Kolkata Cop Who Was Hit On His Eye During Nabanna Abhijan Protest

Nabanna Abhijan: ‘পুলিশদের তো প্রতিনিয়ত দোষ দেওয়া হয়, আজ আমি কাকে দোষ দেব?’ প্রশ্ন নবান্ন অভিযানে আহত সার্জেন্ট দেবাশিষের স্ত্রীর

কলকাতা:  সেদিন ছিল ২৭ অগাস্ট। সেদিন ছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা নবান্ন অভিযান। সেদিন স্ট্র্যান্ড রোডে ডিউটি পড়েছিল ট্র্যাফিক সার্জেন্ট দেবাশিস চক্রবর্তীর। সেদিন-ই ছিল দেবাশিস-দেবারতীর ছেলের পাঁচ বছরের জন্মদিন। সেদিন-ই বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে চোখ ফেটে যায় দেবাশিসের… ছেলের জন্মদিনের জন্য নানা আয়োজন করা ছিল… নিমেষে সব ওলটপালট!

পুলিশের গাড়িতে থাকাকালীনই আক্রান্ত হন বছর ৩৭-এর কলকাতা পুলিশের পূর্ব বিভাগের সাইবার সেলের ইনচার্জ দেবাশিস। নবান্ন অভিযানের সময় স্ট্র্যান্ড রোডের কাছে কর্তব্যরত ছিলেন তিনি। আচমকাই পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়া শুরু হয়। প্রথম ইটটিই তাঁর চোখে গিয়ে লেগেছিল। সরাসরি। গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে। সঙ্গে সঙ্গে অঝোরে রক্ত পড়তে শুরু করে চোখ থেকে। শঙ্কর নেত্রালয়ে ভর্তি করানো হয় দেবাশিসকে। স্ত্রী দেবারতীও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গে যুক্ত। দেবাশিস প্রথমে স্ত্রীকেই ফোন করেন। জানান সব। তড়িঘড়ি হাসপাতালে ছুটে আসেন দেবারতী। জানা যায়, পুলিশের তরফ থেকে হয়তো তাঁকে হায়দরাবাদে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে, কারণ তিনি বাঁ চোখে আর দেখতে পাবেন কি না, সেই নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বিহ্বল দেবারতীর ভাষায়,” আমি জানি না কী হয়েছিল। ওর তো মাথা খুব ঠান্ডা। ওর চোখ খুব ক্ষতিগ্রস্ত। ওকে হায়দরাবাদে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার কথা হচ্ছে। ওরা সবসময় একরাশ ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজ করে যায়।”

ক্ষুব্ধ-আহত দেবারতী প্রশ্ন তোলেন, ” কত লোকে পুলিশকে নিয়ে কত কথা বলে। কিন্তু আমরা, স্ত্রীরা জানি, আমাদের স্বামী-রা কত বড় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলে। আমরা অন্য কোন-ও গ্রহ থেকে আসিনি। পুলিশদের-ও পরিবার আছে। আমরাও মানুষ। পুলিশদের তো প্রতিনিয়ত দোষ দেওয়া হয়। কিন্তু আজ যখন আমার স্বামী আহত, আমি কাকে দোষ দেব? আমি জানি এটা ওর কাজ, কিন্তু যদি ওর চোখটা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়?”

২৭ তারিখ ছিল দেবারতী-দেবাশিসের পাঁচ বছরের ছেলের জন্মদিন। ছোট্ট ছেলেটি সন্ধে পর্যন্ত ভেবেছিল, বাবা কাজে গিয়েছে, ফিরে আসবে, জন্মদিনের কেক কাটা হবে। মা-ও যে কেন বাড়ি নেই! বারবার জানলার বাইরে দেখছিল ছোট্ট ছেলেটা! এদিকে মা তখন হাসপাতালে। স্বামীর কেবিনের বাইরে বসে আনচান করছেন মধ্য তিরিশের দেবারতী। বারবার প্রার্থনা করছেন, স্বামী যেন ঠিক হয়ে যায়।

দেবাশিসের সঙ্গে ওই গাড়িতে থাকা আরও কয়েক জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন ইটের আঘাতে। এই ঘটনায় ময়দান থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। লালবাজার সূত্রে খবর, ধৃত মহিলার নাম রিঙ্কু সিং, তিনি মহেশতলার বাসিন্দা। এ ছাড়া, সুব্রত দাস নামের আরও এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’জনকেই পুলিশ গত দু’দিন ধরে খুঁজছিল। ওই এলাকার ক্যামেরায় যাদের দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে এই দু’জন ছিলেন। তাদের হামলাকারী হিসাবে চিহ্নিত করে সমাজমাধ্যমে ছবি পোস্ট করেছিল কলকাতা পুলিশ। সাধারণ মানুষের কাছে ওই হামলাকারীদের সন্ধান চাওয়া হয়েছিল। ঘটনার দু’দিনের মাথায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।