বৈপ্লবিক বাড়ি

Weekend Trip: বিস্ময় আর বিস্ময়…! বাঁকুড়ার ‘এই’ বাড়ির ইতিহাস দেশবাসীর মনে শিহরণ জাগায়, জানুন আপনিও

বাঁকুড়া: বাঁকুড়া শহরের বুকে বড় কালীতলা এলাকায় রয়েছে মুখার্জিদের বাড়ি। ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয় বাড়িটি। এ বাড়ি কোনও সাধারণ বাড়ি নয়। এই বাড়ির ইতিহাস নাড়াচাড়া করলে বাঁকুড়াবাসী তথা বঙ্গবাসী হিসেবে গায় কাঁটা দিতে বাধ্য। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে জানা যাবে, বাবু হরিহর মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি ছিল এই ঐতিহাসিক বাড়িটি। বাড়ির মাথায় লেখা রয়েছে ‘বৈপ্লবিক বাড়ি’।

বাঁকুড়ার এই বৈপ্লবিক বাড়ি নিয়ে গবেষণা করা বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ইতিহাস অনুযায়ী গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি হিসেবে এতদিন জানা ছিল, ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার অনুশীলন সমিতি যা ব্যারিস্টার পিএন মিত্রের। তবে সাম্প্রতিককালে কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে, কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত অনুশীলন সমিতির আগে মেদিনীপুরে রাজনারায়ণ বসুর বাড়িতে এবং বাঁকুড়ার বড়কালীতলার ‘বৈপ্লবিক বাড়িতে’ গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি তৈরি হয়েছিল। মজুত করে রাখা হত অস্ত্রশস্ত্র। এ ছাড়াও ১৯০১ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত হরিহর মুখোপাধ্যায়ের ‘বৈপ্লবিক বাড়িতে’, ‘বঙ্গলক্ষী কটন মিলস’ অর্থাৎ স্বদেশী বস্ত্রের কারখানা চালু হয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ পর্যটকদের জন্য বিরাট সুখবর! দার্জিলিংয়ে বেড়ানো এবার দ্বিগুণ মজা! কারণ জানলে মন খুশি

হরিহর মুখোপাধ্যায় নিজেই ছিলেন বাঁকুড়া শহরের প্রথম ভারতীয় পৌর প্রশাসক। তার পৃষ্ঠপোষকতায় বাঁকুড়া থেকে বাঁকুড়ার বিপ্লবী বাড়িকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতা সংগ্রাম এক অন্য মাত্রা পেয়েছিল। এই বাড়িটি একসময় বিপ্লবীদের গোপন আস্তানা ছিল। নামজাদা প্রথম সারির বিপ্লবীরা এখানে ঘাঁটি গাড়তেন এবং অনুশীলন করতেন। এলাকার বড় কালিতলা মন্দিরে শক্তি পুজো করতেন বিপ্লবীরা। বিপ্লবীদের মন্ত্রগুপ্তি গর্ত এই মন্দিরেই। আলিপুর বোমা মামলায় বিশ্বাসঘাতক নরেন গোঁসাইয়ের মন্ত্র গুপ্ত ঘটে এই মন্দিরেই, বৈপ্লবিক বাড়ি থেকে খুব কাছেই মন্দিরটি এবং বড় কালিতলা মন্দিরের জন্য এই এলাকার নাম ‘বড়কালীতলা’।

বর্ধমানের চাননা গ্রামের সন্তান যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যাকে বিপ্লবীদের ব্রহ্মা বলা হত, তিনিও এসেছিলেন এই বিপ্লবী বাড়িতে। এছাড়াও ক্ষুদিরাম বসু এবং অরবিন্দ ঘোষ বাদে সেই যুগের যুগান্তর অনুশীলন সমিতি এবং আলিপুর বোমা মামলার সঙ্গে যুক্ত প্রথম সারির প্রত্যেকটি বিপ্লবীর যাতায়াত ছিল বাঁকুড়ার বড়কালীতলার বৈপ্লবিক বাড়িতে। বড় কালীতলা মন্দির আজও পূজিত হয় ভক্তি ভরে তবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অন্যতম ভূমিকা রাখা বৈপ্লবিক বাড়ি বাঁকুড়া শহরের বুকে আজও বিদ্যমান। বর্ষাকাল আসলেই জঙ্গলে ঢেকে যায় বাড়িটা, বাড়িতে ঘেরা রয়েছে প্রায় সাত ফুট উঁচু প্রাচীর দিয়ে। মুখ্য ফটকে ঝোলানো রয়েছে তালা। উঁকিঝুঁকি মারলে দেখা যাবে বাড়ির দালান। বিপ্লবীদের এই ইতিহাস আজও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করেন বাঁকুড়াবাসী।

নীলাঞ্জন ব্যানার্জী