বুধবার রাতের তাণ্ডবের পর আর জি কর হাসপাতাল চত্বর৷

RG Kar hospital clash ‘চোখের সামনে মাথা ফাটল ওসি-র! ইট, কাচের বোতল হাতে আরজি করের সামনে ওরা কারা?’

কলকাতা: রাত তখন সাড়ে বারোটা৷ আর জি করের নির্যাতিতার ধর্ষণ, খুনের বিচার চাই৷ এই স্লোগান তুলে শ্যামবাজারের দখল নিয়েছেন হাজার হাজার মহিলা, পুরুষ৷ রয়েছেন আর জি কর হাসপাতালেরই প্রচুর চিকিৎসক, পড়ুয়া, নার্স৷ সব ঠিকঠাকই চলছিল, হঠাৎ খবর এল আর জি কর হাসপাতালে ঢুকে পড়েছে একদল বহিরাগত৷ চলছে ইচ্ছামতো ভাঙচুর, তাণ্ডব৷

খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে এগোতে থাকলাম আর জি কর হাসপাতালের দিকে৷ কিন্তু কিছুটা এগোতেই দেখলাম রাস্তা অবরুদ্ধ৷ কোনওমতে রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট ধরে হাসপাতালের সামনে যখন পৌঁছলাম, তখন সেখানে রীতিমতো উন্মত্ত তাণ্ডব চলছে৷ হাসপাতালের সামনের রাস্তাতেও উদভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করছে মানুষ, চলছে ইটবৃষ্টি৷ পুলিশ, সংবাদমাধ্যম, প্রতিবাদী চিকিৎসক-আক্রমণের হাত থেকে কাউকেই বাদ দেওয়া হচ্ছে না৷ যারা তাণ্ডব চালাচ্ছে, তাদের তুলনায় তখন পুলিশের সংখ্যাও হাতেগোনা৷ প্রাণ বাঁচাতে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিক একটি বাড়িতে আশ্রয় নিলাম৷ বাইরে থেকে তখনও কানে আসে ভাঙচুরের শব্দ, চিৎকার৷

আরও পড়ুন: গভীর রাতে কারা ঢুকল আরজি করে? পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র? তছনছ এমার্জেন্সি বিভাগ

কিছুক্ষণ বাদে পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে যখন বেরিয়ে এলাম, ততক্ষণে লালবাজার থেকে আরও বিপুল সংখ্যক বাহিনী পাঠানো হয়েছে ঘটনাস্থলে৷ বেলগাছিয়া থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত আর জি কর রোডের দখল নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে পুলিশ৷ কিন্তু তখনও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, কাচের বোতল ছোড়া হচ্ছে৷ চোখের সামনেই দেখলাম মানিকতলা থানার ওসি দেবাশিস দত্তের মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে৷ আর জি কর হাসপাতালের দু পাশের রাস্তা থেকে তখন আরও বহিরাগত ভিড় জমাতে থাকে৷ কিছুক্ষণ আগে যারা পুলিশের তাড়া খেয়ে শ্যামবাজারের দিকে পালিয়ে গিয়েছিল, তারাও ফিরে এসে পুলিশকে লক্ষ্য করে ফের ইট ছুড়তে থাকে৷

রাত দুটো নাগাদ ঘটনাস্থলে চলে আসেন কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েল৷ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দেন নগরপাল৷ এর পরই কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে শুরু করে পুলিশ৷ বাহিনী সংখ্যাও বাড়ানো৷ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন কমিশনার৷

প্রায় ঘণ্টা তিনেক ধরে চলতে থাকা খণ্ডযুদ্ধ কিছুটা থামার পর আর জি কর হাসপাতালের ভিতরে ঢোকেন নগরপাল৷ তখন আর জি কর হাসপাতালের ভিতরে উল্টে পড়ে রয়েছে পুলিশের গাড়ি৷ আর জি কর হাসপাতালের সামনের রাস্তায় খালের উপরেও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়৷ রাত প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ শান্ত হয় পরিস্থিতি৷ আর জি কর হাসপাতেল ভিতরে তখন লন্ডভন্ড অবস্থা, তছনছ হয়ে গিয়েছে জরুরি বিভাগ৷ যে কয়েকজন রোগীর আত্মীয় সেখানে ছিলেন, আতঙ্কে তখন তাঁরা কাঁটা হয়ে রয়েছেন৷ হাসপাতালের কর্মীরাও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না৷ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে কারা এসে হাসপাতালের ভিতরে বাইরে এমন তাণ্ডব চালাল, তা খুঁজে বের করুক পুলিশ৷

(লেখক নিউজ ১৮ বাংলার সাংবাদিক, বুধবার রাতে আর জি কর হাসপাতালে তাণ্ডবের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন৷)