন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। ওঁরা হয়তো আমাদের অবস্থানটা জানেন না, বললে শাহ

রাহুল জোশী: এবার কর্নাটকের দিকে এগোনো যাক। কর্নাটকের নির্বাচন আপনাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গতবার সেখানে আপনারা বড় জয় পেয়েছিলেন, আবার বিধানসভা নির্বাচনে আপনারা পরাজিত হয়েছিলেন। তাহলে এই পরিস্থিতিতে কর্নাটককে কীভাবে দেখছেন? বিশেষ করে প্রজ্বল রেভান্নার প্রসঙ্গে আজ আপনি সাংবাদিক সম্মেলন করে বিবৃতি দিয়েছেন। তাহলে যেসব নির্যাতিত মহিলা রয়েছে, তাঁদের বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখছেন? কারণ যেহেতু সেখানে তাঁদের সঙ্গে আপনাদের জোট রয়েছে, তাই আপনারা কি জোটের চাপে থাকবেন? কী পদক্ষেপ করবেন আপনারা?

অমিত শাহ: আমি আজ সকালেই ভারতীয় জনতা পার্টির অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছি। কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অথচ প্রিয়াঙ্কাজি এবং রাহুলজি বলছেন, কেন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। ওঁরা হয়তো আমাদের অবস্থানটা জানেন না। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রাজ্য সরকারকেই বজায় রাখতে হয়। তাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আমাদের তো পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা নয়। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে এবং কোনও অবস্থাতেই এটা বরদাস্ত করা যাবে না। আর কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এদিকে ভারত সরকারের মহিলা কমিশনও আজ কর্নাটক রাজ্য সরকারকে নোটিশ দিয়েছে।

রাহুল জোশী: তাই জোটের কোনও চাপ নেই। এই বিষয়ে আপনারা চাপের মুখে আসবেন না কখনও?

অমিত শাহ: আমাদের উপর কোনও চাপ নেই। আর আমরাও চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না।

রাহুল জোশী: নেহা হিরেমাথের বিষয়ে আর একটি কেলেঙ্কারি ঘটেছিল। যেখানে লাভ জেহাদের রঙ লেগেছিল?

অমিত শাহ: কোনও রঙ লাগেনি ভাই। এটি একেবারেই লাভ জেহাদের একটি ঘটনা।

রাহুল জোশী: আমি আপনার কাছ থেকে এটি জানতে চাইছিলাম কারণ আপনি যদি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারেন। কারণ মুখ্যমন্ত্রী ও হোম মিনিস্টার বলেছেন যে, এটা একটা ব্যক্তিগত বিষয়?

অমিত শাহ: নিজেদের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের জন্যই এই কথা বলছেন তাঁরা। আমায় একটা কথা বলুন, কোনও কলেজ ক্যাম্পাসে কোনও মেয়ের নিরাপত্তা পাওয়া উচিত কি উচিত নয়। এভাবেই হত্যাকাণ্ড হচ্ছে আর এটাকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে দাগিয়ে দিয়ে শুধু ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে এই সামাজিক দূষণের দিক থেকে সকলের নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদি বোমা বিস্ফোরণও হয়, সেটাও ওঁদের কাছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বলেই মনে হয়। এনআইএ তদন্ত করলে তবেই গোটা বিষয়টি ধরা পড়ে। ১০ বছর ধরে বেঙ্গালুরুতে কোনও বোমা বিস্ফোরণ হয়নি। যখন তাদের সরকার আসে, তখন তারা এসডিপিআই-এর সমর্থন নেয় আর এখন বোমা বিস্ফোরণ ঘটতে শুরু করেছে। নিজেদের ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য তারা আর কত নিচে নামবে? দেশের নিরাপত্তা, বেঙ্গালুরুর নিরাপত্তা, কর্নাটকের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে রেখেছে কংগ্রেস পার্টি।

রাহুল জোশী: এই পরিস্থিতিতে, যে বিষয়ে আমরা এইমাত্র আলোচনা করলাম, কর্নাটকে আপনি ভারতীয় জনতা পার্টি এবং তার জোটকে কতগুলি আসন দেবেন?

