Tag Archives: Kolkata Bookfair

Buddhadeb Bhattacharjee & Nandan Complex: মেঘলা আকাশের নীচে পড়ে রইল তাঁর প্রিয় কলকাতা, নন্দন চত্বর ও বইমেলা, এক ২৩ শ্রাবণের সকালে চিরঘুমে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

কলকাতা: প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাহিত্যচর্চা এবং সাহিত্যপ্রেম সর্বজনবিদিত৷ দেশবিদেশের সাহিত্য ছিল তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী৷ ফিকশনের তুলনায় ননফিকশনই তাঁর পছন্দ ছিল বেশি৷ বাংলায় অনুবাদ করেছেন একাধিক বিশ্বসাহিত্য৷ কলকাতা বইমেলা ছিল পছন্দের গন্তব্য৷ ব্যস্ততা থেকে সময় বার করে বইমেলায় যেতে ভুলতেন না৷ অনুভব করতেন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ৷

কলকাতা বইমেলার সঙ্গে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পৃক্ত৷ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চেয়েছিলেন কলকাতা ময়দানই থাকুক বইমেলার ঠিকানা৷ তাঁর আরও অভিলাষের মতো এই ইচ্ছেও ছিল অধরা৷ বইপ্রেমীরা ভুলতে পারবেন না ১৯৯৭-এর বইমেলার কথা৷ সে বছর অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়েছিল বইমেলা৷ বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন বই বিক্রেতা এবং প্রকাশকরা৷

অগ্নিকাণ্ডের তিন দিন পর আবার শুরু হয়েছিল বইমেলা৷ বইপার্বণের এই ফিনিক্স উত্থানের নেপথ্যে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ তিনি তখন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী৷ এই ঘটনা নিয়ে নন ফিকশন ‘খান্ডবদাহন’ লিখেছিলেন সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যাল৷ তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলদেরও তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তবুও একজনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছিলেন ‘কাঁটায় কাঁটায়’ সিরিজের স্রষ্টা। সেই একজন হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বইপ্রেমী বুদ্ধ তখন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী৷ কীভাবে তিনি গ্রন্থব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সে কথা তুলে ধরেছেন নারায়ণ স্যান্যাল৷ তিনি ‘খাণ্ডবদাহন’ উৎসর্গ করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেই৷

প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নাম জড়িয়ে আছে নন্দন প্রেক্ষাগৃহর সঙ্গেও৷ বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম এই পীঠস্থান কার্যত ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মানসসন্তান৷ ১৯৭৮-এ বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পরই তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করেন। তার একটি ছিল কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে একটি শিল্প-নাটক-থিয়েটার কমপ্লেক্স তৈরি৷ সত্যজিৎ রায়কে চেয়ারম্যান করে গঠিত হয় একটি কমিটি। ১৯৭৯ থেকে শুরু হয় কমপ্লেক্সের কাজ। সত্যজিৎ রায়ের নামকরণ করা নন্দন চত্বর আজ বিশ্বনন্দিত৷ এক সময় এই প্রেক্ষাগৃহে নিয়মিত দেখা গিয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় নয়৷ বরং আদ্যন্ত সিনেপ্রেমী এবং নাট্যমোদী হিসেবে৷

আরও পড়ুন : ‘দুঃসময়’ থেকে ‘এই আমি মায়াকভস্কি’, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কলমে বার বার ঋদ্ধ বাঙালির নশ্বর চিন্তন ও মনন

বর্ষার মেঘলা আকাশের নীচে পড়ে রইল তাঁর প্রিয় কলকাতা৷ বইমেলার গন্ধ৷ নন্দন প্রেক্ষাগৃহের আলোছায়া৷ সব কিছু ফেলে এক ২৩ শ্রাবণের সকালে চলে গেলেন বু্দ্ধদেব ভট্টাচার্য৷