হাওড়া: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদ্মানদীর বুকে ভেসে বেড়ানো সেই নৌকা এখন হাওড়ায়! রবীঠাকুর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এই নৌকায় পদ্মা নদীতে ভেসে বেড়াতেন। এটি একটি বজরা নৌকা। যদিও এটিকে কবিগুরু পদ্মাবোট নামে উল্লেখ করেছেন। আর বজরা বা পদ্মাবোটের অনুকরণে তৈরি নৌকা। আকারে ক্ষুদ্র হলেও হুবহু সেই নৌকার মতই কারুকার্য থেকে সুবিধা। সমস্ত রকম ব্যবস্থা একাধিক কক্ষ। বারান্দা ব্যালকনি যার মধ্যে সহজেই দিনের পর দিন রাতের পর রাত কাটাতেন কবিগুরু। সেই নৌকার অনুকরণে ক্ষুদ্র বজরা বা পদ্মাবোট তৈরি করেছেন নৌকা বিশেষজ্ঞ স্বরূপ ভট্টাচার্য।
একদা জমিদারির সূত্রে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে এসেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পদ্মার রূপে অভিভূত হলেন তিনি |এক বিকেলে পদ্মায় ভাসালেন তার বজরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বজরার নাম দিয়েছিলেন ‘পদ্মা’| কখনও বা পদ্মার পাড়ে বসে আবার কখনও বজরা পদ্মায় ভেসে লিখেছেন নানান কবিতা ও গান। দ্বারকানাথ ঠাকুরের আমলে তৈরী সেই বোট ছিল ঠাকুরবাড়ির অন্যতম এক বাহন। দ্বারকানাথ দেবেন্দ্রনাথের ব্যবহারের পর সেই বোট রাখা হয় শিলাইদহে। পদ্মাবোটে চড়ার পর থেকে কলকাতার বনেদিয়ানা ছেড়ে গ্রাম বাংলার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রথম পরিচয়। আর রবীন্দ্রনাথের পদ্মাবোটকে বাস্তবে ছোট আকারে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন নৌকা বিশেষজ্ঞ স্বরূপ ভট্টাচার্য যিনি এই নৌকাটি বানিয়েছেন হাওড়ায়। আর তাঁর বানানো নৌকাটির আকার প্রায় ১৮ ইঞ্চি অর্থাৎ ১ হাত প্রায়।
আরও পড়ুনঃ দাঁতে হলদে ছোপ, হারিয়েছে ঔজ্জ্বল্য! একটা কলা দিয়ে ঝকঝকে মুক্তোর মতো হাসি! জানুন পদ্ধতি
যেখানে রবীন্দ্রনাথের বজরা বা পদ্মাবোটের আকার ছিল আনুমানিক ৪০-৪৫ হাত। সাধারণ নৌকার থেকে এই নৌকার পার্থক্য হল এই নৌকা অনেক বেশি সৌখিন। আর রবি ঠাকুরের শখের এই নৌকা বানাতে আলাদা আনন্দ রয়েছে বলছেন নির্মাতা। আগেও একটি বজরা নৌকা বানিয়েছেন, এটি দ্বিতীয়। প্রথমটির থেকে এই নৌকাটির কারুকার্য আরও সৌখিন। যেভাবে বড় নৌকা তৈরি হয় সেই প্রক্রিয়াতেই এই ক্ষুদ্র নৌকাটি তৈরি।
রবীন্দ্রনাথের পদ্মাবোটের তক্তা জোড়া দেওয়ার জন্য জলুই নামে এক পিন দিয়ে তক্তা জোড়ার কাজ করেন বলে জানালেন স্বরূপ ভট্টাচার্য। শুধু তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদ্মাবোটের মতো নৌকার ডেকের বসার ঘর, শোবার ঘর এইরকম আলাদা আলাদা করে তৈরী করছেন স্বরূপবাবু। রবীন্দ্রনাথের নৌকা চলত পাল আর মাস্তুল দিয়ে এই নৌকাও তৈরী হয়েছে তেমনভাবে।এমনকি নৌকার উপরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে রেলিং। এ প্রসঙ্গে নৌকা বিশেষজ্ঞ স্বরূপ ভট্টাচার্য জানান, এই নৌকাটি তৈরি করতে বিদেশ থেকে কাঠ আমদানি করা হয়। নদীমাতৃক বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে নানা নৌকা নদীতে ভেসে বেড়ায়। কোনওটি হারিয়ে গেছে কোনটি হারিয়ে যাবার পথে আবার কোন নৌকোটির আকারগত ভাবে পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ নৌকাগুলি নিজের হাতে বানাচ্ছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল এই পদ্মাবোট বা বজরা। প্রায় একমাস অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে পূর্ণতা পেয়েছে এই বজরা।
রাকেশ মাইতি