Iran President Ebrahim Raisi Death: হামাসকে সমর্থন থেকে শুরু করে ইজরায়েলে ড্রোন হামলা! রাইসির মৃত্যুতে কী প্রভাব পড়বে মধ্যপ্রাচ্যে, কে হচ্ছেন ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট?

তেহরান: ঘন কুয়াশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার। পার্বত্য অঞ্চল পেরনোর সময় আচমকাই দুর্ঘটনা৷ পাহাড়ে আছাড় খেয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল আস্ত হেলিকপ্টার৷ তারপরই দাউ দাউ করে আগুন। প্রথমটা রাইসির বেঁচে থাকার আশা বজায় থাকলেও সোমবার সকালে ইরানের তরফে সরকারি ভাবেই ঘোষণা করা হয়, দুর্ঘটনাস্থলে কারও বেঁচে থাকার কোনও সম্ভাবনা পাওয়া যায়নি৷ অর্থাৎ, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির৷

পাশাপাশি, কপ্টার দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেইন আমিরআবদুল্লাহিয়ান-সহ আরও তিনজন৷ কুয়াশা, জঙ্গলে ঘেরা দুর্ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের দেহ উদ্ধারের ভিডিয়োও সামনে এসেছে৷

রাইসির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই একাধিক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্ব রাজনীতিতে৷ একদিকে, যেমন ইরানের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির পরবর্তী অবস্থা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে, তেমনই অন্যদিকে, আলোচনায় উঠে আসছে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার প্রসঙ্গও৷

আরও পড়ুন: ‘কেউ বেঁচে নেই..,’ কপ্টার দুর্ঘটনায় মারাই গিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি! সামনে এল দুর্ঘটনার ঠিক আগের ভিডিও

প্রথমে আসা যাক ইরানের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রসঙ্গে৷ ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের আকস্মিক মৃত্যুর পরে এখন অন্তবর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে চলেছেন ইরানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মোখবের৷ তবে, ৫০ দিনের মধ্যেই ইরানের পরবর্তী স্থায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন সুপ্রিম লিডার তথা ইরান রাজনীতির সর্বেসর্বা আয়াতুল্লাহ খামেনেই৷ ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট রাইসির মতো কট্টর হবেন, না হাসান রুহানির মতো উদারপন্থী, তা-ও নির্ভর করবে খামেনেইয়ের উপরেই৷

রাইসি যে ইরানের বর্ষীয়ান সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেই ঘনিষ্ঠ এবং পছন্দের পাত্র ছিলেন, তা দেশের অভ্যন্তরে তো বটেই দেশের বাইরেও সুবিদিত৷ জল্পনা ছিল, ৮৫ বছরের খামেনেইর জায়গায় অদূর ভবিষ্যতে ইরানের সর্বোচ্চ লিডার হতে চলেছেন রাইসিই৷ কিন্তু, তাঁর মৃত্যুতে ওলটপালট হয়ে গেল সমস্ত অঙ্ক৷ এমন পরিস্থিতিতে বংশ পরম্পরার প্রথা মেনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার জায়গা পেতে পারেন খামেনেইয়ের পুত্র মোজতবা খামেইনি৷ যে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন বহু ইরানীয় ধর্মীয় নেতা৷

অন্যদিকে, ইরানের রাষ্ট্রপতির অকালমৃত্যুতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখছে মধ্যপ্রাচ্যও৷ ইজরায়েলের সঙ্গে গাজার হামাসের সংঘর্ষে ইরানের ভূমিকা ছিল সর্বজন বিদিত৷ যুদ্ধাস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র, অর্থ দিয়ে তো বটেই, হামাস নেতাদের নিরাপত্তা দিয়েছে রাইসির ইরান প্রশাসন৷

এদিন রাইসির মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে হামাসও৷ সেই শোকবার্তায় রাইসিকে ‘সম্মানীয় সমর্থক’ হিসাবে উল্লেখ করে প্যালেস্তিনীয় বিরোধী গোষ্ঠী হামাসের তরফে জানানো হয়, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষ বাঁধা ইস্তক হামাসকে, প্যালেস্তিনীয় রেজিস্ট্যান্সকে সমর্থন করেছেন ইব্রাহিম রাইসি৷

আরও পড়ুন: ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নিয়ে আরও বড় প্রতিশ্রুতি মমতার! বললেন, ‘ইন্ডিয়া জোটকে লিড করবে বাংলাই’

শুধুমাত্র হামাসকে সমর্থন করাই নয়, গত মাসে সরাসরি সংঘর্ষ বাঁধে ইজরায়েল এবং ইরানের মধ্যেও৷ যা নিয়েও তপ্ত হয় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি৷ ইরানের বন্ধু রাষ্ট্র সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে ইরান কনস্যুলেটের উপরে হামলার ঘটনার পরে ইজরায়েলে একের পর এক ড্রোন হামলা চালায় ইরান৷ এখন যদিও সরাসরি আক্রমণের ঘটনা বন্ধ৷ কিন্তু, ইরানের সাহায্যপ্রাপ্ত গাজার বিরোধী গোষ্ঠী হামাস এবং হিজবোল্লা ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে৷

শুধুমাত্র, ইজরায়েল গাজা যুদ্ধেই নয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও আমেরিকা সমর্থিত ইউক্রেনের বিপরীতে রাশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক ছিল ইরান৷ আমেরিকা-ব্রিটেনের মতো পশ্চিমি দেশগুলি তো বটেই, চরম শত্রু ইজরায়েলেরও দাবি, ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছে৷ পরমাণু চুক্তি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে ইরানের টানাপড়েন দীর্ঘদিনের, সুবিদিত৷

সব মিলিয়ে, বিশ্ব রাজনীতির বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, কপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসির এই আকস্মিক মৃত্যু ও ইরান রাজনীতির এই টালমাটাল অবস্থায় পশ্চিম এশিয়ায় সীমান্ত সংঘর্ষ আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে৷