হাওড়া: পাঁচলা ব্লকের দেউলপুর গ্রাম৷ রোজের মতোই কাজ সারছিলেন গ্রামের এক গৃহবধূ৷ সকাল সকাল গোয়ালের গরুদের খড়-বিচুলি দেওয়ার তোড়জোড়ও শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু, খড়ের গাদায় হাত দিতেই সজোড়ে ‘ফোঁস ফোঁস’ শব্দ৷ সঙ্গে সর সর আওয়াজ! রীতিমতো আঁতকে ওঠেন ওই মহিলা৷ হাত পা ভয়ে ঠান্ডা হয়ে যায়…সঙ্গে সঙ্গে ডাকেন বাড়ির লোকজনেদের৷
কিন্তু, এরপরে এতদিন পর্যন্ত যা হতো, তা কিন্তু হয়নি এবার৷ গৃহস্থ বাড়িতে সাপ দেখতে পেয়েও মেরে ফেললেন না৷ বরং বাড়ির সকলে মিলে চেষ্টা করলেন সাপটাকে আটকে রাখার৷ এরপরে খবর দেওয়া হয় পরিবেশকর্মীদের৷ তাঁরাই এসে উদ্ধার করেন চন্দ্রবোড়া সাপটিকে৷
গৃহবধূর তৎপরতায় প্রাণরক্ষা চন্দ্রবোড়ার! উদ্ধার হচ্ছে সাপ, প্রাণ বাঁচছে মানুষের। পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিয়ে প্রচার অভিযানে পরিবেশ প্রেমী সংগঠন। এতেই জেলা জুড়ে সাপ মারার ঘটনা কম হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশপ্রেমীরা। পরিবেশ বাঁচাতে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছেন একাংশের মানুষ। তার জেরে অনেকাংশেই পরিবর্তন হয়েছে জেলার চিত্র। সাধারণ মানুষও পরিবেশরক্ষায় পরিবেশ কর্মীদের সহায়তা নিচ্ছেন গ্রামে গ্রামে। এমন ছবি দেখা গেল পাঁচলার দেউলপুর গ্রামেও।
সাপ সজারু ভাম বাঘরোল কিংবা গন্ধগোকুলের মত প্রাণী দেখলে মানুষ তাদের ধাওয়া করে প্রাণে মেরে তবেই যেন ক্ষান্ত হত। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত, গ্রামাঞ্চলে এমন ঘটনায় ছিল স্বাভাবিক। এ ধরনের ঘটনা পরিবেশের পক্ষে মারাত্মক বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে বন দফতর ও জেলার পরিবেশপ্রেমী মানুষের যৌথ উদ্যোগে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতিদিন বন দফতর বা পরিবেশ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন: অভিষেকের কপ্টারে আয়কর তল্লাশি! হলদিয়ায় যাওয়ার আগের দিনই রেইড..বিস্ফোরক পোস্ট তৃণমূলনেতার
কারও বাড়ির পোল্ট্রিতে শেয়াল, বাঘরোল ঢুকেছে, কোথাও বিষধর সাপ দেখা মিলেছে, কোথাও আহত গন্ধগোকুল বা ভামের মতো প্রাণীর দেখা মিলেছে। এমন খবর আসছে, সাধারণ মানুষের মাধ্যমেই। খবর এলে পরিবেশকর্মীরা দৌড়ে যাচ্ছে সেখানে।
এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে জেলা বন দফতর। তবে হাওড়া জেলা জুড়ে প্রায় প্রতিটি ব্লকে অসংখ্য পরিবেশ কর্মী যাঁরা নিঃস্বার্থভাবে এই বন্যপ্রাণীদের প্রাণ বাঁচিয়ে চলেছেন পরিবেশরক্ষার তাগিদে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশকর্মী শুভঙ্কর কোলে ও শুভজিৎ মাইতি জানান, জেলা জুড়ে হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সদস্য এবং অন্যান্য পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের সদস্যরা বন্যপ্রাণীদের বাঁচাতে কাজ করে চলেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতন বৃদ্ধি করতে নানা কর্মকাণ্ড চলছে জেলাজুড়ে।
রাকেশ মাইতি