নশিপুর আখড়ার রথ

Rath Yatra 2024: নশিপুর আখড়ার পাঁচটি রথ টানা হবে আজ‌ও! দুটো কাঠের, দুটো পিতল ও একটি রুপোর রথ

মুর্শিদাবাদ: মুর্শিদাবাদের নশিপুর আখড়ার মোট পাঁচটি রথ পরিক্রমা করে। দুটো কাঠের, দুটো পিতলের ও একটি রুপোর রথ পরিক্রমা করে। ২৫৫ বছরের প্রাচীন নবাবের জেলা মুর্শিদাবাদের লালবাগের নশিপুর আখড়ার রথ। এই রথযাত্রার মূল আকর্ষণ রুপোর রথ। নবাবি আমলে হাতির পিঠে রুপোর রথে করে জগন্নাথদেব যেতেন মাসির বাড়ি অর্থাৎ জগৎ শেঠের বাড়ি। সে সবই আজ ইতিহাস। ১১৬৮ বঙ্গাব্দে স্বামী রামানুজের শিষ্য লছমন দাস ও মনসরাম দাস ধর্ম প্রচারের জন্য মুর্শিদাবাদে এসে নশিপুরে এক আখড়া স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে রথযাত্রার সূচনা করে। সেই প্রথা মেনে আজও আয়োজিত হচ্ছে প্রায় ২৫৫ বছরের প্রাচীন নশিপুর আখড়ার রথযাত্রা।

আরও পড়ুনঃ রথে চেপে জগন্নাথ দেব চললেন মাসির বাড়ি মায়াপুর ইসকন মন্দিরে 

পুরীতে এবছর ৫২বছর পরে বিরল যোগ পড়েছে। অনুষ্ঠিত হচ্ছে দু’দিন ধরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। পুরীর নিয়ম কে গুরুত্ব দিয়ে মুর্শিদাবাদের এই প্রাচীন রথে পালিত হয়। দু’ দিন ধরে চলে উৎসব। নশিপুর আখড়ার রুপোর রথে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে দেখতে জেলা এবং জেলার বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ ভিড় জমান নসিপুরে। রথের দিন বিকেলে সোনার জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা রুপোর রথে চেপে পথে নামেন। পথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে সন্ধ্যার আগেই আখড়ায় ফিরে আসেন। রথযাত্রা ঘিরে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়।

আখড়া কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক ১৭৬০সালে মোহন্ত লছমনদাস আচারি জাফরাগঞ্জ আখড়ার প্রতিষ্ঠা করেন। তবে আখড়ায় রথযাত্রা উৎসব শুরু হয় পরবর্তী মোহন্ত চতুর্ভুজদাস আচারির সময়ে। তিনি দু’টি কাঠের রথ তৈরি করে রথযাত্রা উৎসব শুরু করেন। সেই সময়ে রথের দিন আখড়া থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ধনকুবের জগৎ শেঠের বাড়িতে গিয়ে রথযাত্রা শেষ হত। জগৎ শেঠের বাড়িতে সাতদিন কাটিয়ে উল্টোরথের দিন বিকেলে জগ্ননাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে নিয়ে আখড়ায় ফিরে আসত রথ। ১৭৮৮সালে মোহন্ত গোপালদাস আচারির সময়ে আখড়ার রথ উৎসব আরও বড় আকারে হতে শুরু করে। তিনি দু’টি পিতলের রথ তৈরি করেন। চারটি রথেই নিম কাঠের জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা থাকতেন। আনুমানিক ১৮২৫সালে মোহন্ত ভগবানদাস আচারির সময়ে রুপোর রথ চালু হয়।

রাজস্থান থেকে কারিগর নিয়ে এসে রুপোর রথ তৈরি করান। হাতির উপরে উপবিষ্ট মাহুত রথটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রথের বাহন হাতি ও হাতির উপরে উপবিষ্ট মাহুত সোনার জলে পালিশ রুপো দিয়ে তৈরি। রথের দিন রুপোর রথে উপবিষ্ট হন সোনার জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। জাফরাগঞ্জ আখড়ার রথযাত্রা উৎসবে রুপোর রথ দেখতে তৎকালীন সময়ে নবাব ও স্থানীয় জমিদারদের আত্মীয় ও অতিথিরা আসতেন বলে শোনা যায়। আখড়ার রথযাত্রা উৎসব ঘিরে সাতদিন ধরে নসিপুরে গ্রামীণ মেলা বসত।

পরবর্তী সময়ে গঙ্গা ভাঙ্গনে নদী গর্ভে জগৎ শেঠের পুরনো বাড়িটি চলে গেলেও প্রাচীন প্রথা মেনে আজও প্রতিবছর রথ ও উল্টোরথের দু’দিন রুপোর রথ সহ জাফরাগঞ্জ আখড়ার পাঁচটি রথ জগৎ শেঠের পুরনো বাড়ির সামনে একটি মাঠে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ায় এবং সন্ধ্যার আগেই আখড়ায় ফিরে আসে। এখন রথযাত্রা উপলক্ষে সাতদিন ধরে গ্রামীণ মেলা না বসলেও রথ ও উল্টোরথের দু’দিন মেলা বসে।

কৌশিক অধিকারী