পায়রা রেস 

Pigeon Race: আকাশজুড়ে পারাবতদের উড়ান প্রতিযোগিতা! রায়গঞ্জের সোফার কারিগরের উদ্যোগে এখনও সজীব এই প্রাচীন প্রথা

পিয়া গুপ্তা, উত্তর দিনাজপুর: রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আজও শোনা যায় অভিনব ” পায়রা রেস” এর কথা। একটা সময় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলিতে এই “পায়রা রেস” আয়োজন করা হলেও এখন একেবারেই সেই প্রতিযোগিতা চোখেই পড়ে না। তবে রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগর কালিবাড়ির বাসিন্দা পেশায় সোফামিস্ত্রি রাজকুমার মণ্ডল(৪২) সেই ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছেন।

বছরে দু’ থেকে তিন বার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন তিনি। সেজন্য কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে বিচারকরা আসেন সেই প্রতিযোগিতায়। কিন্তু কীভাবে আয়োজন করা হয় এই পায়রা রেস, জানেন কি? এই  “পায়রা রেসিং ” হল বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত  পায়রাগুলোকে আকাশে ছেড়ে দেওয়ার খেলা। পায়রাগুলি পরে ফের মালিকের কাছে ফিরে আসে।

এই পায়রা রেসিং-এ বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসা পায়রাগুলোকে একসঙ্গে আকাশে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করতে পায়রাগুলির যে সময় লাগে তা পরিমাপ করা হয়। এবং কোন পায়রাটি সর্বোচ্চ গতিতে ফিরে এসেছে তা নির্ধারণ করে সেই পায়রাকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই পায়রা রেসিং প্রতিযোগিতা বিশেষ করে।ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসে আয়োজন করা হয়।

আরও পড়ুন : কোষ্ঠকাঠিন্যের যন্ত্রণায় কেঁদে ফেলছেন? খেজুর খান এইভাবে, মুক্তি পাবেনই অস্বস্তি থেকে

রায়গঞ্জের বাসিন্দা রাজকুমার মণ্ডল তাঁর বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির পায়রা পোষেন। তাঁর বাড়িতে রয়েছে প্রায় ১৫ প্রজাতির ১০০ টি পায়রা। প্রতিটি পায়রা পোষ মানানো। বাড়ির ছাদে পায়রাদের জন্য বিভিন্ন মাপের খাঁচা রয়েছে। মাঝেমধ্যে রাজকুমার তাদের প্রশিক্ষণের জন্য খাঁচার বাইরে নিয়ে আসেন।

রাজকুমারবাবু জানান, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে রায়গঞ্জে পায়রা পোষার পাশাপাশি তিনি “পায়রা রেসের ” আয়োজন করেন। এই রেসে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পায়রা কোনও মাঠে নয়, তারা উড়ে যায় ভিন দেশে বা ভিন রাজ্যে। আট থেকে দশ ঘণ্টা পর আবার ফিরে আসে নিজের জায়গায়। যেখান থেকে ওড়ানো শুরু হয় সেখানেই চলে আসে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী পায়রাদের রং করা হয়।

রায়গঞ্জে আজ থেকে আট-দশ বছর আগে পায়রা রেস-এর অংশ নিতেন বেশ কয়েকজন। কিন্তু নতুন প্রজন্ম আগ্রহী না হওয়ায় তা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। রাজকুমার মণ্ডল রায়গঞ্জের সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতেই প্রতি বছর দুই থেকে তিনবার পায়রা রেসের আয়োজন করেন। রেসের জন্য একমাত্র রেসিং হোমার পায়রাদেরই ট্রেনিং দেওয়া হয়। জন্মানোর সাত দিনের মধ্যে রেসিং মাদ্রাস হোমার পায়রাদের পায়ে মেটালের রিং পরিয়ে দেওয়া হয়।

পায়রাকে প্রথমে চেনানো হয় তার নিজের বাসস্থান। তার পর ধীরে ধীরে তার আশপাশের কিছু জায়গা। মাদ্রাস হোমার পায়রা এক বার জায়গা চিনে গেলে সহজে ভুলে যায় না। এদের স্মৃতিশক্তি প্রখর। যেখানেই পাঠানো হোক, ঠিক ফিরে আসে বাসস্থানে। উল্লেখ্য, আমেরিকান ফ্রাঙ্কটাইল, টেল মার্ক, আমেরিকান শ্যাটেল, ফিল ব্যাক-সহ একাধিক প্রজাতির পায়রা পোষেন রায়গঞ্জের রাজকুমার।