ধীরে ধীরে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে রাশিয়ায়, রইল ভ্রমণের খুঁটিনাটি Photos: Siddhartha Sarkar

Russia Travel: ইউরোপ-এশিয়ার সুন্দর দেশগুলির থেকে কোনও অংশে কম নয়; ধীরে ধীরে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে রাশিয়ায়, রইল ভ্রমণের খুঁটিনাটি

কলকাতা: সেই ২০০০ সাল থেকে যেন রাশিয়ায় হু-হু করে বেড়েছে পর্যটন। আজ সেটা রীতিমতো ফুলেফেঁপে উঠেছে। আর রাশিয়ার সৌন্দর্য ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলির সৌন্দর্যের তুলনায় কোনও অংশে কম নয়। এমনকী, এই দেশ পর্যটকদের জন্য নিরাপদও বটে। দুর্ধর্ষ আকর্ষণীয় স্থানগুলির কারণে রাশিয়া এখন পর্যটকদের স্বপ্নের গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

রাশিয়া ভ্রমণের মূল আকর্ষণগুলি কী কী?

ইউরোপীয় কিংবা এশিয়ার সংস্কৃতি নয়, রাশিয়ার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সেখানে অনন্য সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেছে। আর রাশিয়া ভ্রমণে গেলে রোমাঞ্চের স্বাদও উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। আসলে রাশিয়া হল অতুল্য বৈচিত্র্যের দেশ। রাশিয়ার কান্ট্রিসাইড ভ্রমণে গেলে এই দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের স্বাদ মিলবে। আর রাশিয়ার শীতের মরশুমের সৌন্দর্যের কথা আলাদা করে বলে দিতে হয় না। ট্রোয়িকা রাইড (Troika rides) এবং দুর্ধর্ষ তুষার-ভাস্কর্য থেকে শুরু করে ভাতরুষ্কা (Vatrushka) রেন্টালও পর্যটন মানচিত্রে যোগ করা যেতে পারে।

সাংস্কৃতিক পর্যটন:

প্রায় ৫০০ বছর আগে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল রাশিয়া। সেই তখন থেকেই পড়শি দেশগুলির তুলনায় ভিন্ন এই দেশের সংস্কৃতি। এই দেশে গ্রামের দিকে এখনও স্লাভিক সংস্কৃতি এবং প্রাচীন ঐতিহ্য রয়ে গিয়েছে। আবার এই দেশের বনাঞ্চলে ইজবা বা লগ হাউজ দেখার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারবেন পর্যটকরা। গির্জা এবং বৌদ্ধমন্দিরগুলির প্রাচীরে লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাস। এই দেশের এশিয়ার দিকে রয়েছে উরাল পর্বত। দেশের শহরগুলিও সংস্কৃতির পীঠস্থান। ‘রাশিয়ান ব্যালে’-র কথাও কারোরই অজানা নয় ৷ তাই সুযোগ হলে ব্যালে শো দেখতে মিস করবেন না ৷

রোমাঞ্চকর পর্যটন:

রাশিয়ার সুদূর পূর্বে রয়েছে দুর্ধর্ষ আগ্নেয়গিরি আর নদী। যে নদীগুলিতে মেলে লাল রঙা স্যামন। রাশিয়ার তাইগায় তুষারাবৃত অঞ্চলে মেরুপ্রভার হাতছানি, সঙ্গে Husky Sleds-এর দৌড় এক অনন্য আকর্ষণ। ককেশাস অঞ্চলে দুঃসাহসী পর্বতারোহীরা ইউরোপের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এলব্রুস জয়ের স্বাদ পেতে পারেন। আবার সমুদ্র তীরবর্তী শহরতলি সোচি আকর্ষণ করবে স্কি-প্রেমীদের। রয়েছে লেক বৈকালের মতো বিশাল হ্রদও ৷ বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন আর গভীরতম মিষ্টি জলের হ্রদ বৈকাল। আয়তনের দিক থেকেও এটি বৃহত্তম। এই হ্রদের অবস্থান রাশিয়ার সাইবেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায়। প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি এই বৈকাল হ্রদকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ তালিকায় স্থান দেয় ইউনেস্কো।

এথনিক পর্যটন:

রাশিয়ার শহরগুলি আশ্চর্যজনক ভাবে আধুনিকতার মোড়কে ঢাকা পড়েছে। অথচ এখানকার গ্রামীণ জীবন কিন্তু একদম আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। এমনকী, গ্রামাঞ্চলের মানুষদের খাদ্যাভ্যাসও একই রকম রয়েছে।

পারিবারিক ভ্রমণ ও পর্যটন:

রাশিয়ার দুটি মূল শহর – মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ। যা ভ্রমণের জন্য অসামান্য। তবে সাদা তুষারের চাদরে ঢাকা রাশিয়ায় শীতের মরশুমে গেলে আনন্দ উপভোগ করতে পারবে শিশুরা। জিঙ্গল বেলস সাউন্ডের সঙ্গে ট্রোয়িকা রাইডের মজা নিতে পারবে। এছাড়াও থাকবে আকর্ষণীয় নানা অ্যাক্টিভিটি।

ভ্রমণের আদর্শ সময়:

রাশিয়া বিশাল দেশ। যা ইউরোপ এবং এশিয়া – এই দুই মহাদেশের উপর দিয়ে বিস্তৃত। ফলে দেশের পূর্ব অংশের তুলনায় পশ্চিম অংশের আবহাওয়া থেকে শুরু করে ভৌগোলিক দৃশ্য, ঐতিহ্য, আচার সব কিছুই আলাদা। শীতের সময়টা এই দেশ বরফের চাদরে ঢেকে যায়। ফলে সেন্ট পিটার্সবার্গে পর্যটকের ঢল নামে। তবে পরিবার নিয়ে ঘোরার জন্য আদর্শ সময় হল সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবরের গোড়ার দিকটা। বরফের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে শীতের মরশুমই হল আদর্শ সময়।