অমিত শাহ: দেখুন, নির্বাচন এখনও শেষ হয়নি। তবে আমি মনে করি, কমবেশি আমরা আমাদের অবস্থান বজায় রাখতে পারব।

রাহুল জোশী: এবার মহারাষ্ট্রের দিকে এগোনো যাক। অমিতজি, আসলে মহারাষ্ট্রে একটি অবস্থা বিরাজ করছে। দুটি দল ভেঙে গিয়েছে। একটা ভাগ আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। আর একটি অন্য দিকে রয়েছে। একটা ভাগ বলছে, আমাদেরটাই আসল। অন্যটা আবার বলছে, আমাদেরটা আসল। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে আপনি কি মনে করেন যে, উদ্ধব ঠাকরে এবং শরদ পওয়ারজির প্রতি কিছুটা সহানুভূতি থাকতে পারে?

অমিত শাহ: দেখুন, মহারাষ্ট্রের মানুষ মোদিজির সঙ্গে আছেন। তাই যাঁরা মোদিজির সঙ্গে থাকবেন, তাঁরাই ভোট পাবেন। কারণ কে হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, এটা তারই নির্বাচন? আর এটা নিয়েই চলছে লড়াই। দুটি শিবির স্পষ্ট। একদিকে নরেন্দ্র মোদিজির নেতৃত্বে এনডিএ রয়েছে। অন্যদিকে রাহুল বাবা, শরদ পওয়ার, মমতাজি, স্ট্যালিন, তেজস্বী যাদব, লালু যাদব – এঁদের নেতৃত্বে একটি ইন্ডি জোট রয়েছে। যার কোনও নেতাই নেই। এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাঁরা কাকে নির্বাচিত করবেন। কারণ একদিকে ইন্ডি জোট রয়েছে, যারা ১২ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি এবং কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত।

অন্য দিকে, ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদি এমন একজন মানুষ, যাংর উপর ২৪ পয়সার কেলেঙ্কারিরও অভিযোগ নেই। এক দিকে গ্রীষ্মের মরশুম আসার সঙ্গে সঙ্গেই একটি দল ছুটিতে যাচ্ছে। বিদেশে ছুটি কাটাতে যাচ্ছে, কারণ এখানে খুবই গরম। আর অন্য দিকে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদিজি, যিনি ২৩ বছর ধরে দীপাবলির দিনেও ছুটি না নিয়ে সীমান্তে জওয়ানদের সঙ্গে দীপাবলি উদযাপন করেন। আবার এক দিকে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের ছেলে-মেয়ে, ভাইপো এবং পুত্রবধূদের জন্য কাজ করছে, অন্য দিকে নরেন্দ্র মোদি রয়েছেন, যিনি দেশের দরিদ্র মহিলা, কৃষক এবং যুবকদের জন্য কাজ করে চলেছেন।

তাই দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তাঁরা এমন একজন ব্যক্তিকে চান, যিনি দেশকে সুরক্ষিত রাখবেন না কি তাঁরা এমন লোক চান, যাঁরা ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে দেশের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে টেনে আনবেন। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি চাই না কি দেশের অর্থনীতিকে ডুবিয়ে দেওয়ার গোষ্ঠা চাই। দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। দেশের জনসাধারণ নরেন্দ্র মোদিজির সঙ্গে রয়েছেন এবং মোদিজি যে দলের সাথে থাকবেন, তাঁরা সেই দলকেই ভোট দেবেন। এই নির্বাচন মোদিজিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়ার নির্বাচন।

 

রাহুল জোশী: গতবার আপনাদের জোটের মোট ৪১টি আসন ছিল। এই বার?

অমিত শাহ: ফলাফল আসতে দিন। আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। সেখান থেকেই ৪০০ হয়ে যায়।

রাহুল জোশী: তাহলে মহারাষ্ট্রের কাছ থেকে আপনার পূর্ণ প্রত্যাশা আছে যে, ৪১টি আসন এসে যাবে?

অমিত শাহ: অবশ্যই। দেখুন ৪১ অঙ্কটি ৪০ কিংবা ৪২ হয়ে যেতে পারে। তবে কমবেশি এমন ফলই হবে। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, জম্মু-কাশ্মীর, দিল্লি, গুজরাত, কর্নাটকে ১০০ শতাংশ পুনরাবৃত্তি করতে পারব। রাজস্থানে আমাদের হয়তো খুবই কম কমবে, ওই এক-আধটা আসন। আবার উত্তরপ্রদেশে আমাদের ৫ থেকে ৭টি আসন বেড়ে যাবে। ওড়িশায় আমরা ১৬-র আশপাশে পৌঁছে যেতে পারি এবং অসমেও আমরা ১২-র উপরে চলে যাব। তবে বাংলায় আমরা অন্তত ৩০টি আসনে জিতব।

আরও পড়ুন -‘পৈতৃক আসন থেকে লড়ার মতো আত্মবিশ্বাসও ওঁদের নেই’, অমেঠি, রায়বরেলী নিয়ে রাহুল-প্রিয়াঙ্কাকে কটাক্ষ শাহের

রাহুল জোশী: শেষবার আপনি আমাকে সাক্ষাৎকারে ২৫ বলেছিলেন। ৩০… এটা তো আমরা যোগ করেই হিসার করে নিতে পারব যে, ৩৭০ হবে কি হবে না। আপনি তো সমস্ত পরিসংখ্যান দিয়ে দিয়েছেন?

রাহুল জোশী: অজিত পওয়ার মহারাষ্ট্রের সর্বত্র গিয়ে এটাই বলছেন যে, তিনি আপনাদের সঙ্গে যে জোট করেছেন, সেটা শরদ পওয়ারজির আশীর্বাদেই করেছেন। আপনি এই বিষয়টির মধ্যস্থতায় ছিলেন, তাই আপনি আমাদের এই বিষয়ে বলুন সত্যটা আসলে কী?

অমিত শাহ: না, আমি জানি না তাঁরা কাকে জিজ্ঞাসা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এটা তাঁদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এটা সত্য যে, যখন তাঁর প্রতি অবিচার করা হয়েছিল, তখন তিনি খুব উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন এবং শরদ পওয়ারের সঙ্গ ছেড়ে চলে যান। আশীর্বাদ ছিল কি ছিল না, সেটা তো শুধুমাত্র শরদ পাওয়ারই বলতে পারবেন।

রাহুল জোশী: তিনি তো আপনাদের সঙ্গে আসতেন না। তাঁর কি আসার কোনও ইচ্ছা ছিল না?

অমিত শাহ: আমরা আলোচনা করিনি।

রাহুল জোশী: আপনি বাংলার কথা বললেন। আপনি অনেক বড় সংখ্যা দিয়েছেন। গতবারও ছিল ১৮। এইবার বলছেন ৩০। তো এটা কীভাবে হবে? এর মধ্যে কী কী বিষয় রয়েছে? সন্দেশখালি কি একটা বড় বিষয় হতে পারে?

অমিত শাহ: দেখুন, সন্দেশখালিতে জনগণ ক্ষুব্ধ। সেখানে দুর্নীতি হচ্ছে, ব্যাপক দুর্নীতি। এতে মানুষও ক্ষুব্ধ। আর অনুপ্রবেশের জন্যও ক্ষুব্ধ জনসাধারণ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও জনগণ ক্ষুব্ধ। আর ভাইপোর গুন্ডাদের কাটমানির কারণেও খেপে রয়েছে জনসাধারণ।

রাহুল জোশী: ওড়িশায় বন্ধু আর বন্ধু নেই। আপনাদের পথও আলাদা হয়ে গিয়েছে। গতকাল যখন আমি সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম, তখন তিনি বলেছিলেন যে, এবার ওড়িশার পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তো আপনি এটা কীভাবে দেখেন? কী হবে ওড়িশায়?

