Tag Archives: Bengali Mountaineer

Mountaineering: বাংলার পর্বতারোহণের ইতিহাসে নাম লেখালেন সোনারপুর আরোহীরা, জয় করলেন গুপ্তপর্বত

কলকাতাঃ তোমাদের পানে চাহিয়া বিস্ময়ের সীমা নাই। অতীতের বিখ্যাত একটি উক্তি একটু বদলে নিয়ে বললাম, ওদের উদ্দেশে। হ্যাঁ, ওরা সবাই আমাদের ঘরের বা পাশের বাড়ির ছেলেমেয়েরা। রুদ্র সত্য নৈতিক দেবাশিস জুনিয়র এবং আরও অনেকে, যারা মাঝে মাঝে ঘর ছেড়ে হিমালয়ের গোপনপুরে যায়। আপনারা চেনেন। সমতলে ওরা সহজ সরল বিনয়ী। এবং ওরাই দুর্গমের দেশে দুর্দমনীয় অকুতোভয় অপ্রতিরোধ্য। হেন অ্যাডভেঞ্চার ব্রিগেডকে থামাবে কে? থামার কথাও নয়। এই ক’বছরে আরোহণের মানচিত্রে নিত্যনতুন ফ্ল্যাগ পোস্ট করে ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলেছে আরোহীর তরুণ অভিযাত্রীরা। যা আপাত অসম্ভব তাঁকে বারবার সম্ভব করে গোটা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অসম্ভব শব্দটাকেই ওরা মুছে দিয়েছে ‘আরোহী’ তথা আরোহণের অভিধান থেকে। বছর দুই আগে জোড়া পর্বতশিখর ‘ইন্দ্রাসন’ ও ‘দেওটিব্বা’য়, গতবছর কিস্তোয়ারের ব্রহ্মা শিখরে, এবছর পিরপাঞ্জাল –এর গোপন চূড়ো গুপ্তপর্বতে। হিমালয়ে ইতিহাস রচনায় একেবারে টাটকা হ্যাটট্রিক! প্রশ্ন হ’ল, এরপর কী?

আরও পড়ুনঃ বাংলার পর্বতারোহীদের জন্য দারুণ খবর, গুপ্তপর্বত সামিটে সফল সোনারপুর আরোহীর সদস্যরা

একেবারে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা গুপ্তপর্বত আর গুপ্ত রইল না। আরোহীর Magnificient Nine তার শিরে বিজয়পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে দুদিন আগে। প্রথম মানুষের পদচিহ্ন আঁকা হল সেখানে। এই নিউজ ঢের আগে ব্রেক হয়ে গেছে, আপনারা সব জানেন। কিন্তু গল্প তো এখানে শেষ নয়। যারা ভাবছিলেন এবারের মতো থ্রিল শেষ, তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি, আরও দুটো দিন গা-ছমছম ব্যাপারটা উপভোগ করুন। কাহিনি এখনও অনেকটা বাকি। আরে, ভুলে গেছেন? এবারেও তো জোড়া পর্বতের লক্ষ্য ছিল। শুধু গুপ্তপর্বত নয়, সঙ্গে শিকরবেহ্‌ ছিল যে। আসলে শিকরবেহ্‌ সামিট করার লক্ষ্যেই প্রথম মন দিয়েছিল রুদ্ররা, সেইমতো রুট ওপেন হয়ে গিয়েছিল অনেকটা। শিকরবেহ্‌’র ডাইনে বাঁয়ে সামিট-মুখি কোনও ঠিকঠাক গিরিশিরা খুঁজে না পেয়ে ওরা প্রায় ৩,৫০০ ফুটের Face Wall Climb করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই প্ল্যানমাফিক অন্তত ২০০০ ফুট Rope Fixing সারা হয়েছিল। পরিস্থিতি বেশ অনুকূল-ই মনে হচ্ছিল; কিন্তু ওই যা হয়, এক আচমকা তুষারধস সবকিছু ওলটপালট করে দিল। দড়িদড়া, পোল-পিটন, ইত্যাদি দু-চার মিনিটের মধ্যে উধাও। এ ঘটনা ঘটেছে গুপ্তপর্বত অভিযানের আগে। বলাবাহুল্য, আরোহী shocked হলেও বিপর্যস্ত হয়নি। তাদের চিন্তায় তখন প্ল্যান-বি কাজ করছে।

এখনকার ব্রেকিং নিউজ হচ্ছে, ওরা একদিনের বিশ্রামে বসে আবার মতলব ভেঁজেছে এবং শিকরবেহ্‌ সামিটের উদ্যোগ নিয়েছে নতুন করে। না, এবারেও কোনও গিরিশিরা নয়, Face Wall Climb হবে। কেননা গিরিশিরা আর সামিটের মাঝখানে বেশ কিছু barrier summit আছে। সেগুলি negotiable নয়। কাজেই, সেই ৩৫০০ ফুটের খাড়াই পর্বতের মহড়া! এমতো সব ঠিকঠাক ছিল। বাধ সাধল দুই শেরপা। দুজনেরই মনে অদ্ভুত এক ভৌতিক আতঙ্ক চেপে বসেছে। ওদিকে গেলে নাকি দেবতা বিরূপ হবে, তাদের মাথায় সর্বনাশ নেমে আসবে। শেরপা সরদার ফুরসেম্বা লম্বা সময় লেকচার দিয়ে, হাজার বুঝিয়ে, খানিক ওঝাগিরি করে কোনওমতে তাঁদের যাত্রায় শামিল করতে পেরেছে। দেখা যাক। যাওয়া যে হচ্ছে, এটা স্থির নিশ্চিত। গতকাল খানিকটা রুট ওপেন হয়েছে, বাকিটা আজ। আজ সারাদিন লেগে যাবে। ৩৫০০ ফুট Rope Fixing কম কথা নয়। তাছাড়া, অন্যান্য সমস্যা আছে। রেশন ফুয়েল কমে এসেছে। বিকেল হলে নালাগুলো নদী হয়ে যায়, নেতৃত্ব খতিয়ে দেখছে সব। দ্রুত সিদ্ধান্তে বেসক্যাম্পে নেমে গেছে দেবাশিস, তুহিন ও শেরপা তেনজিং। একটা সুখবর হল, দলে একজন নতুন সদস্য যোগ দিচ্ছেন, ডাঃ অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। তিনি নতুন বেসক্যাম্প ম্যানেজার। কাল তিনি ট্রানজিট ক্যাম্পে ছিলেন, আজ বেসক্যাম্পে পৌঁছবেন। সত্যরূপ তাঁকে রিসিভ করতে গেল।

সব ঠিকঠাক চললে (চলবে তো বটেই) আগামীকাল আরও একটা ইতিহাস, আরও একটা বিজয়পতাকা উড়বে আকাশে, সূর্যকরোজ্জ্বল বাতাস বয়ে যাবে আমাদের এই ভ্যাপসা গুমোট শহর বা শহরতলী জুড়ে। সঙ্গে থাকুন।