স্বাধীনতার ইতিহাসের সাক্ষী এই বাড়ি

Independence Day: বন্দেমাতরম গানের স্রষ্টার আঁতুর ঘর নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায়! আজও বহন করছে স্বাধীনতার ইতিহাস

উত্তর ২৪ পরগনা: ব্রিটিশ শাসনাধীন উনিশ শতকের বাঙালি মনীষীদের মধ্যে ‘কমলাকান্ত’ ছদ্মনামে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা এই বাঙালির কলমেই ধরা দিয়েছিল স্বাধীনতার লড়াইয়ে শক্তি জোগানো ‘বন্দেমাতরম’ গান। গানটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় স্তোত্র হয়ে ওঠে।

নৈহাটি স্টেশন থেকে হাটা পথে বড়জোর মিনিট দশেক গেলেই পৌঁছে যাবেন বন্দেমাতরম-এর স্রষ্টা তথা সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের জন্ম ভিটেয়। ১৮৩৮ সালে এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরবর্তীতে নৈহাটির কাঁঠালপাড়ার এই বাড়িতেই বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্কিমচন্দ্র কাটিয়েছিলেন তাঁর বাল্য, কৈশোর ও যৌবনের মূল্যবান সময়। তাই এই কাঁঠালপাড়া বঙ্কিমচন্দ্রের পাড়া নামেই পরিচিত।

আরও পড়ুন: আরজি করের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাই কোর্টের! আদালতের নজরদারিতে হবে তদন্ত

সারা বছরই সাহিত্য অনুরাগী থেকে ইতিহাস চর্চা ও উৎসাহী মানুষজন ঘুরতে আসেন সাহিত্যিকের এই জন্মভিটেয়। সাদা রঙের এই বঙ্কিম ভবনের অন্দরে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি-সহ সাহিত্যিকের পরিবার পরিজন ও ব্যবহারের নানা সামগ্রী। তবে ভিটেয় প্রবেশের প্রথমেই চোখে পড়বে তিন কামরার বৈঠকখানা বাড়িটি। সেই ভবনের লাগোয়া এক প্রাচীন শিবমন্দিরও রয়েছে। তার উল্টো দিকের সংরক্ষিত বসত ভিটেতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন সাহিত্য সম্রাট।

বাড়িটি তৈরি করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্রের বাবা, রায় বাহাদুর যাদব চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বৈঠকখানা বাড়িটি এখন মিউজিয়াম। সেখানে বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত নানাবিধ স্মারক সযত্নে সংরক্ষিত রয়েছে বলেই জানালেন বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্রের কিউরেটর গৌতম সরকার। দীর্ঘকাল সংস্কারের অভাবে ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছিল সাহিত্য সম্রাট এর এই জন্মভিটে। যা পরবর্তী কালে সংস্কার করা হয়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতরের পরিপোষিত গবেষণা এবং বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠে এটি। মাত্র ১০ টাকার টিকিট কেটে ঘুরে দেখতে পারেন সাহিত্য সম্রাটের এই বসতভিটে।

আরও পড়ুন: ছুটির আবেদন না করলেই অপসারণ! হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ শুনেই বড় পদক্ষেপ সন্দীপ ঘোষের

দোতলায় বঙ্কিমচন্দ্রের শোয়ার ঘর-সহ ব্যবহারের নানা জিনিস সংরক্ষিত রয়েছে। একতলায় সাহিত্যসম্রাটের আঁতুড়ঘর, বৈঠকখানা-সহ তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন ও স্বাধীনতার আন্দোলনের সাক্ষ্য বহন করা নানা সংরক্ষিত দুষ্প্রাপ্য জিনিসও চোখে পড়বে এই গবেষণাকেন্দ্রে। যে বৈঠকখানা বাড়িতে বসে সাহিত্যসম্রাট লেখা শুরু করেছিলেন বন্দেমাতরম গানটি, সেটি দেখতে কিন্তু ভুলবেন না। মূল ভবনের পূর্ব দিকে রয়েছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পারিবারিক সুদৃশ্য রাধা কৃষ্ণ মন্দির। যেখানে জন্মাষ্টমী ও রথ উৎসব ঘটা করে পালিত হয় আজও। পাশেই রাখা রয়েছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পারিবারিক রথটিও।

নৈহাটির কাঁঠালপাড়ার আঁতুড়ঘরে প্রতি বছর জন্মজয়ন্তী পালিত হয় সাহিত্য সম্রাটের। তবে শনি, সোম ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে সংগ্রহশালা বন্ধ থাকে। সংগ্রহশালাটি ঘুরে দেখতে চাইলে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে আসতে হবে। বাংলার নবজাগরণের অন্যতম এই পীঠস্থান আজও যেন বহন করছে স্বাধীনতার ইতিহাস।