Tag Archives: India Mobile Congress

India Mobile Congress 2024: ২জি থেকে ৫জি-এর যাত্রাপথে কী কী পরিবর্তন দেখল ভারত? ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেসে তুলে ধরলেন আকাশ আম্বানি, দিলেন ২ প্রস্তাবও

মুম্বই: ২জি থেকে ৫জি, অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে ভারতের টেলিকম ইন্ডাস্ট্রি। ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেসে সেই যাত্রাপথকেই পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে বিশ্লেষণ করলেন রিলায়েন্স জিও ইনফোকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান আকাশ আম্বানি। তিনি বললেন, “বিশ্বমানের পরিষেবা ১.৪৫ মিলিয়ন ভারতীয়র প্রত্যাশা মেটাচ্ছে।“

ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কমিউনিকেশন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, কমিউনিকেশন প্রতিমন্ত্রী ডঃ চন্দ্রশেখর প্রেমমাসানি ডিওটি-এর চেয়ারম্যান নীরজ মিত্তল এবং ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহকর্মী ও বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা। তাঁদের অভিবাদন জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন আকাশ আম্বানি।

বক্তব্যের শুরুতেই টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান আকাশ আম্বানি। তিনি বলেন, “নমস্কার। দূরদর্শী এবং ডায়নামিক লিডার শ্রদ্ধেয় শ্রী নরেন্দ্র মোদিজিকে, তাঁর ঐতিহাসিক তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতের মোবাইল কংগ্রেসের উপস্থিত হওয়ার জন্য অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অভিনন্দন জানাই।“

আরও পড়ুন  Q2 Results: টেলিকম ও রিটেল খাতে ব্যাপক বৃদ্ধি, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুনাফা করল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ

এরপর প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করে আকাশ আম্বানি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার দূরদর্শী নেতৃত্বে, ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেস আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। হয়ে উঠেছে ডিজিটাল উদ্ভাবন ও সহযোগিতার এক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ।“

আকাশ আম্বানির কথায়, “শিল্প এবং উদ্ভাবনের প্রতি আপনার উৎসাহের কারণে, ভারত সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে। নতুন ভারত, মানে মোদিজির ভারত, এখানে ব্যবসার ধরনধারনও আমূল বদলে গিয়েছে। সরকার এবং ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে অভূতপূর্ব সমন্বয় তৈরি হয়েছে, যার কারণে ১.৪৫ বিলিয়ন ভারতীয়ের চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণে বিশ্বমানের পরিষেবা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।“

নিজেকে তরুণ ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে তুলে ধরেন আকাশ আম্বানি। যুবসমাজের সঙ্গে মোদির গভীর যোগযোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যুবসমাজের সঙ্গে আপনার অসাধারণ সংযোগ এবং অসম্ভব বলে মনে হওয়া লক্ষ্য অর্জনে অনুপ্রাণিত করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।“আকাশ আম্বানির কথায়, “এই জন্যই আমরা হিন্দিতে বলি, ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’। আন্তর্জাতিক দর্শকদের জন্য এই শব্দবন্ধের ইংরেজি অনুবাদও করে দেন তিনি, ‘মোদি মেকস এভরিথিং পসিবল।“

রিলায়েন্স জিও ইনফোকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান বলেন, “গোটা বিশ্ব আজ আশ্চর্যচকিত হয়ে গিয়েছে। যে দেশ আট বছর আগে ২জি গতিতে এগোচ্ছিল, সেই দেশ আজ ৫জি-এর হাইওয়ে ধরে মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, ভারত ৬জি-এর ক্ষেত্রে আরও ভাল রেকর্ড গড়বে।“

টেলিকম সেক্টরে ভারতের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন আকাশ আম্বানি। তিনি বলেন, “যে দেশ মোবাইল ব্রডব্যান্ড গ্রহণের ক্ষেত্রে ১৫৫তম স্থানে ছিল, সেই ভারত আজ বিশ্বের বৃহত্তম ডেটা বাজারে পরিণত হয়েছে। এক সময় যে দেশে হাতে গোনা কয়েকটি ইউনিকর্ন ছিল, এখন সেই দেশই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ইউনিকর্ন সেন্টার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।আজ বিশ্বের ১ নম্বর ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম হয়ে উঠেছে ইউপিআই।“

আকাশ আম্বানির কথায়, “গোটা বিশ্বের মধ্যে একমাত্র ভারতেই মোবাইল ডেটার দাম সবচেয়ে কম, কিন্তু ইন্টারনেটের স্পিড বেশি। ভারতের মাথাপিছু ডেটা ব্যবহার ৩০ জিবিরও বেশি, যা গোটা বিশ্বের মধ্যে রেকর্ড।“কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়। ভারতের ডিজিটাল রূপান্তরের এই কাহিনি অন্তর্ভুক্তিও এক উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মনে করেন আকাশ আম্বানি। তিনি বলেন, “মোদিজির নেতৃত্বে উদ্ভাবন আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিকে সম্ভব করেছে। তিনি ডিজিটাল প্রযুক্তিকে গণতান্ত্রিক রূপ দিয়েছেন। উন্নয়নের সুবিধাকে পৌছে দিয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে।“

