ঘাটালের ভাসাপুল

West Medinipur News: নদীর উপরে নৌকায় ভাসছে আস্ত ব্রিজ, দূরে নয় এই বাংলায় রয়েছে এমন আশ্চর্য জিনিস

পশ্চিম মেদিনীপুর: বাংলার আনাচে কানাচে রয়েছে নানান ইতিহাস। সেই ইতিহাসকে পরম্পরায় বাঁচিয়ে রেখেছে সাধারণ মানুষ। হয়তো সকলে কংক্রিট কিংবা বাঁশের সাঁকো দেখেছেন। কিন্তু কংক্রিট কিংবা বাঁশের সাঁকো ছেড়ে যদি সেই ব্রিজ হয় নৌকার উপরে, তবে একটু অবাক হতে হয়। বাঁশবিহীন বা কংক্রিটবিহীন এমন একটি ব্রিজ রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতে। যা শুধু জেলার নয়, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে এক আশ্চর্যের বিষয়। নৌকোর উপর পাটাতন বিছানো। তার উপর দিয়ে দিব্যি হেঁটে চলেছে মানুষজন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালে রয়েছে নৌকো দিয়ে নির্মিত ভাসাপুল। ব্রিটিশ আমলের এইঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছেন সাধারণ মানুষ।

ঘাটাল শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে শিলাবতী নদী। সেই নদীর উপর বেশ কয়েকটি নৌকো দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি আস্ত ব্রিজ। এটাই শুধু যাতায়াতের পথ নয়, গবেষকদের গবেষণা, এমনকি ভ্রমণপিপাসু মানুষদের কাছে এক আশ্চর্যের ডেস্টিনেশন। প্রসঙ্গত, শিলাবতী নদীতে ৯-১০ টি নৌকোর উপর পাটাতন বিছিয়ে এই বিশেষ পুল তৈরি করা হয়। নদীর জলস্রোতের প্রবাহ ও জলস্তরের কারণে পুলটি ভাসমান অবস্থায় উঠানামা করে।এই কারণে এটির নাম দেওয়া হয় ভাসাপুল। তবে ইংরেজ সময়কালে এই বিশেষ সেতু দিয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অনুমতি ছিল না।

সেই সময় শুধুমাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯০০ সালের প্রথম নাগাদ সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এই ভাসাপুল। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইংরেজ আমলে শিলাবতী নদীর পশ্চিম পাড়ে ইংরেজ শাসক ওয়াটসনের রেশম কুঠি নির্মাণ করা হয়েছিল। আর পূর্ব পাড়ে ছিল ইংরেজদের আবাসন। শুধু তাই নয় শিলাবতীর নদীকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ব্যবহার করত ইংরেজ শাসকেরা। স্বাভাবিকভাবে নিত্যদিন নদী পারাপার একটি ঝক্কির ঘটনা ছিল। তাই তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিলাবতী নদীর উপর নৌকার দিয়ে সাঁকো বানানো হয়। সেই সময়ে আধুনিক প্রযুক্তি, কংক্রিটের ব্যবহার সে অর্থে না থাকায় নদীর উপর নৌকো দিয়ে তৈরি করা হয় এই ভাসাপুল।

আরও পড়ুনঃ India vs Bangladesh: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলে চমক! হতে পারে একাধিক পরিবর্তন? জানুন বিস্তারিত

১৭০ বছরেরও বেশি পুরানো এই ভাসাপুল ঘাটালবাসি সহ বিভিন্ন মানুষের পায়ে পায়ে জড়িয়ে রয়েছে। আবেগ, ঐতিহ্য নিয়ে এখনও তার স্মৃতি বজায় রেখেছে এই সাঁকো। বর্তমানে ঘাটাল পৌরসভা এই সাঁকোর রক্ষণাবেক্ষণ করছে। ঘাটালের আবেগ, ঐতিহ্য যুগের পর যুগ বাঁচিয়ে রেখেছে স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসন। বন্যায় বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাংলার কাছে এক অন্যতম সুদৃশ্য ও নতুন জিনিসের নয়া ডেস্টিনেশন ভাসাপুল।

রঞ্জন চন্দ