গ্রীষ্মের মরশুম নানা শারীরিক সমস্যা নিয়ে আসে। এই সময়ে আমাদেরও অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন। লক্ষ্য করে থাকবেন অনেক সময়ে রোদের তাপে ঘোরাঘুরির পরে আচমকা মাথা ঘুরতে থাকে এবং গা বমি বমি লাগার সমস্যা বাড়ে।মানুষ এইসময় বেশি বেশি করে জল পান করেন। কিন্তু হঠাৎ করে খুব বেশি ঠান্ডা জল খেলে তা অন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে কারণ এমন পরিস্থিতিতে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে কার্বনেটেড পানীয় পান না করার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এই ধরনের পানীয়গুলিতে খুব বেশি চিনি থাকে।কিন্তু এই গরমে শুধু জল পান করলে কোনও লাভ হবে নেই। সম্ভব হলে জলে এক চিমটি লবণ যোগ করতে পারেন নির্দিষ্ট নিয়মে।এতে আপনার শরীর কিছুটা উপকার পেতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এক চিমটি লবণ আসলে হাইড্রেশনের জন্য কী আদৌ কার্যকরী হয় এবং কী ভাবে।আজকাল অনেকেই হাইড্রেশনের জন্য ইচ্ছেমতো লবণ-জল খাওয়া শুরু করেন। এই বিষয়ে আমরা ক্রীড়া পুষ্টিবিদ নেহাল সতীশ প্যাটেলের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। নেহালের মতে, লবণ মিশ্রিত জল পান করা গরমে দুর্দান্ত উপকারী প্রমাণিত হতে পারে, তবে এর পরিমাণ কম হওয়া উচিত এবং সারাদিন শুধু লবণের জলই পান করা কখনই উচিত নয়। এর উপকারিতা রয়েছে ঠিকই, তবে `ব্লাড প্রেশারের রোগী এবং কিছু স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের এটি থেকে দূরে থাকা উচিত।গরমে ঘামের কারণে আমাদের শরীর থেকে লবণ ও জল দুটোই বেরিয়ে যেতে থাকে হু হু করে। শরীরে সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতোই প্রভূত প্রয়োজন ইলেক্ট্রোলাইট। ইলেক্ট্রোলাইট শরীরের তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।শরীরে যদি উপযুক্ত পরিমাণ ইলেক্ট্রোলাইট না থাকে তবে শরীরের পেশীগুলিও সঠিকভাবে কাজ করে না। এমন অবস্থায় অতিরিক্ত ব্যায়াম করতে গেলে শরীর ক্লান্ত হতে শুরু করে এবং দুর্বলতা দেখা দেয়। এমন অবস্থায় মাথা ঘোরা, লো বিপি এবং কম সুগারের মতো সমস্যা দেখা দেবে।একইভাবে, যখন শরীর ক্লান্ত বা ডিহাইড্রেটেড হয়, শুধুমাত্র লবণ এবং চিনি দিয়ে জল দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি প্রচুর ঘামেন বা গরমে ব্যায়াম করতে যান, তাহলে এক্ষেত্রে লবণ জল পান করতে পারেন।গরমে একইসঙ্গে আপনি ডাবের জল এবং কিছু অন্যান্য ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় পান করতে পারেন । কিন্তু আপনি যদি কোনও প্রক্রিয়াজাত পানীয় গ্রহণ করেন এই সময়ে তবে মনে রাখবেন যে আপনাকে অবশ্যই এর লেবেলটি পড়তে হবে। হয়তো আপনাকে ইলেক্ট্রোলাইটের পরিবর্তে চিনি দেওয়া হচ্ছে কোনও কোনও ড্রিঙ্কে। সতর্ক হতে হবে এই বিষয়ে।শরীরে সোডিয়ামের চাহিদা পূরণ করে: আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি থাকলে তার জন্যও লবণ প্রয়োজন। এক চিমটি লবণ মিশ্রিত একগ্লাস জল পান করা আমাদের সোডিয়ামের মাত্রাকে উল্লেখ্যযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত ঘামের কারণেও সোডিয়ামের মাত্রা কমে যায় এবং জলে লবণ মেশালে তা তৎক্ষণাৎ দ্রুত শরীরের হাইড্রেশন লেভেল উন্নত করে।লবণ শরীরের খিঁচুনি ভাব কমায়: আপনি হয়তো শুনে থাকবেন, অতিরিক্ত লবণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু বাস্তবে, কম লবণও স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ হতে পারে। আপনার শরীরে যত সমস্যা দেখা দেয় তার অন্যতম কারণ হতে পারে শরীরে সোডিয়ামের অভাব।কম সোডিয়ামের কারণে পেশীতে ক্র্যাম্প এবং খিঁচুনি হয়। এটি ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, নুন-জল খেয়ে আপনার শরীরের সোডিয়াম স্তর বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।শক্তির স্তর বজায় রাখার জন্য লবণ প্রয়োজন: অনেক সময় এক চিমটি লবণের অভাবে শরীরের এনার্জি লেভেল কমে যায়। এমন পরিস্থিতিতে, আপনি যদি অ্যাথলেটিক্সে আগ্রহী হন, তবে আপনার জন্য হাইড্রেশন স্তর বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে নোনা জল উপকারী প্রমাণিত হতে পারে।কাদের লবণ জল পান করা উচিত? এটি একটি হেলথ হ্যাক এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে বা যাদের প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় তাদের জন্য লবণ-জল অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। যদি একজন ব্যক্তি বেশি ব্যায়াম না করেন, তাহলে তাঁর লবণ জল পান করা উচিত নয়। কিন্তু যাঁদের রক্তচাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, তাঁদের সীমিত পরিমাণে লবণ গ্রহণ করা উচিত।শর্তত্যাগ : উপরোক্ত পরামর্শগুলো এক বা একাধিক বিশেষজ্ঞের মতামত হিসেবে নেওয়া। নিউজ 18 বাংলা এর দায় নেয় না। তবে আপনার খাদ্যতালিকায় কোনও বড় পরিবর্তন করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
