সকলেই চান অবসরের পরে নিজেদের আর্থিক ভিত মজবুত করতে। এর জন্য অনেক আগে থেকেই প্ল্যান করা প্রয়োজন। ভারতে সাধারণত ৬০ বছর বয়সে অবসর নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু কেউ যদি ভারতে ৪০ বছর বয়সে অবসর নিতে চান, তাহলে তাঁদের আগে থেকে কী পরিকল্পনা করা উচিত?অনেকেই যুক্তি দেন যে, এত তাড়াতাড়ি অবসর গ্রহণ করা বোকামি। যদি না একটি বিকল্প আয়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে। তাই ৪০ বছর বয়সে অবসর নেওয়া একটি সম্ভাব্য স্বপ্ন হতে পারে। একটি প্রাথমিক অবসর পরিকল্পনা চিত্রিত করতে freefincal রোবো উপদেষ্টা টুল ব্যবহার করা যেতে পারে।১. বর্তমান মাসিক খরচ, যা অবসরে অব্যাহত থাকবে – ৬০,০০০ টাকা ২. বর্তমান বছরের শেষে বয়স – ২৮ আর স্ত্রীর বয়স – ২৮ ৩. ৪০ বছর বয়সে অবসর, ফলে অবসরের জন্য হাতে সময় রয়েছে আরও ১২ বছর ৪. মাসিক বিনিয়োগ প্রতি বছর বাড়তে পারে – ১০%অনুমান: ১. ইক্যুইটি বিনিয়োগ থেকে প্রত্যাশিত ট্যাক্স-পরবর্তী রিটার্ন – ১০% ২. বর্তমান করযোগ্য স্থায়ী আয় থেকে প্রত্যাশিত কর-পরবর্তী রিটার্ন – ৬% ৩. বর্তমান করমুক্ত স্থায়ী আয় থেকে প্রত্যাশিত রিটার্নের হার – ৭% ৪. অবসর গ্রহণের আগে মুদ্রাস্ফীতি – ৭% ৫. অনুমান করা স্ত্রীয়ের আয়ু – ৯০ ৬. অবসরের সময় মুদ্রাস্ফীতি – ৬% ৭. অবসরের বছর (স্ত্রী ৯০ বছর বয়সে না পৌঁছানো পর্যন্ত) ৫০ ৮. অবসর গ্রহণের প্রথম বছরে মাসিক খরচ – ১,৩৫,১৩১ টাকাঅবসর গ্রহণের সময় NET কর্পাস প্রয়োজন (অনুমান করে টাকা বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করা হবে। এটি বর্তমান বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ মূল্য, অবসর-পরবর্তী বেনিফিট এবং অবসর-পরবর্তী আয়ের হিসাব করার পরে) ৫,৬৫,৮১,৭১৮ (৫.৬৫ কোটি) টাকা। ইপিএফ অথবা এনপিএস অবদান-সহ প্রাথমিক মাসিক বিনিয়োগের প্রয়োজন ১,৩৭,৫২২ টাকা।ব্যক্তির বয়স ২৮ বছর হলে বর্তমান খরচের প্রায় ৭৯X। যদি আমরা বর্তমান খরচ ৭% হারে বৃদ্ধি করি, তাহলে এটি ৪০ বছর বয়সে খরচের ৩৫ গুণ। এগুলি প্রধান নিয়ম হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয়। পৃথক ইনপুট-সহ একটি সঠিক গণনা করা উচিত। (২) x(বার্ষিক খরচ) এর পরিপ্রেক্ষিতে পোর্টফোলিওর আকার কেমন হওয়া উচিত যাতে ফায়ার/অবসরের পরে ৬০:৪০ বজায় রাখতে পারি (৩৫-৪০ এর মতো প্রাথমিক বয়সে)? কত বড় হতে হবে যাতে রিটার্নের ক্রম পরিচালনা করা যায়?”এর উত্তর বিষয়ভিত্তিক। কেউ কেউ বলবেন, ৫.৬ কোটি টাকা গণনা করা যাবে এবং ৬০% ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করা যাবে। এটা আমার মতে মূর্খতা হবে। যদি লক্ষ্যটি নিশ্চিত করা হয় যে, রিটার্নের ঝুঁকি হ্রাস করা হয়, তাহলে আমরা সুপারিশ করি যে মুদ্রাস্ফীতি সূচকযুক্ত আয় নিশ্চিত করা নিশ্চিত আয় বিনিয়োগের সঙ্গে কমপক্ষে আনুমানিক অবসরের মেয়াদের অর্ধেক (এই ক্ষেত্রে, ২৫ বছর)।এর জন্য প্রয়োজন ৪.৬ কোটি টাকা। সুতরাং এর অর্থ হবে মোট অবসরের ১১.৫ কোটি টাকা। সুতরাং এটি বর্তমান বার্ষিক ব্যয়ের প্রায় ১৬০X বা অবসর গ্রহণের সময় বার্ষিক ব্যয়ের ৭১ গুণ (মানে বর্তমান বয়স ২৮)।
অবসর জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে চাইলে মোটা টাকা হাতে রাখতে হবে। তার পরিকল্পনা করতে হবে আগে থেকেই। মাথায় রাখতে হবে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টাও। কারণ জিনিসপত্রের দাম ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা ছকতে হবে। এখন প্রশ্ন হল, কেউ যদি অবসর জীবনের জন্য ১২ বছরে ২ কোটি টাকা জমাতে চান, তাহলে কীভাবে বিনিয়োগ করবেন?ধরা যাক, একজন ব্যক্তির বয়স ৪৬ বছর। তিনি তাঁর মেয়ের পড়াশোনা, বিয়ে এবং অবসর জীবনের জন্য করা এসআইপি ৪০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা করার পরিকল্পনা করেছেন। মেয়ের শিক্ষার জন্য তাঁর ৮ বছরে ৪৫ লাখ টাকা এবং বিয়ের জন্য ১২ বছরে ৪০ লাখ টাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি অবসরের জন্য ১২ বছরে ২ কোটি চান। তিনি মাঝারি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত।