মহিলা শিল্পীরা 

Kantha Stitch Dress: ঝরঝর করে ইংরেজি বলছেন বাংলার এই গ্রামের মহিলারা! বেড়েছে বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা

পূর্ব বর্ধমান: আউশগ্রামের ওয়ারিশপুর গ্রামের প্রায় শতাধিক মহিলা কাঁথা স্টিচের শাড়ি, পাঞ্জাবি, কুর্তি, দোপাট্টা, বিছানার চাদর তৈরি করেন। তাঁদের হাত ধরে এই গ্রামে ক্রমে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে কাঁথা স্টিচ শিল্প। কেউ মা-কাকিমার হাত ধরে শিখেছেন কাপড়ের উপর সুতোর নকশার এই কাজ। আবার কেউ বিয়ের পর এই গ্রামে এসে প্রতিবেশীদের দেখেই শিখেছেন কাঁথাস্টিচের কাজ। ছুঁচ-সুতো নিয়ে বসে শাড়িতে নকশা ফুটিয়ে তোলেন তাঁরা। ব্যাঙ্গালোর সিল্ক বা তসরের একটি শাড়ির উপর নানা সূক্ষ্ম কারুকার্য তাঁরা ফুটিয়ে তোলেন।

বর্তমানে পূর্ব বর্ধমানের ওয়ারিশপুরের কাঁথাস্টিচের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশেও। জঙ্গলমহলের এই গ্রামে এখন যাতায়াত বেড়েছে বিদেশি পর্যটকদেরও। জাপান, ইতালি, ফ্রান্স, আমেরিকা থেকেও পর্যটকরা এসেছেন এই গ্রামে। অনেক পর্যটক এখানকার কাঁথাস্টিচের জিনিসও কিনে নিয়ে গিয়েছেন। বিদেশি পর্যটকদের ভাষা বোঝার জন্য ওয়ারিশপুরের শিল্পকর্ম বিদেশীদের সামনে তুলে ধরার জন্য, স্পোকেন ইংলিশের ক্লাসও করেছেন এই গ্রামের মহিলারা।

আর‌ও পড়ুন: সপ্তাহ শেষে টুক করে ঘুরে আসুন এই গ্রাম, মন জুড়ানো প্রকৃতির মাঝে ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয়

এখানকার মহিলা শিল্পীদের বেশিরভাগের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হলেও তাঁরা বুঝতে পারেন বিদেশিদের বলা ইংরাজি কথা। বিদেশীদের কথা বুঝে মহিলারা তাঁদের জিনিস বিক্রিও করেন। ওয়ারিশপুর গ্রামের এক শিল্পী বুলটি বিবি এই বিষয়ে বলেন, বাংলা নাটক ডট কম আমাদের অনলাইনের মাধ্যমে ছয় মাসের একটা ক্লাস করিয়েছিল। সেখানেই আমরা ইংরেজিতে কথা বলা শিখেছি। ভালভাবে বলতে না পারলেও আমরা বিদেশিদের কথা বুঝি এবং তাঁদের বোঝাতেও পারি।

আগে ওয়ারিশপুরের মহিলারা মহাজনের কাছ থেকে বরাত পেয়ে কাজ করতেন৷ তবে সেসময় উপার্জনও সেভাবে হত না। কিন্তু এখন তাঁরা নিজেরাই নিজেদের শিল্পকর্ম অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করেন। এমনকি ওয়ারিশপুর গ্রামের অনেকেই বিদেশেও নিজেদের শিল্পকর্ম বিক্রি করেন৷ আবার বিদেশিরাও আসেন গ্রামে। এরফলে আগের তুলনায় তাঁদের আয় বেড়েছে বেশ খানিকটা। এক কথায় এখন অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করেন এই গ্রামের মহিলা শিল্পীরা। এই বিষয়ে বুলটি বিবি আরও বলেন, এই কাজ করেই আমাদের হাল ফিরেছে। এখান থেকে উপার্জন করা টাকা দিয়ে আমরা সংসারের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারি। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচও দিই। টাকার জন্য আর কারোর কাছে হাত পাততে হয় না।

ওয়ারিশপুরের শিল্পীদের হাতে তৈরি বিছানার চাদর, শাড়ি, পাঞ্জাবি সহ নানা কাঁথাস্টিচের নকশা তোলা পোশাক কলকাতা, বেঙ্গালুরু, মুম্বই এমনকি আমেরিকায় বিক্রি হচ্ছে অনলাইনের উপর ভর করেই৷ এক একটা কাঁথাস্টিচের বিছানার চাদরের দাম ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। তাছাড়া ব্যাঙ্গালোর সিল্কের ডিজাইনার শাড়ি সাড়ে দশ হাজার টাকা থেকে শুরু৷ তবে শুধু শাড়ি বা চাদর নয়। পালাজো, দোপাট্টা সহ এখন আধুনিক পোশাক’ও তৈরি করেন এই শিল্পীরা।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী