বামেদের বৈঠক

CPIM: বসিরহাটে বিরাট চমক দিল সিপিএম! কে হচ্ছেন এই কেন্দ্রের প্রার্থী? বৈঠক শেষে বাজিমাত আলিমুদ্দিনের

কলকাতাঃ বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রটি সম্ভবত সিপিএমকে ছাড়ল সিপিআই। নিরাপদ সর্দারকে প্রার্থী করতে চায় দল। সূত্রের খবর, সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে সামনে রেখেই লোকসভা নির্বাচনে বাজিমাত করতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেই কারণেই সিপিআইয়ের কাছ থেকে সেই আসনটি দাবি করে বড় শরীক।

সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে মানুষ যখন নিজেদের বিক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন, সেই সময়ই নিরাপদ সর্দারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আন্দোলনে বাধা দেওয়ার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বলে অভিযোগ করে সিপিএম। তারপর থেকেই তাঁকে সামনে রেখে ওই এলাকায় বেশকিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়। আন্দোলনের মুখ হিসেবে তাঁকে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করতে চাইছে সিপিএম, এমনটাই সূত্রের খবর। যদিও এই আসনটিতে প্রার্থী দেয় বরাবরই সিপিআই। বেশ কিছুদিন আলোচনা চলার পর অবশেষে সেই আসনটি সিপিএমকে ছেড়ে দিতে চলেছে সিপিআই।

আরও পড়ুনঃ আসন সমঝোতা নিয়ে কী ভাবছে সিপিএম? কোন আসনে প্রার্থী দেবে কে? বিরাট চমক আলিমুদ্দিনের আলোচনায়

আগামিকাল বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার কথা বলেছিলেন বিমান বসু। কিন্তু তা হয়নি। দফায় দফায় বৈঠকে করেও কিছুতেই জট কাটেনি। বেশ কয়েকটি আসনে একাধিক দলের দাবি রয়েছে। গত শুক্রবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার জন্য ঘটা করে সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয়েছিল বামফ্রন্টের তরফে। তার আগে দীর্ঘ সময় ধরে বৈঠকে বসেছিল বামফ্রন্টের দলগুলি। কিন্তু জট না কাটায় মাত্র দুটির বেশি আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বামেরা। সাংবাদিক বৈঠকে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়ে দেন পরশু অর্থাৎ রবিবার বাকি প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।

বিমান বসু শুক্রবার জানান, লিস্ট ঘোষণা করার কথা ছিল। পারছি না৷ সিট অ্যাডজাস্টমেন্ট ইত্যাদি নিয়ে সব জায়গায় এখনও পর্যন্ত জট খোলা যায়নি। আমরা সিন্ধান্ত নিয়েছিলাম কংগ্রেস আইএসএফ-সহ বিজেপি তৃণমূল বিরোধী সব শক্তিকে এক জায়গায় করতে। এই সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তাড়াহুড়ো করছি না। সময় আছে। ফেজ ওয়াইজ নির্বাচন হচ্ছে। হামরো পার্টি ঘোষণা করেছে তাঁরা তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। তাঁরা প্রার্থী ঠিক করছে। হামরো পার্টির ভূমিকা পজেটিভ। সবার সঙ্গেই আলোচনার সুযোগ রয়েছে। তাই বলে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইতে অংশগ্রহন করা হবে না।

আরও পড়ুনঃ বেরিয়েছিলেন প্রচারে, তারপর যা অভিযোগ জানালেন সায়রা শাহ হালিম…! জানুন

তিনি আরও জানান, বামফ্রন্টের তরফে কোচবিহার আলিপুরদুয়ারে প্রার্থী ঘোষণা করেছি। তার মধ্যে আবার কেউ প্রার্থী দিয়ে থাকলে আবেদন করব যেন একটাই প্রার্থী থাকে। আমরা বামফ্রন্টে ঠিক করেছি রবিবারের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দিকে যেতে পারব। শুধু বামফ্রন্ট হলে ৪২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়াই যেত। কিন্তু বিজেপি তৃণমূল বিরোধী সব শক্তি এক জায়গায় করাই আমাদের উদ্দেশ্য। তার মধ্যে যেমন রাজনৈতিক দল আছে তেমনই আছে সামাজিক সংগঠনগুলো।

রবিবারে পূর্নাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার কথা থাকলেও সেটা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বামেদের অন্দরেও। সূত্রের খবর, সিপিএম চেষ্টা করছে ত্রিমুখী লড়াইয়ে তাদের একজন প্রার্থী দিতে। কিন্তু বেশকিছু আসনে যে রকমের জট রয়েছে তা খোলা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যেমন পুরুলিয়া আসনে প্রার্থী দিতে ফরওয়ার্ড ব্লক এবং কংগ্রেস দু’পক্ষই অনড়।

আলিপুরদুয়ারে আরএসপির সঙ্গে কংগ্রেসের একইরকম সমস্যা রয়েছে। যদিও এই আসনে ইতিমধ্যেই বামেদের তরফে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আবার বসিরহাটে সিপিএম সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক ও আন্দোলনের মুখ নিরাপদ সর্দারকে প্রার্থী করতে চাইছিল দল। সেখানে আবার বামফ্রন্টের তরফে সিপিআই লড়াই করে থাকে। তাই সেই আসন ছাড়তে নিমরাজি ছিল সিপিআই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরফ গলেছে। বসিরহাট আসন সিপিএমকে সম্ভবত ছেড়ে দিয়েছে সিপিআই।

আরও পড়ুনঃ তুমুল লড়াই হুগলিতে, লকেট-রচনার এই ‘সিক্রেট’ জানেন কি? ভোটের উত্তাপ বাড়ছে কয়েকগুণ

আইএসএফ বেশ কিছু আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। মুর্শিদাবাদ এবং শ্রীরামপুরে। সেখানে আবার মুর্শিদাবাদে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং শ্রীরামপুরে দিপ্সীতা ধরকে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে সিপিএম। সংখ্যার বিচারেও আইএসএফের সঙ্গে সমস্যা রয়েছে। দলের তরফে আটটি আসন চাওয়া হলেও বামেরা তিনটি আসন ছাড়তে চায়। এখন রবিবারের মধ্যে সব জট কীভাবে খোলে সেদিকেই তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল।

লোকসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৪২ কেন্দ্রেই জোর কদমে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রচার। কয়েকটি আসন ছাড়া বিজেপির তরফেও প্রায় সব ক’টি আসনেই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলকে টক্কর দিতে তারাও শুরু করে দিয়েছে প্রচার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের প্রার্থী তালিকায় সম্পূর্ণ হয়নি। শুক্রবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণার জন্য প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বামেরা। এরপর বামফ্রন্টের তরফে দীর্ঘ সময় ধরে বৈঠক চলে। কিন্তু সেই বৈঠকেও জট কাটেনি বলেই সূত্রের খবর।

বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়ে দিয়েছেন, রবিবারের মধ্যেই পূর্ণ তালিকা প্রকাশিত করতে চাইছেন তাঁরা। তবে কোনওভাবেই তাড়াহুড়ো না করার রণকৌশল নেওয়া হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। কেন এতটা সময় নিচ্ছে বামেরা তা নিয়ে একদিকে যেমন রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে ঠিক তেমনি কটাক্ষ শুনতে হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছ থেকেও। যদিও এরপরেও ‘ধীরে চলো নীতি’তেই ভরসা সিপিএমের।