Tag Archives: Sukanta Bhattacharya

Buddhadeb Bhattacharjee Family: ‘পুরোহিত দর্পণ’-এর লেখকের পৌত্র যখন অন্য পথের পদাতিক, দিকশূন্যপুরে পাড়ি দিলেন কবি সুকান্তর ৯৮ তম জন্মদিনের এক সপ্তাহ আগে

কলকাতা: পুরোহিতবাড়ির সন্তান হয়েও চিন্তাধারায় ভিন্ন মেরুতে পা রেখেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কাকা ছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য-এ তথ্য দীর্ঘ চর্চিত৷ কিন্তু বুদ্ধ-চর্চায় যে প্রসঙ্গ তথা তথ্য তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত, তা হল তাঁর ঠাকুরদার কথা৷ ভট্টাচার্য পরিবারের শিকড় ছড়িয়ে ছিল ওপার বাংলায়৷ আজকের বাংলাদেশের ঢাকার মাদারিপুর জেলায়৷ সেখানে এই ব্রাহ্মণ পরিবারের প্রজন্মকালীন পেশা ছিল পৌরহিত্য৷

শুধু অন্নসংস্থানের উপায় নয়৷ পৌরহিত্য ছিল এই সাবেক পরিবারের কাছে কয়েক প্রজন্মের আধার৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর ঠাকুরদা কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতিতীর্থ ছিলেন কার্যত পুরোহিতদের আচার্য৷ শতবর্ষ আগে তিনি লিখেছিলেন ‘পুরোহিত দর্পণ’৷ পুজোপাঠের আচার আচরণ, নিয়মবিধি নিয়ে সে সময় দ্বিধাবিভক্ত পুরোহিত সমাজ৷ সমস্যা দূর করতে সঠিক নিয়ম ও আচরণ নিয়ে কৃষ্ণচন্দ্র লিখেছিলেন এই মানদণ্ড বই৷

প্রথমে এই বই প্রকাশিত হত ভট্টাচার্য পরিবারের প্রকাশনা সংস্থা ‘সারস্বত লাইব্রেরি’ থেকে৷ পরবর্তীতে ‘পিএম বাগচী এন্ড কোম্পানি’-র হাতে চলে যায় স্বত্ত্ব৷ কারণ কৃষ্ণচন্দ্র মনে করেছিলেন বড় সংস্থা থেকে প্রকাশিত হলে আরও অনেক বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছবে এই নির্দেশিকা বই৷ ১৯২২ সাল থেকে শুরু করে আজও একই প্রকাশনা সংস্থা থেকে ছাপা হচ্ছে পুরোহিত দর্পণ৷

তবে তারও আগে উনিশ শতকে প্রকাশিত হয়েছিল সৌরেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য রচিত ‘পুরোহিত দর্পণ’। প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৯১ সালে৷ এই বই থেকে সাহায্য নেওয়ার কথাও নিজের বইয়ে উল্লেখ করেছিলে কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতিতীর্থ৷ প্রাঞ্জল ভাষায় কঠিন বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে আজও এই দুই বইয়ের চাহিদা তুঙ্গে৷ অনেকেই হাতেকলমে পৌরহিত্য শেখার জন্য শেষকথা মনে করেন এই দু’টি বইকেই৷

মতাদর্শে চলার পথ আলাদা হয়ে গেলেও পারিবারিক এই ঐতিহ্য ভুলে যাননি প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী৷ বিজেপি-কে কটাক্ষ করার সময় এই আকরগ্রন্থের উল্লেখও করেছেন৷ তবে কমিউনিস্ট আদর্শস্বরূপ তিনি নিজে ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন নাস্তিক এবং কোনও ধর্মাচরণের বিরোধী৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর বাবা নেপালচন্দ্রও পারিবারিক পৌরহিত্যের বৃত্তি গ্রহণ করেননি৷ তবে তিনি সারস্বত প্রেসের কাজ দেখভাল করতেন৷ এই সংস্থা থেকে মূলত পুজোপাঠ এবং ধর্মগ্রন্থ প্রকাশিত হত৷

আরও পড়ুন : ‘দুঃসময়’ থেকে ‘এই আমি মায়াকভস্কি’, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কলমে বার বার ঋদ্ধ বাঙালির নশ্বর চিন্তন ও মনন

পরিবারের এই ধারা ছাপিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর উপরে গাঢ় প্রভাব বিস্তার করলেন কাকা সুকান্ত ভট্টাচার্য৷ রাজরোগে আক্রান্ত হয়ে কিশোর কবি যখন ১৯৪৭ সালের ১৩ মে প্রয়াত হন, তখন বুদ্ধদেব তিন বছরের শিশু৷ বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন সুকান্ত ভট্টাচার্যর রচনার সঙ্গে৷ একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেওছেন সে কথা৷ উদাত্ত কণ্ঠে আবৃত্তি করেছেন সুকান্তর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ কবিতা৷ পারিবারিক শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রেখেও হয়ে উঠেছিলেন আলোর পথযাত্রী৷ তাঁর পরনের শ্বেতশুভ্র পোশাকের মতো আজীবন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি বহন করে শেষ করলেন কুর্নিশসম যাত্রাপথ৷ অবিনশ্বর পরলোকে তাঁর বিশ্বাস ছিল না৷ তাই দিকশূন্যপুরের পথে পদাতিক পা রাখলেন৷ বিপ্লবী কবি কাকার ৯৮ তম জন্মদিনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে৷