অমিত শাহ: দেখুন, আমি স্পষ্ট ভাবে বিশ্বাস করি যে, উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে আছে ওড়িশা। এর পাশাপাশি ওড়িশার ভাষা, ওড়িশার সংস্কৃতি, ওড়িশার পোশাক-আশাক এবং এর মর্যাদাও মারাত্মক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। আর ভারতীয় জনতা পার্টি বিশ্বাস করে যে, কোনো রাজ্যের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে খেলা করা উচিত নয়। প্রতিটি রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন করা উচিত। যেটা ওড়িশায় হচ্ছে না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা আলাদা ভাবে লড়াই করব। আমার পূর্ণ আস্থা আছে যে, এবার ওড়িশার মানুষ মোদিজির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টিকে আশীর্বাদ করবেন।

রাহুল জোশী: আপনি লোকসভা নির্বাচনের জন্য একটি বড় সংখ্যা দিয়েছেন। রাজ্যসভা (রাজ্যের বিধানসভা) নির্বাচনকে আপনি কীভাবে দেখেন?

অমিত শাহ: দেখুন, এই নির্বাচনের এখনও অনেকটা সময়ই বাকি। দুই পক্ষ থেকেই প্রার্থী ঘোষণা অনেক দেরিতে হয়েছে। আমার একটাই মাত্র মত। কিছু মূল্যায়ন আসবে। তবে আমি এটা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে, ওড়িশার মানুষ এবার ভারতীয় জনতা পার্টিকে আশীর্বাদ করবেন।

রাহুল জোশী: রাজ্যের নির্বাচনে?

অমিত শাহ: হ্যাঁ।

রাহুল জোশী: উত্তরপ্রদেশের বিষয়ে আপনি এইমাত্র বললেন যে, গতবারের তুলনায় সেখানে আসন বাড়বে?

অমিত শাহ: আমরা উত্তরপ্রদেশে আসন বাড়াব, অর্থাৎ সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ৮০টির মধ্যে ৮০টি আসনই হয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন – ‘দক্ষিণের ৪ রাজ্যে কংগ্রেসের চেয়ে বেশি আসন পাবে বিজেপি’, জোর দিয়ে বললেন অমিত শাহ

রাহুল জোশী: এটা অনেক বড় বক্তব্য। আপনাদের ২০১৪-র রেকর্ড কি ভেঙে যাবে?

অমিত শাহ: হ্যাঁ, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা ৮০টির মধ্যে ৮০টি আসনেই জিততে পারব।

রাহুল জোশী: এর অর্থ হল, আপনারা অখিলেশজিকে কনৌজকে, আর ডিম্পল যাদবকে মইনপুরিতে পরাজিত করবেন। আর ফিরোজাবাদ, আজমগড়, বদায়ূঁ সব জায়গায় তাঁদের পুরো পরিবারকেও?

অমিত শাহ: আমি সম্ভাবনার কথা বলেছি যে, আমরা ৮০টির মধ্যে ৮০টি জিততে পারি। তবে আমাদের আসন বাড়বে এটা নিশ্চিত।

রাহুল জোশী: রাহুল গান্ধি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধিজি কখনও হ্যাঁ, কখনও না… কখনও লড়াই করছে, তো কখনও লড়ছেন না। এখন আবার শোনা যাচ্ছে যে, তাঁরা হয়তো আর লড়াই করবেন না। আপনি এটা কীভাবে দেখেন?

