অশোকনগর

Bangla News: কী ঘটছে এখানে? রাত নামলেই অশোকনগরের এই এলাকায় ‘নো এন্ট্রি’, ক্লাব জারি করল ১৪৪ ধারা

অশোকনগর: রাত নামলেই আর দাঁড়ানো যাবে না অশোকনগরের এই এলাকায়! পুলিশ নয়, এলাকার পরিবেশ রক্ষা করতে অশোকনগরের এক ক্লাব জারি করল অঘোষিত এই ১৪৪ ধারা। রীতিমতো মাইকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ক্লাবের তরফ থেকে করা হচ্ছে প্রচার। নানা জায়গা থেকে আগত মানুষদের উদ্দেশ্যে বহিরাগত তকমা দিয়ে, ক্লাবের তরফ থেকে এমন প্রচার ঘিরেই উঠছে প্রশ্ন।

পুলিশ প্রশাসন থাকতেও, কোন ক্লাব সংগঠন কি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে! মানুষের প্রয়োজনে বা বহু ক্ষেত্রে অসুস্থতার জন্য যদি দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে সচেতন নাগরিকরা। জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগণা জেলার অশোকনগরের ১৩ নম্বর ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলে জনকল্যাণ সভা ক্লাবটি অবস্থিত।

আরও পড়ুনঃ রান্নার স্বাদ বাড়াতে টম্যাটো দিচ্ছেন? কাঁচা তো দূর, রান্না খাবারও কারা ভুলেও ছোঁবেন না? জানুন চিকিৎসকের মত

ইংরেজ আমলের ঐতিহাসিক বিমান ঘাঁটির এক অংশ রয়েছে ওই ক্লাবের সামনে। খোলামেলা জায়গা হওয়ায় অনেকেই সান্ধ্যকালীন ভ্রমণ থেকে শুরু করে অবসর সময়ে ওই স্থানে গিয়ে দাঁড়ান। বহু ক্ষেত্রে প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে শুরু করে অশোকনগর হাবরা-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার বহু মানুষও এই জায়গায় আসেন সময় কাটাতে। স্থানীয়দের অভিযোগ,  এলাকায় অন্ধকারের সুযোগ নিয়েই চলে মদ্যপান ও অশ্লীল কার্যকলাপ। তাই এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলেই থানায় ও পৌরসভায় মৌখিকভাবে জানালেও, তাদের তরফে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেই দাবি ওই ক্লাবের। এমনকি বলা হয় প্রশাসনের তরফ থেকে নজরদারি চালানো হলেও, তেমন কোনও ফল মেলে না। তাই বাধ্য হয়েই এলাকার নিরাপত্তা বজায় রাখতে এ হেন অঘোষিত ১৪৪ ধারা জারির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে ক্লাবের তরফে।

স্থানীয় একশ্রেণির মানুষ বিষয়টিকে সমর্থন করলেও, অনেকেই বলছেন সন্ধ্যের পর প্রাতঃভ্রমণ করতে ওই স্থানে গিয়ে সামান্য জিরিয়ে আবার হাঁটতেন তারা। এমন নির্দেশের পর থেকে আর ওইখানে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না কোন ভাবেই। যদিও পুলিশের তরফ থেকে ক্লাবের এ রকম সিদ্ধান্তের বিষয়টি একতিয়ার বহির্ভূত বলেই জানানো হয়েছে। লিখিত কোন অভিযোগ পেলে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলেও জানানো হয়। সেক্ষেত্রে কোনও ক্লাব এভাবে ঘোষনা করে কোন মানুষকে এলাকায় দাঁড়াতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না বলেই জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

আরও পড়ুনঃ সবাই করলেও এই কাজটি কোনওদিন করেনি! ছকভেঙে উচ্চ মাধ্যমিকে তৃতীয় অভিষেক

পুরসভার তরফ থেকেও এমন কোন নির্দেশিকা জারি করা হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। অশোকনগর কল্যাণগড় পুরসভার পৌর প্রধান প্রবোধ সরকার জানান, এমন কোনও নির্দেশিকা পৌরসভার তরফে জারি করা হয়নি ওই এলাকায়। ক্লাবের তরফ থেকে অনুরোধ করা যেতে পারে মানুষের উদ্দেশ্যে তবে, এরকম করা হলে সেটি ঠিক নয়। জনকল্যাণ সভা ক্লাব সভাপতি শান্তনু ঘোষ জানান, “বেশ কিছুদিন ধরেই এই এলাকার পরিবেশ কলুষিত হয়ে উঠেছে। আমরা বিষয়টি ইতিমধ্যেই থানা এবং পৌরসভাকে জানিয়েছি। পুলিশি টহল চললেও বর্তমানে নির্বাচন চলায় পুলিশ ব্যস্ত থাকার কারণেই সেভাবে নজরদারি চালাতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে ক্লাবকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ক্লাবের তরফ থেকেও মেনে নেওয়া হয়েছে, বহু সাধারণ ভালো মানুষও এখানে আসেন, কিন্তু এলাকার পরিবেশ রক্ষা করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কিছু করার নেই।

বিষয়টি নিয়ে ছাত্র নেতা আকাশ কর জানান, এ রকম ঘটনা ঘটলে পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নিক, কয়েকজনের জন্য সকলকে এ ভাবে কোন এলাকায় দাঁড়ানো বন্ধ করতে পারে না ক্লাব। তাহলে মানতে হবে পুলিশ প্রশাসন সেক্ষেত্রে ব্যর্থ। তবে তিনি আশা করেন, ক্লাব ও প্রশাসনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সুস্থ সমঝোতা হওয়া প্রয়োজন। সান্ধ্যকালীন ভ্রমণার্থী ঋতম বিশ্বাস জানান, স্বামী স্ত্রী মিলে সন্ধ্যাবেলা হাঁটতে যেতাম ওই জায়গায়। গত তিনদিন ধরে ওই জায়গায় দাঁড়াতেই দেওয়া হচ্ছে না। রীতিমত অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অশোকনগরবাসী হিসেবে বিষয়টি যথেষ্টই কষ্টদায়ক। তবে কি নিরাপত্তা দিতে অপারক পুলিশ প্রশাসন! মানুষ আস্থা হারাচ্ছে প্রশাসনের থেকে। এই পরিস্থিতিতে এখন প্রশাসন কি সিদ্ধান্ত নেয় সেদিকেই তাকিয়ে অশোকনগরের সুশীল সমাজ।

Rudra Narayan Roy