Rahul Gandhi at Cobbler Shop: নিজের হাতে শিখলেন জুতো সেলাই! মুচির সঙ্গে খেলেন কোল্ড ড্রিঙ্কস, ফের মানুষের কাছাকাছি রাহুল গান্ধি

উত্তরপ্রদেশ:  ‘‘যেন মনে হল আমার এই ছোট্ট গুমটিতে ঈশ্বর নেমে এসেছেন’’৷ পেশাগত ভাবে মুচি, রামচেতের গলায় তখনও ঝরে পড়ছিল অবিশ্বাস! সত্যিই কি তাঁর দোকানে এসেছেন রাহুল গান্ধি৷ নিজের হাতে তাঁর কাছে শিখেছেন তাঁর-ই কাজ? গত শুক্রবারের সেই মুহূর্তগুলো যেন এখনও অবিশ্বাস্য ঠেকছে ষাটোর্ধ্ব রামচেতের কাছে৷

গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংক্রান্ত একটি মানহানি মামলার শুনানিতে উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরের সাংসদ-বিধায়ক আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছেন কংগ্রেস নেতা তথা রায়বরেলির সাংসদ রাহুল গান্ধি৷ কাজ মিটে যাওয়ার পরে পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে দিয়েই ফিরছিলেন দিল্লি৷ হঠাৎই, বিধায়কনগর ক্রশিংয়ের কাছে থেমে যায় তাঁর কনভয়৷

সেই ক্রশিংয়ের পাশেই তখন তাঁর ছোট্ট গুমটি দোকানে বসে জুতো সেলাই করছিলেন রামচেত৷ গত ৪০ বছর ধরে এটাই তাঁর পেশা৷ এই গুমটি দোকানই তাঁর ধ্যানজ্ঞান৷ জুতোর সারানোর মাঝে নিজে টুকটাক চটি-চপ্পল-জুতো বানিয়েও থাকেন৷ সে সবই যত্ন সহকারে সাজানো ছিল তাঁর ছোট্ট দোকানে৷

আরও পড়ুন: দেশের নতুন ৩ ফৌজদারি আইনের সংশোধন চাইছে রাজ্য! এবার আলোচনা বিধানসভায়

রাস্তার মাঝে হঠাৎ কনভয় দাঁড়িয়ে পড়ায় প্রথম চোটে একটু অবাকই হয়েছিলেন রামচেত৷ ভাবলেন নিশ্চই কোনও বড়লোক বা নেতার গাড়িটারি হবে৷ তাই এক ঝলক ওই দিকে তাকিয়েই ফের নিজের কাজে মন দিলেন৷

তাঁর সম্বিৎ ফিরল রাহুল গান্ধির প্রশ্নে৷ ‘‘এই চপ্পল আর জুতোগুলো কি আপনি বানিয়েছেন?’’, রামচেত তখনও যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, তাঁর সামনে রাহুল গান্ধি দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং তিনিই তাঁকে প্রশ্নটা করছেন৷

পরনে আকাশি পোলো টি-শার্ট, কালো ট্রাউজার্স এবং একজোড়া স্যান্ডল৷ রাহুল বসে পড়লেন রামচেতের দোকানে৷ প্রাথমিক থতমত অবস্থা কাটিয়ে ততক্ষণে কংগ্রেস সাংসদের প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করেছেন রামচেত৷

আরও পড়ুন: লক্ষ্য হোক ব্যক্তি স্তরে ‘শূন্য দারিদ্র’! বিকশিত ভারতকে সামনে রেখে সব রাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক নরেন্দ্র মোদির

নিউজ ১৮ –এর প্রতিনিধিকে সেই দিনের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে রামচেত বলেন, ‘‘উনি আমায় জিজ্ঞেস করলেন, আমি কী করে জুতো সারাই৷ তারপর কিছু বলার আগেই একটা চপ্পল হাতে তুলে নিলেন, আর আমায় সেখানে বললেন যে, কী করে জুতো সেলাই করি৷ আমিও দেখালাম ওঁকে৷ তারপর কোল্ড ড্রিঙ্ক খাবেন কি না জিজ্ঞেস করলাম৷ উনি খেলেন৷’’

রামচেত জানান, রাহুল গান্ধি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছেন, তিনি এই জুতো সারাই ও বিক্রি করে মাসে কত টাকা রোজগার করেন৷ রামচেত তাঁকে জানিয়েছেন, ৫ থেকে ৬ হাজারের মতো৷ যাতে সারা মাসের সংসার খরচটুকুও তাঁর পুরোটা ওঠে না৷ রাহুল গান্ধির কাছে সাহায্যও প্রার্থনা করেছেন তিনি৷ রাহুল গান্ধিও তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি তাঁকে সাহায্য করবেন এবং সংসদে তাঁদের মতো মানুষের কথা তুলে ধরবেন৷

রামচেত জানান, রাহুল গান্ধির সঙ্গে দেখা হওয়া, তাঁর কাজ নিয়ে সাংসদের সঙ্গে কথা বলা এবং একসঙ্গে দু’জনের কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়ার মুহূর্ত তাঁর আজীবন মনে থাকবে৷ তিনি বলেন, ‘‘ওঁর কাছ থেকে আমি বেশি কিছু আশা করি না৷ ওঁরা বড় মানুষ৷ নানা রকমের কাজকর্ম নিয়ে থাকেন৷ আমাদের মতো ছোটখাটো মানুষের কথা ওঁদের কি আর মনে থাকবে! তবে আমার যেটা সবচেয়ে ভাল লেগেছে, সেটা হল উনি আমার কাজকে, আমার পেশাকে সম্মান দিয়েছেন, আমার এই ছোট্ট গুমটিতে আমার পাশে বসে জুতো সারাই করতে একফোঁটাও দ্বিধা করেননি ৷’’

রামচেতের কথায়, ‘‘গত ৪০ বছর ধরে মুচির কাজ করছি৷ আর এই প্রথম আমার মনে হল, আমার কাজটা ছোট নয়! আর আমার এই মনে হওয়ার জন্য রাহুল গান্ধিই দায়ী৷’’