নারায়ণগড়: এককালের অত্যাচার, কৃষকদের শোষণ, অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতির সাক্ষী থেকেছে কয়েক কামরার এই ঘর। অত্যন্ত জঙ্গলাকীর্ণ নির্জন এলাকায় গড়ে উঠত এই সকল বাড়ি। পরাধীন ভারতবর্ষে এই কুঠি ছিল খেটে খাওয়া মানুষদের কাছে অত্যন্ত কষ্টের একটি জায়গা। যখন ইংরেজরা ভারতকে শাসন করত, তখন বিভিন্ন গ্রামীন এলাকায় কৃষকদের জোরপূর্বক নীল চাষে বাধ্য করত ইংরেজ শাসকেরা। বিভিন্ন গ্রামীন নির্জন এলাকায় গড়ে উঠত নীলকুঠি। কালের নিয়মে সেই নীলকুঠি তার কৌলিন্য হারালেও, এখনও বেশ কিছু জায়গায় সেই ইতিহাসের নিদর্শন রয়ে গিয়েছে। তবে ভগ্নপ্রায় নীলকুঠির নেপথ্যে ইতিহাস জানলে, শিহরিত হতে হয়।
সারা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে নীলকুঠি। পরাধীন ভারতবর্ষে যখন ইংরেজ শাসন চলেছিল তখন প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার কৃষকদের নীল চাষ করতে বাধ্য করা হত। এই নীল ছিল অত্যন্ত মূল্যবান। যা ভারতবর্ষে চাষ করে ইংরেজ শাসকেরা রফতানি করত ইউরোপে। আর সেখান থেকে পাওয়া মুনাফা দিয়ে শাসন এবং শোষণ চালাতো ভারতীয়দের উপর। তবে এখনও কালের নিয়মে ক্রমশ ধ্বংস হতে হতে বেশ কিছু অংশ এখনও রয়ে গিয়েছে। যা বহন করে সেদিনের ইতিহাস।
আরও পড়ুনঃ ৩১ অক্টোবর নাকি ১ নভেম্বর দীপাবলি? ঠিক কোন সময় লক্ষ্মী-নারায়ণ পুজোর জন্য সেরা? জানুন জ্যোতিষীর মত
পশ্চিম মেদনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের কাশিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আহারমুন্ডা এলাকায় রয়েছে ভগ্নপ্রায় নীলকুঠি। ইতিহাস গবেষকেরা মনে করেন, জঙ্গলাকীর্ণ এই জায়গায় চাষিদের বাধ্য করা হতো নীল চাষে। স্বাভাবিকভাবে চাষিদের জোরপূর্বক চাষ করা নীল রফতানি করা হত ইউরোপে। গবেষকদের মতে এই নীলকুঠি আদতে নীল সঞ্চয় করে রাখার একটি কক্ষ। যেখানে থাকতেন নীলকর সাহেব, প্রহরীরা। কৃষকদের উৎপাদিত নীল সঞ্চয় করে সেখান থেকে দ্রুততার সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হতঅন্যত্র। জঙ্গলাকীর্ণ নির্জন এলাকায় করার কারণে সেখানে কৃষকদের কোনও আন্দোলন কিংবা কৃষকদের কোনও চাপ পড়ত না ব্রিটিশ শাসকদের উপর। বেশ কয়েকটি কক্ষ বিশিষ্ট এই বিশেষ নীলকুঠি আদতে শাসকের শোষণের এক প্রতিরূপ।
আরও পড়ুনঃ সামান্য বিনিয়োগে হাজার হাজার লাভ! এই চাষে মালামাল কৃষক, জানুন ‘ম্যাজিক’ পদ্ধতি
বর্তমানে ভগ্ন প্রায় অবস্থায় এই নীলকুঠি। চারিদিকে ভরে গিয়েছে আগাছায়। ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চালান এই নীলকুঠি সংরক্ষণ হলে আগামী দিনে সাধারণ মানুষের কাছে তৎকালীন সময়ের নানা ইতিহাস ফুটে উঠবে। জানতে পারবে ব্রিটির সময়কালে ভারতীয়দের উপর শাসকের অত্যাচারের কাহিনী। তবে এখনও প্রাচীন সময়ের এক স্থাপত্য এই নীলকুঠি।
রঞ্জন চন্দ