রাশিয়ার সেরা গন্তব্য:

সেন্ট পিটার্সবার্গ (Saint Petersburg): রাজধানী মস্কোর থেকেও কয়েক গুণ বেশি সুন্দর এবং পর্যটকদের জন্য আদর্শ শহর এই সেন্ট পিটার্সবার্গ ৷ রাশিয়ায় বেড়াতে গেলে এই শহরে আপনাকে আসতেই হবে। জুন-জুলাই মাসে রাশিয়ায় ‘হোয়াইট নাইটস’-এর জন্য বিখ্যাত সেন্ট পিটার্সবার্গ ৷ অর্থাৎ এই সময় প্রতি দিন মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্যই রাত বা অন্ধকার হয় ৷ এই সময় রাশিয়ায় এলে মধ্য রাতে নেভা নদীতে ‘ব্রিজ ওপেনিং’ দেখতে বোট রাইড করাটা মাস্ট ৷

ভেলিকি নভগরদ (Veliky Novgorod): সুন্দর এই শহরের ইতিহাসও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। মনে করা হয়, এটা রাশিয়ার সবথেকে প্রাচীন শহর। এখানে রয়েছে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলি। সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ট্রেনে চেপে পৌঁছনো যাবে এই শহরে।

মস্কো (Moscow): রাশিয়ার রাজধানী শহর মস্কো। ক্রেমলিন বা সেন্ট বেসিলস ক্যাথিড্রাল ভিজিট করাটা যেমন মাস্ট তেমনি এই শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থাও অত্যন্ত সহজ এবং সুন্দর। মস্কোর মেট্রো স্টেশনগুলি বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মেট্রো স্টেশনের তালিকায় পড়ে ৷ সোভিয়েত আমলে তৈরি এই মেট্রো রেল ব্যবস্থা পর্যটকদের মুগ্ধ করে ৷

ভ্লাদিমির এবং সুজদাল (Vladimir and Suzdal): ট্রেন আর বাসে চেপে একদিনেই পৌঁছনো যাবে এই শহরে। সুজদালে এক রাত থেকে যেতেই হবে।

কাজান (Kazan): তাতারস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী। ভলগা এবং কাজাঙ্কা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহর পর্যটকদের জন্য দুর্দান্ত ৷

সোচি (Sochi): এই শহরে রয়েছে সুন্দর সমুদ্র-সৈকত। রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক আকর্ষণীয় স্থানও। আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন পর্যটকেরা।

নিঝনি নভগরদ (Nizhny Novgorod): মস্কো এবং কাজানের মাঝামাঝি পড়ে এই ঐতিহাসিক শহরটি।

মুরমানস্ক (Murmansk): মেরুপ্রভা বা অরোরার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতেই হবে এই শহরে। সেই সঙ্গে কাচের ডোমে ক্যাম্পিং করার মজা আস্বাদন করতে পারবেন পর্যটকেরা।

সেন্ট পিটার্সবার্গ
সেন্ট পিটার্সবার্গ

ফ্লাইট বুকিং– দিল্লি থেকে মস্কো এরোফ্লটের সরাসরি বিমান পরিষেবা থাকলেও সেই ফ্লাইটের টিকিট কাটা খুব সহজ কাজ নয় ৷ রাশিয়া যেতে তাই দুবাই (এমিরেটস), আবু ধাবি (এতিহাদ এয়ারওয়েজ) কিংবা দোহা (কাতার এয়ারওয়েজ) ভারতীয়দের জন্য সেরা ট্রানজিট অপশন ৷ এ ছাড়া আজারবাইজান এয়ারলাইন্সে করে বাকু হয়ে কিংবা উজবেকিস্তান এয়ারলাইন্সের বিমানে তাশখন্দ হয়েও মস্কো বা সেন্ট পিটার্সবার্গ পৌঁছনো সম্ভব ৷ সেক্ষেত্রে বিমানের টিকিট তুলনায় বাজেটের মধ্যে পেতে পারেন ৷

রাশিয়া ট্রাভেল টিপস- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরেই নানারকম ‘Sanction’-এর সমস্যায় পড়তে হয়েছে রাশিয়াকে ৷ এর ফলে সে দেশে ভ্রমণ করতে পর্যটকদের কিছুটা সমস্যা হলেও খুব কঠিন কাজ একেবারেই নয় ৷ এর জন্য এই কয়েকটা টিপস রইল আপনাদের জন্য ৷ হোটেল বুকিংয়ের জন্য Ostrovok.ru ওয়েবসাইট এবং রাশিয়ায় ট্রেন বুকিংয়ের জন্য russianrailways.com ব্যবহার করতে পারেন ৷ রাশিয়ার হাই-স্পিড ‘Sapsan’ ট্রেনও এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বুক করতে পারবেন ৷ এ ছাড়া সঙ্গে রাখুন রাশিয়ান রুবল (Russian Ruble) বা যথেষ্ট পরিমাণে ক্যাশ ৷ কারণ Visa, Mastercard কিংবা American Express-এর কোনও ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডই রাশিয়ায় ব্যবহার করতে পারবেন না এই মুহূর্তে ৷ তাই বিমানে ওঠার আগে রাশিয়ান রুবল কিনে নিন গোটা ট্যুরের খরচের জন্য ৷