আসছে নতুন আইন?

Waqf Law: মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি থেকে বিতর্কিত সম্পত্তি যাচাই, ওয়াকফ আইনে কী কী পরিবর্তন আনতে চলেছে সরকার?

নয়াদিল্লি: সোমবার থেকে ফের শুরু হওয়া সংসদের বাজেট অধিবেশনে ওয়াকফ আইনের সংশোধনী সহ বেশ কয়েকটি বিল পেশ করা হতে পারে। ওয়াকফ বোর্ডে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি এবং কাজকর্মে স্বচ্ছতা আনতেই এই সংশোধনী আনা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের দাবির প্রেক্ষিতেই সরকারের এই পদক্ষেপ বলে জানা গিয়েছে। এখন ওয়াকফ কী, ওয়াকফ বোর্ড কী কাজ করে, কোথায় বিতর্ক এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, দেখে নেওয়া যাক।

ওয়াকফ কী:

ওয়াকফ হল মসজিদ, দরগাহ, কবরস্থান, আশ্রয়কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের নামে উৎসর্গ করা সম্পত্তি। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী ব্যক্তি ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে যে কোনও স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দান করতে পারেন।

১৯৯৫ সালে ‘ওয়াকিফ’ দ্বারা ‘ওকাফ’ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ওয়াকফ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। যে কোনও ব্যক্তি মুসলিম আইনের আওতায় ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে সম্পত্তি উৎসর্গ করতে পারেন। ২০১৩ সালে এই আইন সংশোধন করে ইউপিএ সরকার।

ওয়াকফ বোর্ডের কী কাজ করে:

ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে দান করা সম্পত্তির দেখভাল করে ওয়াকফ বোর্ড, এই সম্পত্তি হস্তান্তরের আইনি অনুমোদনও বোর্ডকে দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান আইনে বার্ষিক ১ লক্ষ বা তার বেশি আয়ের সম্পত্তি দেখভালে প্রত্যেক রাজ্য একজন চেয়ারপার্সনের নেতৃত্বে একটি ওয়াকফ বোর্ড তৈরি করতে পারে। এই বোর্ডে রাজ্য সরকারের মনোনীত এক বা দুই জন প্রতিনিধি, মুসলিম বিধায়ক এবং সাংসদ, রাজ্য বার কাউন্সিলের মুসলিম সদস্য, ইসলামি ধর্মতত্ত্বের স্বীকৃত পণ্ডিত এবং যে কোনও ওয়াকফের মুতাওয়ালিদের নিয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয়।

ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তি পরিচালনা করার পাশাপাশি হারানো সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার এবং বিক্রয়, উপহার, বন্ধক বা ইজারার মাধ্যমে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর অনুমোদন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

ওয়াকফ নিয়ে বিতর্ক কেন?

বোর্ডের ক্ষমতা: ওয়াকফ বোর্ড কোনও সম্পত্তির দাবি করতে পারে না। যদি না সেই জমি বিভাজনের আগে রাজস্ব বিভাগের রেকর্ডে নথিভুক্ত থাকে। বোর্ডকে প্রমাণ করতে হবে যে ওই জমি আসলে ওয়াকফ সম্পত্তি।

ধারা ৪০: ওয়াকফ অ্যাক্ট ১৯৯৫-এর ধারা ৪০ অনুযায়ী, কোনও নির্দিষ্ট সম্পত্তি ওয়াকফের সম্পত্তি কি না, সেই সিদ্ধান্ত রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড নিতে পারে। বোর্ড তদন্ত করার পর উপযুক্ত মনে করলে সেই সিদ্ধান্ত নেবে। ট্রাইব্যুনাল সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত, সেটাই চূড়ান্ত বলে মানা হবে।

সুপ্রিম কোর্টে পিআইএল: ওয়াকফ অ্যাক্ট ১৯৯৫-এর বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে পিআইএল দাখিল করেছেন বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়। তিনি অনুরোধ করেছেন, আদালত যেন ট্রাস্ট-ট্রাস্টি, দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় এনডাওমেন্টগুলির জন্য কেন্দ্রকে অভিন্ন আইন আনার নির্দেশ দেয়। ২০২৩ সালে সংসদের পাশ করা আইনের সাংবিধানিকতাকে ‘অ্যাকাডেমিক অনুশীলনের’ জন্য চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলে এই পিআইএল বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

ওয়াকফ আইনে কী কী পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে:

প্রস্তাবিত সংশোধনীতে জেলা কালেক্টরের কাছে ওয়াকফ বোর্ডের সমস্ত সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দেশে মোট ৩০টি ওয়াকফ বোর্ড রয়েছে। বর্তমানে ওয়াকফ বোর্ডের হাতে ৯.৪ লক্ষ একর জুড়ে ৮.৭ লক্ষ সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

সূত্র অনুযায়ী, সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে বছরে ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়, যা এই সংস্থার সম্পত্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই সমস্যা সমাধানেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী, বিভিন্ন রাজ্যে ওয়াকফ বোর্ডের দাবি করা বিতর্কিত জমিগুলি যাচাই করে দেখা হবে।

ওয়াকফ বোর্ডে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ওয়াকফ আইনে কোনও পরিবর্তন মেনে নেওয়া হবে না বলে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড। বিবৃতিতে বোর্ডের মুখপাত্র সৈয়দ কাসিম রসুল ইলিয়াসকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ওয়াকফ আইন ও ওয়াকফ সম্পত্তি সংবিধান এবং শরিয়া অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্ট ১৯৩৭-এর আওতায় সুরক্ষিত। তাই এই সম্পত্তির প্রকৃতি বা অবস্থার পরিবর্তন করে, এমন কোনও সংশোধন করতে পারে না সরকার।

রিপোর্ট অনুযায়ী, বোর্ডের মুখপাত্র সৈয়দ কাসিম রসুল ইলিয়াস বলেছেন, সরকার যাতে সহজেই এই সব সম্পত্তির দখল নিতে পারে তার জন্য ওয়াকফ আইনে ৪০টি সংশোধনীর মাধ্যমে সম্পত্তির প্রকৃতি ও অবস্থার পরিবর্তন করতে চাইছে।