অমিত শাহ: দেখুন, এঁরা এঁদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। এমনকী নিজেদের পৈতৃক আসন থেকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনও আত্মবিশ্বাসই নেই তাঁদের। লড়াই না করার থাকলে এতদিন ধরে আসনটিকে ঝুলিয়ে রাখা হল কেন? একজন কর্মীকে দিলে অন্তত তিনি জনসংযোগ তো করতে পারতেন। এই যে বিভ্রান্তি, এটা কোথাও গিয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাবকেই প্রকট করে তুলেছে।

রাহুল জোশী: অমিতজি, আমরা কয়েক দিন বিহারে ছিলাম। তো সেখানে দেখা গিয়েছে তেজস্বী ও তাঁর সঙ্গে যে জোট লড়াই করছে, তাঁরা এবার কিছু আসনে কুশওয়াহার ভোট কাটতে চাইছে?

অমিত শাহ: কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

রাহুল জোশী: শেষবার ৪০-এর মধ্যে ৩৯টি ছিল। এবার সেখানে কিছুটা কাটছাঁট হতে পারে, যেমনটা আপনি রাজস্থানের বিষয়ে বললেন?

অমিত শাহ: না, আমি বিহারের ক্ষেত্রে তো কোনও সমস্যা দেখছি না।

রাহুল জোশী: তাহলে আপনি কি আত্মবিশ্বাসী যে, আপনারা বিহারে পুনরাবৃত্তি করছেন?

অমিত শাহ: হ্যাঁ।

রাহুল জোশী: এক বার দক্ষিণ ভারতের দিকে যাওয়া যাক। এই সময় আপনারা সেখানে অনেকটাই সময় কাটিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বহুবার সেখানে গিয়েছিলেন। আপনি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে বহু বার সেখানে দৌড়াদৌড়ি করেছেন। আপনার বক্তব্যও অনেক বড় ছিল। সুতরাং আমরা যদি সমগ্র দক্ষিণ ভারতকে ধরি, তাহলে ১২৯-১৩০টি আসনের মধ্যে আপনি কতগুলি আসন দেখতে পাচ্ছেন?

অমিত শাহ: দেখুন, দক্ষিণের চারটি রাজ্যকে একত্রিত করে আমরা কংগ্রেসের থেকে এগিয়ে যাব।

রাহুল জোশী: সব মিলিয়ে মোট কতগুলি আসন? কেরল-তামিলনাড়ুতে কি খাতা খুলবে?

অমিত শাহ: আমরা খুব ভাল ভাবে নির্বাচন লড়েছি। খাতা তো অবশ্যই খুলবে। কিন্তু তুমুল প্রতিযোগিতা থাকায় আসন হিসেব করতে একটু সমস্যা হচ্ছে।

রাহুল জোশী: দুই রাজ্যেই। অর্থাৎ তামিলনাড়ুর পাশাপাশি কেরলেও খুলবে?

অমিত শাহ: হ্যাঁ কেরলেও।

রাহুল জোশী: তেলঙ্গানা এবং অন্ধ্রকে কীভাবে দেখছেন আপনি?

অমিত শাহ: অন্ধ্রপ্রদেশে আমাদের জোট রয়েছে। আমরা খুব ভাল ভাবে নির্বাচনে লড়াই করছি। এটা তো মাত্র শুরু। আর তেলঙ্গানায় আমরা লোকসভায় খুব ভাল পারফরম্যান্স দেব। সেখান থেকেই এখনও পর্যন্ত আমরা সর্বোচ্চ আসনে জিতব।

রাহুল জোশী: অমিতজি, আর একটা প্রশ্ন। এই নির্বাচনের আগে দুই মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কেজরিওয়ালজি গ্রেফতার হয়েছেন, তিনি তো এখনও মুখ্যমন্ত্রী পদেই রয়েছেন। হেমন্ত সোরেনজিও জেলেই আছেন। তাই আজ ইডি-র এই গ্রেফতারির সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তো আপনি এটা কীভাবে দেখেন?

