আসলে বাউল গানের মূল বৈশিষ্ট্য কি জেনে রাখুন

Howrah News: ফিউশনের দাপটে হারিয়ে ‌যাচ্ছে প্রকৃত সাধনসঙ্গীত, আক্ষেপ বাউল সম্প্রদায়ের

হাওড়া: বাউল গান বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত সংগীতের একটি অনন্য ধারা। এটি বাউল সম্প্রদায়ের নিজস্ব সাধনগীত। তবে বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র সহযোগেও বাউল গানের আয়োজন হয়ে থাকে। বাউল সাধকদের সাধনার মাধ্যম হচ্ছে গান। সাধকের কাছে সাধন-ভজনের গূঢ়তত্ত্ব প্রকাশ পায় গানের মাধ্যমেই। প্রত্যেক মানুষের অন্তরে যে পরম সুন্দর ঈশ্বরের উপস্থিতি, সেই অদেখাকে দেখা আর অধরাকে ধরাই বাউল সাধন-ভজনের উদ্দেশ। তবে বর্তমান সময়ে মানুষের মন জয় করতে বাউল গানে ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র। এই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বহু চর্চা শোনা যায়, কিন্তু এ বিষয়ে বাউল সম্প্রদায় কি অভিমত।

আরও পড়ুন: ভারত ভ্রমণে মধ্যবিত্ত মানুষকে পথ দেখাচ্ছে যুগল! খরচ সমান‍্য মাত্র!

এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে গানের আসর বসিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন বাউলরা। জগত সংসারের প্রতি বৈরাগ্য ভাব থাকায় বাউলরা কোনও মতো ডাল-ভাতের সংস্থান করতে পারলেই খুশি থাকতেন। তবে বর্তমানে শহরে বা গ্রামে কোথাও বাউল গানের আসর বসলে এখন আর তাদের তেমন ডাক পড়ে না। আধুনিক বাউলরা প্রকৃত বাউল গানের সুর, সংগীত ও কথা বিকৃতভাবে পরিবেশন করে নেচে গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করেন। অত্যাধুনিক বাদ্যযন্ত্রের কাছে হার মেনেছে হারমনিয়াম, ঢোল, মন্দিরা, বেহলা। আগে দর্শক শ্রোতাদের আগ্রহ অনুযায়ী বাউলরা বেহালা, হারমোনিয়াম, ঢোল, মন্দিরা বাজিয়ে মালজোড়া, নবীতত্ত্ব, কারবালা, নারী-পুরুষ, রাই-শ্যামধারা, দেহতত্ত্ব, কাদিরিয়া, নকশিবন্দি,শরিয়তী, মারফতি, তরিকত, মাইজভান্ডারী, খাজাবাবার পালা, গাজীকালুর পালাসহ বিভিন্ন লোকগান পরিবেশন করতেন। সন্ধ্যার পরপরই গ্রামের আবালবৃদ্ধ বনিতারা যোগ দিতেন গানের আসরে। গান উপভোগ করে তারা বাড়ি ফিরে যেতেন একরাশ আনন্দ বেদনার মিশ্র অনুভূতি নিয়ে। এখন আর সে অবস্থা নেই, প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশ তাদের রুটি রজিতে ভাগ বসিয়েছে।

আরও পড়ুন: রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা ইট দিয়ে অসাধারণ ভাস্কর্য! শিক্ষক কাজে অবাক সকলে

হারিয়ে যেতে বসেছে বাউল গানের ঐতিহ্য। দর্শকরা বাউল শিল্পীদের একতারা, দোতারা ছেড়ে এখন মজেছেইলেকট্রনিক্স সিন্থেসাইজারে। ফলে কদর কমছে লালন শাহ, আব্দুল করিম শাহ’দের কালজয়ী বাউল গানের। বাউল গানের কথা পাল্টে, তার সুর বদলে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ঢুকিয়ে টিকে থাকার এক মরিয়া চেষ্টা করছেন বাউল শিল্পীরা। তবে তাতে বাউল গানের নিজস্বতা হারিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ। প্রশ্ন উঠছে টিকে থাকার জন্য বাউল গানে সিন্থেসাইজার, গিটার সহ অত্যাধুনিক বাদ্যযন্ত্র ঢুকিয়ে আদৌ কি ঠিক হচ্ছে? এতে বাউল গানের নিজস্বতা হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক শিল্পবোদ্ধার মতে, বাউল গান জোর করে পরিবর্তন করার কারণে তা আরও মানুষের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F

রাকেশ মাইতি