বিপদের মুখে জওয়ান এর কর্তব্যপালন সবার প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে

কান ফাটানো আওয়াজ, বীভৎস অবস্থা! বিএসএফ জওয়ান যা করলেন, স্যালুট করবেন

শিলিগুড়ি : এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে অসুস্থ মাকে দেখতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে চেপেছিলেন জওয়ান। সেই ট্রেনে চেপে বর্ধমানের নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন বিএসএফ জওয়ান রাজকুমার বটব্যাল।

যাত্রার শুরুতেই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার সাক্ষী ওই জওয়ান। সিগন্যালের অপেক্ষায় রাঙাপানিতে দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে পেছন থেকে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি জার জেরে দুমড়ে মুচড়ে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পেছনের তিনটি বগি।

জেনারেল বগিতে ছিলেন সেই জওয়ান। তাঁর সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন তিনি। প্রতিকূল পরিবেশে অভ্যস্ত রাজকুমার নিজের আঘাত উপেক্ষা করে তখন একে একে বাঁচাচ্ছেন সহযাত্রীদের ৷

আরও পড়ুন- ইলেকট্রিক স্কুটারে আগুন লাগে কেন? ‘এই’ ৫ ভুল কারণ! দুর্ঘটনা এড়াতে জেনে রাখুন

ওই পরিস্থিতিতে তাঁর মাথায় ছিল না নব্বই পেরনো মায়ের অসুস্থতার কথাও৷ রাজকুমারের কথায়, এটাই তো বিএসএফ-এর স্লোগান, ‘ডিউটি আনটিল ডেথ’। অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত কর্তব্য পালন। সেই ধর্মেই দীক্ষিত বিএসএফ কর্মীর কাছে ওই মুহূর্তে সহযাত্রীদের উদ্ধার করাটাই ছিল একমাত্র মিশন ৷

বিএসএফ ইনস্পেক্টর রাজকুমার বটব্যাল। বিএসএফের কমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং বিভাগে কর্মরত তিনি। বর্তমানে তিনি মেঘালয়ের টুরাতে কর্মরত ছিলেন। তিনি সোদপুরের বাসিন্দা।

তাঁর নব্বই বছরের মা কোমায় রয়েছেন। তিনি কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। তাই এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে মাকে দেখতে কলকাতায় যাচ্ছিলেন রাজকুমার বটব্যাল। কিন্তু কে জানত তার জন্য ভয়াবহ ঘটনা অপেক্ষা করছিল।

মালগড়ির ধাক্কাতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের ওই কামড়াটি যখন অন্য একটি বগির উপর উঠে যায়, তখন সাত-আটজন যাত্রী এসে পড়েছিল রাজকুমারের উপর ৷ সবাইকে একে একে কামরা থেকে বের করে তারপর নিজে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন রাজকুমার বটব্যাল । কিন্তু এসবের মাঝেই খোয়া যায় তাঁর মোবাইল ও মালপত্র। পরে অবশ্য উদ্ধারকারী পুলিশ তাঁর খোয়া যাওয়া সামগ্রী খুঁজে বের করে তাঁকে ফিরিয়ে দেন। আহত রাজকুমারকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে ৷

আরও পড়ুন- ১০৪ টাকার পেট্রোলে ৭৩ কিমি রাস্তা! দুরন্ত মাইলেজ ‘এই’ বাইকের, দামও সস্তা

তাঁর চিকিৎসার পর মঙ্গলবার সকালে ওই বিএসএফ কর্মীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় । বিপদের মুখে তাঁর কর্তব্যপালন সবার প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে ৷

রাজকুমারকে ধন্যবাদ জানান আরপিএফ কর্মীরা ।হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়ে রাজকুমার বটব্যাল বলেন, “আমার মা কোমায় রয়েছেন ৷ তাঁকে দেখতেই কলকাতায় যাচ্ছিলাম ৷ কিন্তু এই ঘটনার পর মাথায় তখন আর কিছু আসেনি। হুড়মুড়িয়ে সবাই উপর থেকে নীচে গড়িয়ে পড়ে।একে একে সবাইকে উদ্ধার করি। সবার শেষে নিজে বের হই।”

অনির্বাণ রায়