অমিত শাহ: না দেখুন, সুপ্রিম কোর্টের সামনে ইডি ব্যাখ্যা করবে। কিন্তু আমি বলতে চাই যে, ১৯টি সমনের পরও হাজিরা দেননি। যদি প্রথম সমনেই আসতেন, তাহলে নির্বাচনের ছয় মাস আগেই গ্রেফতার হয়ে যেতেন। ১৯ বার সমন পাঠানো হলেও হাজিরাই দেননি।

রাহুল জোশী: এখন তাঁর স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়ালজি বলছেন যে, তাঁকে ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে না। সেখানে তাঁকে ঠিক করে রাখা হচ্ছে না। এটা তো তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে?

অমিত শাহ: দেখুন ভাই, তিহাড় জেল দিল্লি সরকারের অধীনে রয়েছে। যার মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালজি নিজেই। তাহলে কি তিনি নিজেই নিজেকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছেন?

রাহুল জোশী: উনি বলছেন যে, ডিজি প্রিজনস দিল্লি পুলিশকে রিপোর্ট করেন?

অমিত শাহ: একেবারেই না। প্রিজন সরাসরি দিল্লি সরকারকেই রিপোর্ট করে।

রাহুল জোশী: এতে আপনার কিছু…

অমিত শাহ: কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

রাহুল জোশী: ইভিএম নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত এসেছে। বিরোধীরা বহু বছর ধরে ইভিএম নিয়ে কথা বলছেন। প্রতিবারই স্লোগান তুলেছেন যে, বিজেপি ইভিএমের কারণেই নির্বাচনে জিতে আসছে। এখন আপনারা ওয়ান নেশন-ওয়ান ইলেকশনের কথা বলছেন। এঁরা ইভিএম নিয়ে কথা বলছেন। তো আপনারা কি ওয়ান নেশন- ওয়ান ইলেকশন করতে পারবেন?

অমিত শাহ: প্রথমে একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিই। রাহুল গান্ধিজি যা-যা বলেন, সেটা একেবারেই চিন্তাভাবনা করে বলেন না। ইভিএমের কারণে আমরা জিতলে তেলঙ্গানায় আমরা হেরেছি কেন? কেনই বা তামিলনাড়ুতে হেরেছি, কেন বছরের পর বছর ধরে কেরলে হেরে যাচ্ছি? কেন হেরে গেলাম হিমাচলে? বাংলায় কেন হেরে গেলাম? নাহলে রাহুল গান্ধির এটা স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত যে, ইভিএম-এর ফলাফলে তাঁরা জিতলেও শপথ নেবেন না। জিতলে তো তাঁরা নতুন জামাকাপড় পরে শপথ নিয়ে নেন আর হারলে ইভিএম-এর উপর দোষ চাপিয়ে দেন।

এটা কেমন ধরনের রাজনীতি? জিতলে ইভিএম ঠিক আছে, আর হেরে গেলে ইভিএম-এ গন্ডগোল। দেশের মানুষ কি এসব বোঝেন না? আসলে এটা দেশের মানুষ বোঝেন। কিন্তু এত বড় একটি দল কেন তাদের নেতার উপদেষ্টাকে পরিবর্তন করে না, সেটা দেখেই আশ্চর্য হয়ে যাই। দূর থেকে দেখি আর অবাক লাগছে। আচ্ছা বাদ দিন, এটা ওই দলের প্রশ্ন। ওয়ান নেশন-ওয়ান ইলেকশন আমাদের ইস্তেহারের বিষয় আর আমরা তা বাস্তবায়িত করার জন্য সব রকম চেষ্টা করব।

রাহুল জোশী: তাহলে আগামী নির্বাচন ২০২৯-এ ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন হবে?

