যাত্রার দৃশ্য

Bankura News: কেন উচ্চস্বরে যাত্রাপালা হয়? চারদিক ফেটে সংলাপের উচ্চকিত শব্দে? জানালেন নাট্যবিশ্লেষক 

বাঁকুড়া: বাংলার যাত্রাপালা হারিয়েছে পুরনো জনপ্রিয়তা। তবে এখনও বাংলার গ্রামে গ্রামে দেখা যায় যাত্রা। গ্রামকেন্দ্রিক জেলা বাঁকুড়া। এক সময় বাঁকুড়া জেলার গ্রামে গ্রামে মনোরঞ্জন বলতে যাত্রাপালাকে বলা হত। যাত্রা ঘোষণা থেকে শুরু করে পোস্টার দেওয়া পর্যন্ত, সব কিছুই ছিল গ্রামের মানুষের আনন্দের উৎস। তবে বিভিন্ন কারণে, বাঁকুড়ার মতো জেলাতেও যাত্রার ধারা নিম্নগামী।

জেলা জুড়ে সিনেমা হল না থাকলেও নেই যাত্রার হিড়িক। তবে এর কারণ হিসেবে বাঁকুড়ার নাট্য বিশ্লেষক নদিয়াইন্দু বিশ্বাস বলেন, “যাত্রার আয়োজকদের পক্ষে যাত্রার খরচ না তুলতে পারা এর একটি বিশেষ কারণ। এছাড়াও মানুষের হাতে সময় কম। যাত্রা আয়োজন করা থেকে অভিনয় করে ফুটিয়ে তোলা সঙ্গে সেই যাত্রা দর্শকদের বসে সময়টি উপভোগ করা অনেক সময় হয়ে ওঠেনা।” এছাড়াও আনুষঙ্গিক কারণ হিসেবে ভাল ‘স্ক্রিপ্ট রাইটার’ না থাকার পাশাপাশি মান উন্নয়ন না হওয়ার দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি।

তবে যাত্রা এবং সিনেমার মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে সেটাও তুলে ধরলেন বাঁকুড়ার নাট্য বিশ্লেষক। যাঁরা জানেন না, তাঁরা যাত্রা নিয়ে অনেক সময় ঠাট্টা করে থাকেন। জোরে কথা বলাটা দেখা হয় ব্যাঙ্গর সুরে। তবে নাট্য বিশেষজ্ঞ খুবই সুন্দর ভাবে বিশ্লেষণ করে বললেন কেন যাত্রাতে উচ্চস্বরে কথা বলা হয়। একটি গ্রামবাংলার যাত্রাকে ২০০-২৫০ দর্শকের সামনে ফুটিয়ে তোলা ছিল বড় একটা চ্যালেঞ্জ। সেই সময় থাকত না কোনওরকম যান্ত্রিক সাহায্য। গলার আওয়াজে যাত্রার ডায়লগ পৌঁছে দিতে হত দর্শকদের শেষ সারি পর্যন্ত। এবং সেই কারণেই ছান্দিক ভাবে জোড় গলায় বলা হত যাত্রার ডায়লগ। যা তৈরি করেছে অন্য ধর্মের একটি শৈল্পিক ধারা।

বাঁকুড়া শহরে নেই কোনও সিনেমা হল বা প্রেক্ষাগৃহ। গোটা জেলা জুড়ে রয়েছে মাত্র একটি, তাও আবার প্রত্যন্ত জঙ্গল মহলে। তবুও ধীরে ধীরে কমে আসছে যাত্রার জনপ্রিয়তা। তবুও যাত্রাকে এখনও অভিনয়ের একটি ক্লাসিক বা সর্বোত্তম ধারা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে বাঁকুড়ায়। মুষ্টিমেয় শিল্পীরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যাত্রাকে তুলে ধরতে। যাতে গ্রাম বাংলার সঙ্গে যাত্রার নাড়ির টান ছিন্ন না হয়।

নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়