গুণেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় 

Purba Bardhaman News: চিকিৎসকই স্বাধীনতা সংগ্রামী! কাটোয়ার ‘গুণীবাবু’র গল্প অবাক করবে সকলকেই…

পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের বিশিষ্ট এই ব্যক্তিও দেশীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া শহরের বাসিন্দা ছিলেন ড. গুণেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। কাটোয়া মহকুমা তথা শহর জুড়ে তিনি গুণীবাবু বাবু নামেই পরিচিত ছিলেন। গুণেন্দ্রনাথ বাবু ১৮৭৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নদীয়ার বামুনপাড়ায় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমান পূর্ব বর্ধমান জেলার অগ্রদ্বীপের কালিকাপুর ছিল তাঁর পৈতৃক বাড়ি। তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার। এবং তাঁর মা হেমলতা দেবী ছিলেন একজন সাধারণ গৃহবধূ। গুণেন্দ্রনাথ বাবু ১৮৯৯ সালে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ থেকে এলএমএস ডিগ্রি পাস করেন।

পরবর্তীতে গুণেন্দ্রনাথ বাবু তাঁর বাড়ি তৈরি করেছিলেন কাটোয়া শহরের বারোয়ারিতলায়। আজও সেই বাড়ি রয়েছে । গুণেন্দ্রনাথ বাবুর নাতি রঘুনাথ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “সেই সময় আমার দাদু ডাক্তারি করতেন এবং ডাক্তারি করার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এবং তৎকালীন সময়ে কাটোয়াতে, বিভিন্ন গ্রামে স্বাধীনতা আন্দোলনের যে ঢেউ শুরু হয়েছিল, তার মূলে ছিলেন আমার দাদু। আমার দাদু এবং বিভিন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এখানে যে নেতাজি সুভাষ আশ্রম আছে, সেখান থেকে সমস্ত সংগ্রাম আন্দোলন পরিচালনা করতেন।”

আরও পড়ুন: আমকে ১০ গোল দেবে ‘এই’ ফল! অল্প খরচে সহজেই ফলিয়ে নেওয়া, প্রচুর টাকা লাভ 

আরও পড়ুন: স্কুলে গণ্ডি পেরিয়েই স্বাধীনতা-সংগ্রামে ‌যোগ! এই গ্রামে আজও বরেণ্য সুবর্ণ সর্দার

বাংলার বিভিন্ন বিপ্লবী প্রতিষ্ঠান এবং বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ডক্টর গুণেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে আইন অমান্য আন্দোলন, ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও তাঁর বড় অবদান রয়েছে। জানা যায়, গুণেন্দ্রনাথ বাবু নিজের হাতে কাটা সুতোয় তৈরি খাদি বস্ত্র ব্যবহার করতেন। কাটোয়া মহকুমা জুড়ে তিনি খাদির প্রচারও চালিয়েছিলেন ব্যাপকভাবে। এছাড়াও কাটোয়া মহকুমার সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে তিনি যুক্ত ছিলেন। গুণেন্দ্রনাথ বাবুকে তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য একাধিকবার জেলেও যেতে হয়েছিল। গুণেন্দ্রনাথ বাবুর নাতি রঘুনাথ   বলেন, “বহুবার জেল খেটেছেন দাদু। এবং অনেক জেলে তিনি নিজের হাতে রান্না করে খেতেন। প্রতিদিন ভোর বেলায় গঙ্গায় স্নান করা এবং বাড়ির ঠাকুরের পুজো করা তাঁর নিত্যভ্যাস ছিল। তাঁর বাড়ি উদারভাবে খোলা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য।”

গুণেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিভিন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পাশাপাশি যোগাযোগ ছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর। গুণেন্দ্রনাথ বাবুর নাতি রঘুনাথ বাবু তাঁর দাদুকে দেখেননি। তবে আজও দাদুর নাম শুনলে তিনি নিজে গর্ব অনুভব করেন। প্রত্যেক বছর স্বাধীনতা দিবসের দিনে পতাকা উত্তোলন করেন বাড়ির ছাদে। দাদুর পুরনো ছবি এবং স্মৃতি আজও বহন করে চলেছেন তিনি। গুনেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ১৯৫৫ সালের ১০ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী