উত্তর ২৪ পরগনা: সপ্তম দফার ভোটে রাজ্যের যে কটি কেন্দ্রে ভোট রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম হল দমদম লোকসভা কেন্দ্র। কলকাতার পার্শ্ববর্তী এই লোকসভা কেন্দ্রের রাজনৈতিক গুরুত্ব ও ইতিহাস কোনও অংশেই কমতি নয়। রাজ্য রাজনীতিতে বাম আমল সহ বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও যথেষ্টই ভূমিকা রয়েছে, দমদম লোকসভা কেন্দ্রের। রাজ্য রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করা বহু নেতা উঠে এসেছে এই লোকসভা কেন্দ্র থেকেই।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম দফা ভোটগ্রহণ
তবে বলে রাখা ভালো, দমদম লোকসভা কেন্দ্রে ১৯৭৭ সালে প্রথম সাংসদ কিন্তু জনতা পার্টির। সাংসদ হয়েছিলেন অশোককৃষ্ণ দত্ত। এরপর ১৯৮০ সালে এখানে সাংসদ হন সিপিএমের নীরেন ঘোষ। পরবর্তীতে লোকসভা ভোটে এই দমদম কংগ্রেসের হাতে যায়। আশুতোষ লাহা ছিলেন পাঁচ বছরের সাংসদ। ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সিপিএমের নির্মলকান্তি চট্টোপাধ্যায় এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে সংসদে যান। তবে দমদমে বিজেপির মাটিও কিন্তু খুব নরম নয়। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ অবধি বিজেপির তপন শিকদার ছিলেন এ কেন্দ্রের সাংসদ। ২০০৪ সালে অবশ্য সিপিএম ফেরে। অমিতাভ নন্দী সাংসদ হন।
২০০৯ থেকে দমদম লোকসভা কেন্দ্রেও পরিবর্তনের হাওয়া ওঠে। ২০০৯, ২০১৪, ২০১৯ পরপর তিনবার সাংসদ হিসাবে সৌগত রায় পৌঁছান দিল্লি। দমদম লোকসভা কেন্দ্র যে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত সেগুলি হল- দমদম, দমদম উত্তর, পানিহাটি, খড়দহ, বরাহনগর, কামারহাটি, রাজারহাট গোপালপুর বিধানসভা। এই সাত বিধানসভাতেই বর্তমানে তৃণমূলের দখলে।
তবে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে বেশ কিছুটা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলেছে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের। এর মধ্যে একাধিক পুরসভার নাম জড়িয়েছে পুরনিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে। বরাহনগর, কামারহাটি, পানিহাটি, উত্তর দমদম রয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সির স্ক্যানারে। প্রায়শই কোনও কোনও শাসকনেতাকে ডাক পাচ্ছেন, প্রয়োজনে পৌরসভা গুলিতেও হানাও দিয়েছে তদন্তকারীরা। ফলে ভোটের আগে এই কাঁটা কিছুটা হলেও বিরোধীদের বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে।
দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। বরাহনগরের তিনবারের বিধায়ক ছিলেন তিনিই। স্বভাবতই লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁর দলত্যাগ শাসকশিবিরে কিছুটা হলেই ধাক্ক লেগেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যের শাসক দল কিছুটা ব্যাক ফুটে থাকলেও, দল ভরসা রেখেছে প্রবীণ সাংসদ অধ্যাপক সৌগত রায়ের উপরই। গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৫ লাখ ১২ হাজার ৬২ ভোট পেয়ে জয়ী হন সৌগত রায়। ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯০ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন সিপিএম প্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্য। জতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী সৌরভ সাহা পান ২৯ হাজার ৯৭ ভোট। শিবসেনা প্রার্থী ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝুলিতে গিয়েছিল ৪ হাজার ৯ ভোট। আর ১৪ হাজার ৪৯১ ভোট পড়েছিল নোটায়।
এবার ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে দমদম লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬৫৬। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৮ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯০ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৮ লক্ষ ৬১ হাজার ৫২১ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন মাত্র ৪৫ জন। মোট ভোট গ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে ১৭৯২ টি যেখানে ভাগ্য নির্ধারিত হবে ১৪ জন প্রার্থীর। স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা রয়েছে ৫৭২ টি।
এবার এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের সঙ্গে লড়াইয়ের ময়দানে একসময়ের তৃণমূল থেকে আশা শীলভদ্র দত্তকেই দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। সিপিআইএমের তরফ থেকে ভোটের নির্বাচনী লড়াইয়ে নামানো হয়েছে সুজন চক্রবর্তীকে। ফলে এবারের দমদম লোকসভা নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আবারও ফুটবে ঘাসফুল! নাকি বিজেপির পুরনো ঘাঁটির দখল নেবে পদ্ম শিবির! নাকি চমক দেবে বামেরা। জনতার রায় কোন দিকে যায় এখন সেটাই দেখার, আর তার জন্য অপেক্ষা নির্বাচনের ফল ঘোষণার।
Rudra Narayan Roy