সংস্থায় যোগ দেওয়ার চার মাসের মধ্যেই মৃত্যু তরুণীর (Representative Image)

Pune Employee Death: সংস্থায় যোগ দেওয়ার চার মাসের মধ্যেই মৃত্যু তরুণীর! অতিরিক্ত কাজের চাপ আর হাড়ভাঙা খাটনিকেই দায়ী করলেন মা

পুণে: মাত্র মাস চারেক আগেই বিগ ফোর অ্যাকাউন্টিং ফার্মগুলির মধ্যে অন্যতম EY পুণেতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন বছর ছাব্বিশের তরুণী। কিন্তু আচমকাই এক মর্মান্তিক পরিণতিতে প্রাণ খোয়াতে হল তাঁকে। পরিবারের অভিযোগ, ওই সংস্থায় যোগ দেওয়ার চার মাসের মধ্যেই কাজের বিস্তর চাপ ছিল ওই তরুণীর উপর। সেই কারণেই তাঁর এহেন পরিণতি।

কেরলের তরুণী অ্যানা সেবাস্তিয়ান পেরায়িল পেশায় একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তাঁর মা অনিতা অগাস্টিনের অভিযোগ, অ্যানার উপর রীতিমতো হাড়ভাঙা খাটনির কাজের দায়িত্ব ছিল। কন্যাকে হারিয়ে আপাতত তিনি সংস্থার ভারতীয় বস রাজীব মেমানিকে ই-মেল করেছেন। চিঠিতে অতিরিক্ত কাজকে গৌরবান্বিত করায় সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেছেন অনিতা। সেই সঙ্গে কাজের জায়গায় তাঁর মেয়েকে যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তার সঙ্গে কিন্তু কোম্পানির মানবাধিকার মূল্যবোধগুলির কোনও মিলই ছিল না।

আরও পড়ুন– রাস্তা তৈরিতে খরচ ১,৯০০ কোটি, কিন্তু ৮০০০ কোটি টাকার টোল আদায় কেন করা হল? জবাব দিলেন গড়করি

২০২৩ সালে সিএ পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন ওই তরুণী। এরপর চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তিনি ইওয়াই পুণেতে একজিকিউটিভ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগ, সংস্থার প্রত্যাশা পূরণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হত তাঁকে। আর এই প্রচেষ্টার ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছিল তাঁর শরীর এবং মনের উপর। অ্যানার মা অনিতার বক্তব্য, অফিসে যোগ দেওয়ার পর থেকেই উত্তেজনা, অনিদ্রা এবং মানসিক চাপের শিকার হয়েছিলেন অ্যানা। কিন্তু কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছিল। আসলে বিশ্বাস ছিল যে, কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ই সাফল্যের পথ।

আরও পড়ুন- এক বছর মেয়াদি FD-তে ৮.৫৫ শতাংশ হারে সুদ! বন্ধন ব্যাঙ্কের দারুণ অফার

অনিতা আরও দাবি করেন যে, “অতিরিক্ত কাজের চাপের জেরে বহু কর্মীই পদত্যাগ করেছেন। এদিকে অ্যানার বস তাঁকে বলেছিলেন যে, কাজে লেগে থাকতে হবে আর টিমের প্রত্যেকের মত পরিবর্তন করতে হবে। এমনকী, অ্যানার ম্যানেজার কখনও কখনও ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীনও মিটিং রিশিডিউল করতেন। শুধু তা-ই নয়, দিনের শেষেও অ্যানার উপর কাজের বোঝা চাপানো হত। যার ফলে মানসিক চাপের শিকারও হতে হত তাঁকে। আবার এক অফিস পার্টিতে কোম্পানিরই এক সিনিয়র লিডার মজার ভঙ্গিতে অ্যানাকে বলেছিলেন যে, ওই ম্যানেজারের তত্ত্বাবধানে কাজ করা খুবই কঠিন হবে। দুর্ভাগ্যবশত এটাই বাস্তব হয়ে গিয়েছিল। যা থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেননি অ্যানা।”

আরও পড়ুন– বিয়ের আগেই অন্তঃসত্ত্বা, গর্ভপাতের জন্য দাবি করেছিলেন ৭৫ লক্ষ টাকা! দক্ষিণী এই অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবনে আজও সঙ্গী বিতর্ক

মেয়ের কাজের সময় নিয়েও অভিযোগ রয়েছে অনিতা অগাস্টিনের। তাঁর দাবি, রাতেও কাজ করতে হত অ্যানাকে। এমনকী সপ্তাহান্তেও কাজ করত সে। দম ফেলার সময়টুকু পর্যন্ত থাকত না অ্যানার কাছে। একটি ঘটনার কথা স্মরণ করে অনিতা বলেন, “অ্যানার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার একবার রাতে ওঁকে কাজ দিয়ে বলেছিলেন, সেটা শেষ করতে হবে পরের দিন সকালেই। ফলে বিশ্রামের সুযোগটুকু পেত না ও। যখন নিজের উদ্বেগের কথা বলতে যেত, তখন ওকে বলা হত, ‘তুমি রাতে কাজ করতে পার। আমরা শুধু এটুকুই করতে পারি’।”

মেয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন অ্যানার মা। বলে চলেন, “প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরত অ্যানা। এমনকী পোশাক পরিবর্তন না করেই শুয়ে পড়ত অ্যানা। এরপরেও নিস্তার ছিল না। ফোনে ঢুকত একের পর এক মেসেজ। আরও রিপোর্ট চেয়ে পাঠাত অফিস থেকে। ও চেষ্টা করে যেত নিজের সেরাটা দিয়ে। আসলে ও ছিল লড়াকু। কিছুতেই হার মানতে চাইত না। আমরা ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও ও শিখতে চাইত আর নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চার করতে চাইত। আর এই ভয়াবহ চাপের জেরেই সব শেষ হয়ে গেল।”

এবার যাতে সংস্থার টনক নড়ে, সেই বিষয়েও জোর দিলেন অনিতা। তাঁর দাবি, কাজের সংস্কৃতির দিকে আলোকপাত করা উচিত ওই সংস্থার। তবে তাঁর আরও অভিযোগ, অ্যানার শেষকৃত্যে যোগ দেননি ইওয়াই পুণের কর্মীরা। যদিও অ্যানার মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়। তবে মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই অ্যানা চেস্ট কনস্ট্রিকশনের কথা বলেছিল। কিন্তু কার্ডিওলজিস্টের কাছে যাওয়া হয়, এমনকী ইসিজি-ও করা হয়। সবই ঠিক ছিল। অবশেষে ২০ জুলাই মৃত্যু হয় অ্যানার। তবে এ নিয়ে তাঁর কোম্পানির তরফ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।