হাওড়ার বস্তিতে বাহাদুর শাহর ছবি হাতে সুলতানা বেগম

The Lost Mughal in Howrah Slum: ভাড়ার এক চিলতে ঘরে ঢোকে না আলো, হাওড়ার ঘিঞ্জি বস্তিতে অভাবী দিন গুজরান মুঘল ‘বেগম’ ও বংশধরের

রাকেশ মাইতি, হাওড়া: বস্তিতেই দিন গুজরান করছেন মুঘল বংশের বেগম! ভারতের ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছে মুঘল সম্রাটদের ইতিহাস। কিন্তু সেই বেগমের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন। হাওড়ার বস্তিতেই চরম অভাবে দিন কাটাচ্ছেন মুঘলদের শেষ বেগম সুলতানা।

তবে বস্তি থেকেই লাল কেল্লার অধিকার চেয়ে লড়াই চালাচ্ছেন বাহাদুর শাহ জাফরের উত্তরধারার বেগম সুলতানা এবং বংশধর কামাল বখ্ত। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর বা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ দেশান্তরে নির্বাসিত হন। তাঁর বংশধরদের কেউ কেউ ভারতে চলে আসেন। তেমনই একজন উত্তরসূরি মির্জা মহম্মদ বেদার বখ্তার। তাঁর স্ত্রী সুলতানা বেগম।  তাঁর পরিবার নিয়ে সুলতানা বেগম বর্তমানে রয়েছেন হাওড়ার এক বস্তিতে। গৌরবময় বংশ পরিচয় হলেও মুঘল বেগমের ঠিকানা এখন গঙ্গা লাগোয়া বস্তি।

কলকাতার তালতলার পর, গত প্রায় চার দশকের বেশি সময় হাওড়ার এই বস্তির একখানা ভাড়াবাড়িতে ঠাঁই হয়েছে। ঘিঞ্জি এলাকা, ছোট টালির ছাউনিতে কোনও রকমে মাথা ঢাকা। ছোট একখানি জানালা, ঘরের মধ্যে ঠিকমতো আলো পর্যন্ত প্রবেশ করে না। ছেলের হাতে কাজ নেই। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ভারতের শাসনভার চলে যায় ইংল্যান্ডের রানির হাতে।

আরও পড়ুন : সরষেবাটা, ভাপা তো অনেক খেলেন, এ বার সহজেই রাঁধুন ইলিশের কোরমা ও পোলাও! রইল চটজলদি রেসিপি

এর পর ভারত থেকে নির্বাসিত হন সিংহাসনচ্যুত বাহাদুর শাহ জাফর। রাজত্বহীন বাহাদুর শাহকে দিল্লি থেকে বন্দি করা হয়। বিচারে তাঁর নির্বাসনের সাজা ঘোষণা করা হয়। বাহাদুর শাহ এবং তার পরিবারের কয়েকজনকে তৎকালীন রেঙ্গুন-এ (ইয়াঙ্গন) পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১৮৬২ সালে ইয়াঙ্গনে মৃত্যু হয় শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ-র। তাঁর পুত্র জওঁয়া বখ্ত, পৌত্র জামশেদ বখ্ত এবং প্রপৌত্র মির্জা মহম্মদ বেদার বখ্ত। ১৯৮০ সালে স্বামী মির্জা মহম্মদ বেদার বখ্তের মৃত্যুর পর ৪০০ টাকা পেনশন পেতেন সুলতানা বেগম। ২০১০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের কাছে দরবার করার পর পেনশন বেড়ে ৬০০০ টাকা হয়।

সুলতানা বেগম জানান, ‘‘স্বাধীনতার পরও দেশের একাধিক রাজবংশের বড় বড় প্রাসাদ রয়েছে। মোটা টাকা পেনশন পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু আমাদের কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, ‘তাজমহল’ যে বংশের হাতে নির্মিত, সেই বংশধরদের নিজস্ব বাড়ি পর্যন্ত নেই। এখন ভরসা বলতে, মাত্র ছয় হাজার টাকা পেনশন পাই। এই অল্প টাকায় সংসার কার্যত অচল।’’

বছর তিনেক আগে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছিলেন মুঘল বেগম সুলতানা। আদালতে দাবি করেন ঐতিহাসির লালকেল্লা তাঁদের বংশের সম্পত্তি। তার ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেছিলেন, বলে জানা গিয়েছে। যদিও সেই মামলা দিল্লি হাইকোর্টে গ্রহণ করা হয়নি। তবুও নিজের অধিকার এবং দাবি জিইয়ে রাখতে চান সুলতানা। এদিকে ৭১ বছর বয়সি সুলতানা বেগমের পেনশনের টাকার ভরসাতেই ঘর ভাড়া থেকে অন্ন সংস্থান, এমনকি চিকিৎসার খরচও চলে কোনওমতে।