অমিত শাহ: দেখুন, এটা সংসদ নির্ণয় করবে। তবে ভারতীয় জনতা পার্টি অবশ্যই চেষ্টা করবে এবং তা সফলও করবে।

রাহুল জোশী: অমিতজি, এই প্রসঙ্গে থেকে সরে গিয়ে কিছু আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও কথা বলা যাক। ওয়াশিংটন পোস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তারা বলেছে যে, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা RAW মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু সন্ত্রাসবাদীকে হত্যা করার চেষ্টা করছে। আর তারা এ-ও দাবি করেছে যে, এটা মোদি সরকারের একটা অন্ধকার দিক?

অমিত শাহ: দেখুন, এই ধরনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত নয়। কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এজেন্সিগুলিই তার জবাব দেবে। কোনও সরকার কূটনৈতিক পদ্ধতিতে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করলে আমরা তার জবাব দেব।

রাহুল জোশী: নিজ্জর হত্যা নিয়ে কানাডাতেও আলোচনা হয়েছিল?

অমিত শাহ: সংবাদমাধ্যমে এই ধরনের কোনও অভিযোগ উঠলে কোনও গুরুতর প্রশ্ন ওঠে, এমনটা আমি বিশ্বাসই করি না।

রাহুল জোশী: গার্ডিয়ান-এ এই সম্পর্কিত আর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ভারত পাকিস্তানে ২০ জন সন্ত্রাসবাদীকে হত্যা করেছে বলে দাবি উঠেছে। তারপর সেক্ষেত্রে RAW-এর কথাও উঠে এসেছিল যে, পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গিদের হত্যা করার জন্য কিছু লোককে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

অমিত শাহ: ভারত সরকার সেখানকার রাষ্ট্রদূতকে (হাইকমিশনার) তলব করেছে এবং তাঁর কাছ থেকে এর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এমনকী আমাদের তরফ থেকেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

রাহুল জোশী: তাহলে এই বিষয়ে আর কোনও পদক্ষেপ?

আরও পড়ুন – ‘যত ভোট, তত গাছ!’ প্রচারের নতুন-নতুন বার্তায় রোজ নজর কাড়ছেন দেব, দেখুন

অমিত শাহ: না… এর উত্তর আসার পরে আরও আলোচনা হবে।

রাহুল জোশী: অমিতজি আপনি তো অনেক দৌড়াদৌড়ি করছেন। আপনি আজ তিনটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে এখানে এসেছেন। এরপর আপনি আমাদের এতটা সময় দিলেন। শুনলাম আগামিকালও আপনি তিনটি রাজ্যে যাচ্ছেন। আপনি কীভাবে এই ধরনের একটি শাস্তিমূলক রুটিন ম্যানেজ করেন? বেশ কয়েক মাস ধরেই তো করছেন?

অমিত শাহ: এটা অনেক বছরের অভ্যাস ভাই। আমি যখন একজন কর্মী ছিলাম, তখন আমি ছোট স্তরে কাজ করতাম। সেই সময়ও প্রচুর দৌড়াদৌড়ি হত। সেটা ছিল রাজ্যের জন্য। এখন সেটা দেশের কাজেই করতে হচ্ছে।

রাহুল জোশী: আপনি তো রীতিমতো বিরোধীদের ঘুম উড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিখ্যাত। আপনি কী নিজে একটু ঘুমাতে পারেন?

অমিত শাহ: আমি কখনওই নেতিবাচক চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করি না। আমি আমার দলের জয়ের জন্য কাজ করছি। হ্যাঁ…এতে যদি কারও ঘুম উড়ে যায়, তাহলে সেটা তাঁদের সমস্যা। দলকে জেতাতে, দলের জন্য কাজ করতে হবে। এটা আমার দায়িত্ব এবং আমি এটা খুব ভাল ভাবেই পালন করি।

রাহুল জোশী: অমিতজি, আপনি আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন, আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন। আপনি সবরমতীর তীরে এসে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বললেন। এর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

অমিত শাহ: ধন্যবাদ, রাহুলজি।