বর্তমানে তাঁর মিউচুয়াল ফান্ড পোর্টফোলিওতে (মিড ক্যাপ, ফ্লেক্সি ক্যাপ, স্মল ক্যাপ ফান্ডের মিশ্রণ) ৪৫ লক্ষ টাকা আছে। ২.৫ কোটি টাকা আছে এমপ্লয়ি এবং টার্ম ইনস্যুরেন্সে। এমপ্লয়ি মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স এবং পারিবারিক চিকিৎসা টপ-আপ কভার আছে ৫ লক্ষ টাকার। হোম লোন শোধ করেন। এখন তিনি কি আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন?প্রাইমইনভেস্টরডটইন-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিদ্যা বালা বলছেন, মেয়ের পড়াশোনা এবং বিয়ের জন্য বর্তমান খরচ ধরা হয়েছে। আরও ৫ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি ধরতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষা ও বিয়ের জন্য ভবিষ্যতে খরচ হবে যথাক্রমে ৬৬.৫ লক্ষ এবং ৭১.৮ লক্ষ টাকা। নিত্য দিনের খরচ এবং অবসরকালীন মোট পরিমাণ ২ কোটি চাই, ফলে ১১ শতাংশ রিটার্ন ধরলে অষ্টম বছরেই মেয়ের শিক্ষা ও বিয়ের খরচ উঠে যাবে।তবে ১২ বছরে অবসরকালীন মোট পরিমাণ ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা কম হতে পারে। এই ঘাটতি মেটাতে এসআইপি বাড়িয়ে ৭৩ হাজার থেকে ৭৬ হাজার টাকা করা উচিত। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিনিয়োগের সময় সেক্টরের বৈচিত্র্য এবং বাজার মূলধন পর্যালোচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা বুঝে বিনিয়োগ করা আবশ্যক।
অবসর পরিকল্পনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। কিন্তু ভারতের মতো দেশে এই নিয়ে খুব বেশি চর্চা হয় না। ফলে পরিকল্পনায় গলদ থাকে। অবসরের পর ভুগতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টান পড়ে টাকায়। শুধু তো দৈনন্দিন খরচ নয়, শখ আহ্লাদের সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয়ও যোগ করতে হবে। তাই আগাম পরিকল্পনা না করলে মুশকিল।সমস্যা কখন হয়: বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবী অবসর পরিকল্পনাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না। বিশেষ করে অল্প বয়সে। পুরো ফোকাস থাকে স্বল্পমেয়াদি লাভের উপর। কিন্তু ৩০-৪০ বছর পর কি হবে, সেদিকে খেয়াল থাকে না। অবসর গ্রহণ অর্থাৎ ৬০ বছর বয়সের পর অন্তত ২০ বছর কীভাবে কাটবে তার পরিকল্পনা আগেই ছকে রাখতে হবে।প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ: অবসর পরিকল্পনা জটিল প্রক্রিয়া। কিন্তু সবচেয়ে জরুরি। করতেই হবে। অবসরের পর হাতে আর নিয়মিত অর্থ আসবে না। কিন্তু চাহিদা পূরণ করতে হবে। তাই প্রয়োজনীয়তাগুলো বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।সঞ্চয় এবং নগদ: এই কারণেই ‘সময়’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। যত বেশি সময় ধরে বিনিয়োগ বা সঞ্চয় করা হবে, তত বেশি রিটার্ন বা নগদ টাকা হাতে আসবে। মাথায় রাখতে হবে, মুদ্রাস্ফীতি অবশ্যম্ভাবী। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। তাই যত বেশি রিটার্ন হাতে থাকবে তত লাভ।মুদ্রাস্ফীতি: আজ জিনিসপত্রের যা দাম, কাল আরও বাড়বে। ৩০ বছর পর আরও। সোজা কথায় দাম বাড়তে থাকবে, কমবে না। তাই এমন জায়গায় বিনিয়োগ করতে হবে যার রিটার্ন মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে লড়তে পারে।ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ: আর্থিক বিশেষজ্ঞরা অবসর পরিকল্পনার জন্য ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন। তাঁদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ সবসময় লাভজনক। মুদ্রাস্ফীতিকে হারাতে পারে। শুধু স্থির আয়ের সম্পদে বিনিয়োগ করে রাখলে চলবে না।তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ: সবসময় তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ শুরুর পরামর্শ দেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ অল্প বয়সে বিনিয়োগ শুরু করতে হবে। তাহলে কমপাউন্ডিংয়ের লাভ তোলা যাবে পুরো মাত্রায়। বিনিয়োগের গায়ে বাজার অস্থিরতার আঁচ লাগবে না।