আরও পড়ুন– দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের ফলাফলের পরে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি কী কী? দেখে নিন বিশদে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সম্বোধন করে আকাশ বলেন, “আপনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে। ভারতে এখন আর শুধু ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ নয়, বরং ‘সবকা ডিজিটাল সাথ সবকা ডিজিটাল বিকাশ’-ও হচ্ছে। ভারতের ডিজিটাল বিপ্লব আজ দেশের প্রত্যন্ত কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে।“

ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেসে আকাশ আম্বানি জানান, জন ধন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৫৩০ মিলিয়নেরও বেশি ভারতীয়কে আর্থিক ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই সংখ্যাটা যে কী বিপুল তা একটা উদাহরণের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, এই ৫৩০ মিলিয়ন সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কানাডার মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। আনন্দের বিষয় হল, এই অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের মধ্যে ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি মহিলা রয়েছেন।“ তাঁর কথায়, “এই অসাধারণ পরিবর্তনে জিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পেরেছে বলে আমি গর্বিত।“

এরপর ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেসে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং ডেটা নিয়ে দুটি প্রস্তাব পেশ করেন আকাশ আম্বানি। তিনি বলেন, “এআই হল মানুষের তৈরি সবচেয়ে বৈপ্লবিক সরঞ্জাম। এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি দিক, সমাজের প্রতিটি স্তর, এবং অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রকে আমূল পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। আগামীদিনে এআই-এর হাত ধরেই বিপুল প্রাচুর্য ও দক্ষতার যুগ আসতে চলেছে।“

আকাশ মনে করেন, এআই-এর মাধ্যমে ভারত সম্পূর্ণভাবে রূপান্তরিত হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে উতপাদন খাত, যার মধ্যে SMEs-ও রয়েছে, যাতে ভারত গোটা বিশ্বের জন্য নতুন যুগের কারখানা এবং পরিষেবা কেন্দ্র তৈরি করবে। এরপর রয়েছে কৃষি খাত, যাতে কৃষকরা কম জল ব্যবহার করেও অধিক ফলন করতে পারবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত। সকলের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং পড়ুয়াদের জন্য সেরা শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে হবে এআই-এর মাধ্যমে।

২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এআই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন আকাশ। তাঁর কথায়, “ভারতকে অবিলম্বে এআই-কে কাজে লাগাতে হবে। ‘আত্মনির্ভর’-এর সামগ্রিক কৌশলের মাধ্যমে।“ তিনি আরও বলেন, “আমরা জিও-তে ইতিমধ্যেই এই কাজ শুরু করেছি। আমরা চাই, মোবাইল ব্রডব্যান্ডের মতোই এআই-এর সুবিধা প্রত্যেক ভারতীয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। আমরা এআই-কে গণতান্ত্রিক করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং শক্তিশালী এআই মডেল ও পরিষেবা সাশ্রয়ী মূল্যে সকলের কাছে পৌছে দিতে চাই। এই লক্ষ্যেই ন্যাশনাল এআই ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।“

আরও পড়ুন- টাটা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হলেন নোয়েল টাটা, নয়া দায়িত্ব পেয়ে কী বললেন রতন টাটার সৎ ভাই?

আকাশ আম্বানির দ্বিতীয় প্রস্তাব হল, ২০২০ সালের ডেটা সেন্টার নীতির খসড়া দ্রুত লাগু করা হোক। তাঁর মতে, “ভারতের ডেটা ভারতের ডেটা সেন্টারে থাকবে।“ আকাশ বলেন, “যে সব ভারতীয় কোম্পানি এআই এবং মেশিন লার্নিং ডেটা সেন্টার তৈরি করতে প্রস্তুত তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছাড়-সহ প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দেওয়া হোক। ভারতের মোবাইল কোম্পানি এবং তাদের সমৃদ্ধ ইকোসিস্টেম এই জিনিস তৈরি করতে পারে, যা উন্নত দেশগুলিসহ গোটা বিশ্বের প্রয়োজন মেটাবে।“

আকাশের দাবি, “ভারতকে গ্লোবাল এআই নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে হলে দ্রুত গতিতে বিশাল সংখ্যায় দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। চাকরির জগত বদলে যাবে। তবে অনেক নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হবে। যেমন কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় হয়েছিল।“আকাশ বলেন, ভারত শুধু মোবাইল উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেবে আমরা এআই-এর শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করব, যাতে এক সংযুক্ত এবং বুদ্ধিদীপ্ত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা যায়, যা প্রত্যেক ভারতীয়ের জন্য সত্যিকার অর্থে রূপান্তরকারী হবে।“ শেষে ‘জয় হিন্দ, জয় ভারত’ বলে বক্তব্য শেষ করেন আকাশ।