বর্তমান জীবনে একের পর এক রোগ ক্রমশ ছেঁকে ধরছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ছন্দ। অনিয়মিত জীবন আর খাওয়া দাওয়া যার অন্যতম কারণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর সেই জন্যেই সময় থাকতেই সুস্থ থাকার চেষ্টা করা জরুরি।আজকাল সুস্থ থাকতে অনেকেই ভরসা করেন মুঠো মুঠো হেলথ সাপ্লিমেন্টের উপর। কিন্তু জানেন কী কিছু কিছু শাক-সবজি ও ফলফলাদিতে থাকে এমন পুষ্টি গুণ যা যে কোনও ওষুধের থেকে কোনও অংশে কম নয়।এক্ষেত্রে অন্যতম দুর্দান্ত একটি সবজি হল ব্রকলি। তারুণ্য ধরে রাখতে এই সবজির জুড়ি মেলা ভার। ব্রোকলিতে থাকে ভিটামিন কে এবং সি এর মতো অনেক পুষ্টি যা বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। জীবনী শক্তি বাড়িয়ে এই সবজি আপনাকে আরও কম বয়সি দেখাতে দারুণ কার্যকরী ভূমিকা নেয়।পুষ্টিবিদ পূজা পালরিওয়ালা সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে দাবি করেছেন যে এমনকি ব্রকলিতে কমলা লেবুর তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে এবং দুধে পাওয়া ক্যালসিয়ামের মাত্রার সঙ্গে টেক্কা দিতে পারে এই সবজির ক্যালসিয়াম।ইনস্টাগ্রাম পোস্টে, পালরিওয়ালা ব্রকলির পুষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের উপর জোর দিয়েছেন। সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য তিনি এই সবজিটিকে ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন।ব্রকলিতে আছে অনেক পুষ্টিগুণ এবং বিভিন্ন ঔষধি গুণ যা আমাদের শরীরের প্রতিদিনের প্রয়োজন। তাই এখন সারা বিশ্বের মানুষ এই একটি সবজির রীতিমতো ফ্যান। পিছনে রয়েছে বড় কারণ।ব্রকলিতে থাকা ফাইবার স্থূলতার সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি দুর্দান্ত সমাধান। আবার এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং শরীরের ওজনও কমায়।ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে এবং দাঁত ও হাড় সংক্রান্ত সমস্যা নিরাময় করে।ব্রকলিতে সালফোরাফেন নামক রাসায়নিকের পরিমাণ বেশি থাকে। এটি প্রাকৃতিকভাবে ক্যানসার কোষের মৌলিক বৃদ্ধি ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। মহিলারা তাঁদের ডায়েটে ব্রকলি অন্তর্ভুক্ত করে ক্যানসারের মতো মারণ রোগের ঝুঁকি এড়াতে পারেন যা মহিলাদের বেশি প্রভাবিত করে।ব্রকলিতে থাকা Indole-3 carbinol এবং kaempferol শরীরে ক্যানসারজনিত প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। কোলন, লিভার, মূত্রাশয়, স্তন এবং ফুসফুসের ক্যানসার নিরাময়ের ক্ষমতাও ব্রকলিতে রয়েছে।সম্প্রতি, বিপুল সংখ্যক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু ব্রকলিতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা থাকায় ডায়াবেটিক রোগীরা এটি খেতে পছন্দ করেন।ব্রকলি, মুগ ডাল এবং পালং শাক স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ধন্বন্তরি। বলা হয়, যদি ৮ মাস বয়সি শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ সবাই যদি সপ্তাহে অন্তত ২ বার ব্রকলি খান তাহলে স্মৃতিশক্তি বাড়বে।শক্তিশালী হাড়ের জন্য ভিটামিন কে অপরিহার্য। এই ভিটামিন কে-এর ঘাটতি আছে এমন খাবার যাঁরা খায় তাঁদের ভবিষ্যতে অস্টিওপোরোসিসের মতো হাড়ের রোগ এবং ফ্র্যাকচার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই ব্রকলি এঁদের জন্যও খাওয়া ভাল।ব্রকলি ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। এই পুষ্টি উপাদান ত্বককে আর্দ্রতা হ্রাস থেকে রক্ষা করে। ত্বকের বলিরেখা রোধ করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং তারুণ্যময় চেহারা দেয়।বাঁধাকপি এবং ফুলকপি পরিবারের সদস্য ব্রকলি ফাইবার, পটাসিয়াম, আয়রন, কপার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন কে, সি এবং কে সমৃদ্ধ। স্যালাড থেকে শুরু করে স্যুপ পর্যন্ত, আপনি বিভিন্ন উপায়ে আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ব্রকলি যোগ করতে পারেন।ব্রকলি ফাইবার সমৃদ্ধ এবং যাঁদের হজমের সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তাঁদের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত খাবার। এটি পাকস্থলী এবং অন্ত্রে হজমকারী জীবাণুর বৃদ্ধি বাড়ায় এবং খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যও প্রতিরোধ করে। তাই সপ্তাহে দুবার ব্রকলি খাওয়া ভাল।ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এটি শুধুমাত্র আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় না বরং ত্বকের স্বাস্থ্যকেও ভাল রাখে। ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।যাঁরা সপ্তাহে অন্তত দুবার ব্রকলি খান, এটি তাঁদের শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কোষগুলি ধ্বংস করে শরীরকে চাঙ্গা করে। এটি আপনার ত্বকের তারুণ্য চিরতরে ধরে রাখবে।শর্তত্যাগ: শুধুমাত্র আপনাদের সচেতনতার উদ্দেশ্যেই এই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে। আমরা এই লেখায় সাধারণ জ্ঞান ও দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ তথ্য শেয়ার করেছি মাত্র। আপনি যদি কোথাও আপনার স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানের যোগ সম্পর্কিত কিছু পড়েন তবে তা গ্রহণ করার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
