Attack in Pakistan: বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের কনভয়ে জঙ্গি হামলা! পাকিস্তানের মিলিটারি নিরাপত্তাই কি কূটনৈতিক কনভয়ে আক্রমণের জন্য দায়ী?

Arun Anand

ইসলামাবাদ: পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশে এ বার আক্রান্ত হল বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের কনভয়। একজন পুলিশ অফিসারের মৃত্যুও হয়েছে। মিডিয়া রিপোর্টে জানা যায়, এই কনভয়ে ১২টি দেশের প্রতিনিধিরা ছিলেন। সোয়াট ভ্যালিতে স্থানীয় বাণিজ্য সম্মেলনে অংশ নিতে গিয়েই বিপত্তি।  কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। এই ঘটনার পর্যালোচনা দুই দিক দিয়ে হওয়া উচিত

প্রথমত, ঘটনাটি খাইবার পাখতুনখোয়ার এমন জায়গায় ঘটেছে যেটি চরমপন্থী পুস্তুদের আবাসস্থল। কয়েক মাসের মধ্যেই, সামরিক বাহিনী এবং শেহবাজ শরিফ সরকারের রাজনৈতিক দমন পীড়ন যুক্ত হওয়াতে স্থানীয় পুলিশ বাহিনী এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। কূটনৈতিক কনভয়ে হামলা এবং এর সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ যা পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য এক বিশেষ সংকেত হিসাবে কাজ করেছে।

দ্বিতীয়ত, খাইবার পাখতুনখোয়ার লাকি মারওয়াট জেলায়, সামরিক বাহিনীর রোজ হস্তক্ষেপ এবং তাদের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে একশোরও বেশি পুলিশ অফিসার চারদিনের একটি বনধ্ ডাকেন। সামরিক বাহিনী যাতে বেসমারিক এলাকা ছাড়ে তার জন্য তাঁরা দাবি করেন। বনধে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মিলিটারিরা জঙ্গিবাদকে দমনের থেকে বেশি উৎসাহ দিচ্ছেন। নিজেদের জোর প্রয়োগ করে সৈন্যবাহিনী তাদের জেল থেকে মুক্ত করিয়ে নিচ্ছে। তাদের দাবি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে খাইবার পাখতুনখোয়া পুলিশবাহিনীর হাতে দেওয়া দরকার।

আরও পড়ুন- অবিরাম বৃষ্টি অব্যাহত, নিম্নচাপের প্রভাবেই রাজ্যে বৃষ্টি, আগামী ক’দিন আবহাওয়া কেমন থাকবে? জেনে নিন

লাকি মারওয়াট অঞ্চলের পুলিশদের এই সেনাবাহিনীদের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ, পার্শ্ববর্তী জেলা বান্নু এবং ট্যাংকেও ছড়িয়ে পড়েছে, যা সেনাবাহিনীর উপর স্বাভাবিক ভাবেই চাপ তৈরী করেছে। সেনাবাহিনী পুলিশের বেশকিছু দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে। বেসামরিক এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারও কিছুটা বর্তমানে হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অঞ্চলভিত্তিক জঙ্গীবিরোধী অভিযানে ইতি টেনেছে কিনা তা ততটাও জানা যায়নি। আর এই অভিযানে নেতৃত্ব কে দেবে এই নিয়েও বেশ জলঘোলা চলছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তা এখন প্রশ্নের মুখে।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর সেখানকার সেনাবাহিনীর কড়া নিয়ন্ত্রণ থাকায়, পুলিশের উপর পুরোপুরি দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া খুবই কঠিন। সোয়াট উপত্যকায় হামলার বিষয়ে তদন্ত এবং এই নিয়ে এগানো তাই কঠিন হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসী দল তেহরিক-ই-তালিবান এবং ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায় পুরোপুরি নাকচ করেছে। মূলত, দুই সংগঠনই হামলার পরপরই তাদের দায় স্বীকার করে। তবে তেহরিক-ই-তালিবান আক্রমণের পরপরেই প্রকাশ্যে দায় স্বীকার করে নেয়। কিন্তু এই হামলার পর তারা সরাসরি দায় অস্বীকার করায় অসুবিধার মুখে পড়েছে সেনাবাহিনী।

কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীই এই দায় স্বীকার না করায়, অনেকেই মনে করেন, এই হামলা কৌশলগত এবং পরিকল্পনামাফিক যা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকে হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই হামলাটি, স্থানীয় পুলিশের ক্ষমতা বাড়তে থাকার বিষয়টির থেকে যেমন নজর সরাবে তেমনই পাখতুনখোয়ার বেসামরিক এলাকা থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উৎখাতের বিষয়টিও ধামাচাপা দেবে। বেশিরভাগের মতে কনভয় হামলা কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর মাধ্যমে হয়নি। কারণ এই হামলার সাথে জঙ্গিদের হামলার পদ্ধতির কোনও মিল পাওয়া যাচ্ছে না। পাকিস্তানি মিডিয়ার প্রতিবেদন মোতাবেক, পুলিশ বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট, হামলার আগে কনভয়ের যাত্রাপথ ভালভাবে পরীক্ষা করে। এতটা সাবধানতা নেওয়ার পরেও কেমন করে এই বিস্ফোরণ ঘটল? এর থেকেই অনুমান যায়, হামলায় যুক্তদের কাছে, অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা সম্পর্কিত তথ্য ছিল অথবা তাদের প্রবেশের পথ তৈরি করা হয়েছিল। এই বিষয়টি বেশ পরিষ্কার, দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি হয়তো পরিকল্পনা করে এই হামলা ঘটিয়েছে, যাতে ওই প্রদেশে সামরিক আধিপত্য বজায় থাকে।

অন্যদিকে, এই হামলা যদি সামরিক দিক থেকে না হয়, তবে তা নিরাপত্তা ব্যবস্থা চরম আকারে লঙ্ঘন হয়েছে তা সহজেই বোঝা যায়। যা সেনাবাহিনী এবং প্রদেশের পুলিশ কর্তৃপক্ষের অকর্মণ্যতা এবং বিশৃঙ্খলাকে প্রকাশ করে। এই হামলা, পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থারও বড় ব্যর্থতা, যা স্থানীয় এবং বিদেশী কূটনীতিকদের জন্য একদমই সুখকর নয়। দেশটির নিরাপত্তা কাঠামো কতটা দুর্বল এই হামলায় তার প্রমাণ।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা লঙ্ঘন এমন সময়েই ঘটেছে যখন পাকিস্তান সরকার বিদেশী উদ্যোগপতি এবং সরকারের কাছে দেশের জন্য বিনিয়োগের অনুরোধ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এখন জাতিসংঘের সভায় যোগ দিতে বিদেশ সফরে রয়েছেন। এই সময় এই হামলা, দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার বিষয়কে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল আরেকবার। বোঝাই যায়, সামরিক বাহিনী দেশকে শান্ত রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানে বিনিয়োগ কতটা বিপদ ডেকে আনতে পারে এই হামলা তা চোখ বন্ধ করে বুঝিয়ে দেয়।

পাকিস্তানের স্থানীয় মানুষদের নিরাপত্তার বিষয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিদেশিরাও পাকিস্তানে যে নিরাপদ নয় তাও সহজে অনুধাবনযোগ্য। পাকিস্তান এখন বধ্যভূমি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ত্বপূর্ণ সহাবস্থান যেমন এই দেশের নষ্ট হয়েছে তেমনই বিদেশি বিনিয়োগের জন্যও পাকিস্তান এখন বিপজ্জনক বলেই মনে করা হচ্ছে।

বর্তমানে, খাইবার পাখতুনখোয়াতে পুলিশ-সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব এবং উত্তেজনাময় আবহ সব নিয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার এই হামলায় যে প্রত্যক্ষ মদত আছে তা অস্বীকারের কোনও জায়গাই নেই। সর্বোপরি এই হামলা পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর সরে যাওয়ার দাবিকে রোধ করা এবং দেশের নিরাপত্তায় তাদের কব্জা রাখতেও উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করবে।

অরুণ আনন্দ: বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট অরুণ আনন্দ, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। তার লেখা প্রবন্ধ ও বই পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। আপনি তাকে তার X (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল @ArunAnandLive -এ অনুসরণ করতে পারেন।