ধর্ষিতার রক্তবিন্দু থেকেই জন্ম নিক প্রতিবাদের রক্তবীজ

Reclaim the Night Origin: যৌন লাঞ্ছনা থেকে নৃশংস নারীঘাতক–বার বার মেয়েদের উপর হওয়া অপরাধের প্রতিবাদের হাতিয়ার ‘রিক্লেম দ্য নাইট’

অদ্ভুত এক আঁধারের মোকাবিলা করতে অন্ধকারকেই হাতিয়ার করল মেয়েরা৷ যে অন্ধকারকে তাঁদের ভয় পেতে শেখানো হয়েছে আজন্ম, তার সঙ্গেই যাপন বুধনিশিতে৷ পোশাকি নাম হতে পারে ‘রিক্লেম দ্য নাইট’ বা রাতকে জয় করা৷ কিন্তু এই পদক্ষেপের ডাকনাম হয়তো ‘আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি’৷ আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষিতার রক্তবিন্দু থেকেই জন্ম নিক প্রতিবাদের রক্তবীজ৷

যে বীজ বপন করা হয়েছিল গত শতকের সাতের দশকে৷ আলোকিত টর্চ হাতে মহিলারা হেঁটেছিলেন ইংল্যান্ডের লিডস, ইয়র্ক, ব্রিস্টল, ম্যাঞ্চেস্টার, নিউক্যাসল ব্রাইটন এবং লন্ডনের রাজপথে। তাঁদের আন্দোলন ছিল ইয়র্কশায়ার রিপার-এর বিরুদ্ধে। ১৯৭৭-এর নভেম্বর মাসের মধ্যে পিটার সাটক্লিফ, যে খুনি পরিচিত ‘ইয়র্কশায়ার রিপার’ নামে, নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল সাতজন মহিলাকে। তার শিকারের অধিকাংশই ছিলেন যৌনকর্মী। ১৯৮০ সালে পুলিশের জালে ধরা পড়ে এই পৈশাচিক হত্যাকারী। তত দিনে তার হাতে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জন মহিলার। এই ঘাতককে আরও আগেই গ্রেফতার করা যেত। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা, অকর্মণ্যতার অভিযোগ করেছিলেন ব্রিটিশ মহিলারা। তাঁদের প্রতিবাদ সোচ্চারিত হয়েছিল রাতদখলের ডাকে।

পথে নেমে পথের সাথীকে চিনে নেওয়ার এই পর্বের সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল আরও আগেই। মহিলাদের উপর যৌন লাঞ্ছনার প্রতিবাদে সাবেক পশ্চিম জার্মানির মহিলারা পথে নেমেছিলেন ১৯৭৭ সালেরই, ৩০ এপ্রিল। সংগঠিত প্রতিবাদীদের সঙ্ঘবদ্ধ সেই প্রতিবাদ ও আন্দোলনকে বলা হয়েছিল ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’। সাবেক পশ্চিম জার্মানি থেকে ইংল্যান্ড-ফিরিয়ে দেওয়া রাতকে ফের নিজেদের মুঠোবন্দি করেছেন মহিলারা। এর পর আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকো, ইতালির রোম-বিভিন্ন শহরে মহিলারা পা মিলিয়েছেন অন্ধকারকে জয় করে নেওয়ার নৈশ অভিযানে।

আরও পড়ুন : আর জি কর কাণ্ডের তদন্তে ২০ সদস্যের সিবিআই দল! গোটা বিষয় নজরবন্দি দিল্লির

এ বার সেই তালিকায় যোগ হল কলকাতা। শুধু কলকাতা বললে ভুল হবে। কলকাতা ছাড়িয়ে অন্যান্য জেলা, রাজ্য ছাড়িয়ে ভিনরাজ্য, সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশেও আজ মেয়েরা শামিল হারিয়ে যাওয়া রাতকে ফের ছিনিয়ে নিতে। ৩৬ ঘণ্টা টানা ডিউটির পর তাঁর নিজের কর্মস্থান, রাজ্যের অন্যতম সরকারি চিকি‍‍ৎসা প্রতিষ্ঠান আরজি কর হাসাপাতালে একা ঘুমিয়ে পড়ে নাকি ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতার’ পরিচয় দিয়েছিলেন তরুণী ডাক্তার! আসলে কে কতটা ভুল করছেন, তার হিসেব নিতেই স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে রাজপথে সৃষ্টিশক্তি৷