পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় শতাধিক মহিলা কাঁথাস্টিচের শাড়ি, পাঞ্জাবী, কূর্তি, দোপাট্টা, মহিলাদের কাঁথাস্টিচের পোশাক, বিছানার চাদর তৈরি করেন। গ্রামের মহিলারা বহু বছর ধরে জড়িয়ে রয়েছেন কাঁথাস্টিচ শিল্পের সঙ্গে। কেউ মা-কাকিমার হাত ধরে শিখেছেন কাপড়ের উপর সুতোর নকশার এই কাজ। আবার কেউ বিয়ের পর গ্রামে এসে প্রতিবেশীদের দেখেই শিখেছেন কাঁথাস্টিচের কাজ। সূঁচ-সুতো নিয়ে বসে শাড়িতে নকশা ফুটিয়ে তোলেন তাঁরা। ব্যাঙ্গালোর সিল্ক বা তসরের একটি শাড়ির উপর বিভিন্ন সূক্ষ্ম কারুকার্য তাঁরা ফুটিয়ে তোলেন ।
মঙ্গলকোটের পিন্ডিরা, লক্ষ্মীপুর, শ্যামবাজার-সহ আরও বেশ কিছু গ্রামে কাঁথা স্টিচের কাজ হয়। এইসকল গ্রামের মহিলারা সংসার সামলানোর পরেও এই কাজ করেই অর্থ উপার্জন করেন। এই প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা তথা শিল্পী সেরিনা বিবি বলেন, “আমাদের আগে শুধুমাত্র সংসারের কাজ করতে হত। কিন্তু আমরা এখন সংসার সামলানোর পরে এই কাজ করি। আমাদের এখান থেকে অর্থ উপার্জন হয়। নিজের খরচ নিজেরা চালাতে পারি। অনেক সময় সংসারে ছেলেমেয়েদের সাহায্য করতে পারি।” একসময় শুধুমাত্র সংসারের দায়িত্ব সামলাতেই ব্যস্ত থাকতেন এই সকল শিল্পীরা। তবে কাঁথাস্টিচ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বর্তমানে তাঁরা নিজেরাও স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছেন। জানা গিয়েছে, সর্বপ্রথম শিল্পীদের শাড়ির থান কিনতে হয়। পরবর্তীতে সেই থানের মধ্যে যে নকশা হবে সেই নকশা ডিজাইনারের কাছ থেকে করিয়ে নিয়ে আসতে হয়।
শাড়ির মধ্যে নকশা ছাপার কাজ সম্পূর্ণ হলে তারপর মহিলা শিল্পীরা তাদের কাজ শুরু করেন। সুঁচ-সুতো নিয়ে সেই নকশা তৈরির কাজ শুরু করেন শিল্পীরা। এক একটা শাড়ির নকশা শেষ করতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগে বলেই জানা গিয়েছে। শিল্পীরা শাড়ির মধ্যে নকশা বোনার কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে পারলে তবেই বেশ কিছু টাকা উপার্জন করতে পারেন। শাড়ির মধ্যে নকশা বোনার কাজ শেষ হলে তারপর সেই শাড়ি অথবা পোশাক নিয়ে যাওয়া হয় বিক্রির জন্য। তবে শুধু শাড়ি নয়, একই পদ্ধতিতে আরও বিভিন্ন পোশাক তৈরি হয়। লক্ষ্মীপুর গ্রামের শিল্পী পারুল খাতুন জানিয়েছেন, “আমরা চাই আমাদের শিল্পকর্ম যেন বিদেশেও পৌঁছে যায়। আমরা যা শিখেছি সব মা , মাসি দের হাত ধরে। আমাদের যদি প্রশাসনের তরফে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাহলে আমাদের খুব সুবিধা হয়। আমরা এখনও পর্যন্ত কারোর কাছে কোনও সাহায্য পায়নি।”
আরও পড়ুন- বিরাট ক্ষতিকর…! ‘তেলাপিয়া’ মাছ-ই ডেকে আনছে ভয়ঙ্কর বিপদ, যা বলছেন গবেষকরা, শুনলে আঁতকে উঠবেন
বর্তমানে মঙ্গলকোটের এই প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে হাজার হাজার টাকার দামী দামী পোশাক তৈরি হয়। মহিলাদের হাতের কাজের মাধ্যমে যেন অন্যমাত্রায় পৌঁছে যায় এখানকার বিভিন্ন ধরনের পোশাক। বর্তমানে এই গ্রামগুলিতে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে পনেরো হাজার টাকা দামের শাড়িও তৈরি হয়। যার মধ্যে সবথেকে দাম বেশি গাছি তসর শাড়ির। জানা গিয়েছে, তৈরির পর শিল্পীরা কলকাতায় বিভিন্ন এক্সিবিশনে তাঁদের শিল্পকর্ম নিয়ে যান। এবং সেখানে সেইসব জিনিস বেশ ভাল দামে বিক্রি হয়। কলকাতা ছাড়াও রাঁচি, মুম্বই, এবং দিল্লিতেও মঙ্গলকোটের কাঁথাস্টিচের শিল্পকর্ম পাড়ি দিয়েছে। শুধু দেশের মধ্যে নয়, শিল্পীরা বিদেশেও তাঁদের শিল্পকর্মকে তুলে ধরতে চাইছেন। সকলেই প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে আবেদনও জানিয়েছেন।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী