পশ্চিম মেদিনীপুর: এবার আর প্রয়োজন নেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা। মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যাবে অনায়াসে। কম খরচে, দ্রুত এবং নিখুঁত মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্ভব। বিশেষ প্রযুক্তি বানিয়ে তাক লাগিয়েছেন আইআইটি খড়্গপুর। আইআইটি খড়্গপুরের একদল গবেষক এবং আন্তর্জাতিক শস্য গবেষণা কেন্দ্রের যৌথ সহযোগিতায় বিশেষ গবেষণায় সফলতা জুটেছে। যা আগামীতে কৃষি ক্ষেত্রে এবং কৃষি সংক্রান্ত একাধিক ক্ষেত্রে উপকৃত হবেন লক্ষাধিক মানুষ। দ্রুত পরীক্ষা করা যাবে মাটির স্বাস্থ্য। বর্ণালীবীক্ষন যন্ত্রের প্রতিফলনের (Diffused Reflectance Spectroscopy) সাহায্যে সহজেই জানা যাবে মাটির চরিত্র। ফলে কম খরচে, দ্রুত ও সহজেই মাটি পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। উপকৃত হবেন দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষক। সম্প্রতি, আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) কৃষি ও খাদ্য প্রকৌশল বিভাগের (AGFE) একদল গবেষক হায়দ্রাবাদের আন্তর্জাতিক শস্য গবেষণা সংস্থা (ICRISAT)-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই গবেষণা চালিয়ে সাফল্য পেয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ বাগে থাকবে সুগার! রোজ খাওয়ার আগে ‘ছোট্টো’ একটি কাজ! ১ মাসে ডায়াবেটিসের ছুটি
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোন অঞ্চলের মৃত্তিকার স্বাস্থ্য কেমন হবে, তা নির্ভর করছে সেই অঞ্চলের জলবায়ুর উপর। তবে, বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক এবং অপ্রাকৃতিক কারণে মাটির চরিত্র বদলে যায়। সমস্যায় পড়তে হয় কৃষকদের। ফসল ফলাতে সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। কৃষি বিজ্ঞানী অধ্যাপক বি এস দাস এবং আন্তর্জাতিক শস্য গবেষণা সংস্থার অধ্যাপক জ্যাকলিন হাগস জানান, “বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, অনিয়মিত বৃষ্টির ফলে সেই অঞ্চলের মাটির চরিত্র বদলে যাচ্ছে। কোনও অঞ্চলে একসময়ে যেসব ফসল বেশি উৎপন্ন হত, এখন আর তা হচ্ছে না! বীজের ও চাষের প্রকারভেদ বদলেও সেখানে আশানুরূপ ফসল পাওয়া যাচ্ছে না।”
মাটির স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে, উর্বরতা কিংবা মাটির অন্যান্য ক্ষমতা নির্ধারণ নয়। গবেষকেরা জানিয়েছেন, গবেষণায় উঠে এসেছে কোনও এলাকার মাটিতে লবনের পরিমাণ বেড়ে গেছে। আবার, কোথাও মাটির তলায় যে খনিজ থাকার কথা, তা আর নেই।ফলে, গাছ সেসব গ্রহণ করতে না পেরে বাড়ছে না। কৃষক আশানুরূপ ফসল পাচ্ছেন না। গত ১০০ বছর ধরে যে অঞ্চলে বেশি তুলো, ডাল, ধান, গম উৎপন্ন হতএখন আর তা হচ্ছে না। আধা শুষ্ক অঞ্চলের জলবায়ু খরার সঙ্গে পরিবর্তনশীল। অধ্যাপক দাস জানান, “কৃষিতে বৈচিত্র্য আনতে নতুন বীজ, কৃষি সরঞ্জামের পাশাপাশি এখন তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বর্ণালীবীক্ষন যন্ত্রের (Spectroscopy) প্রতিফলনের সাহায্যে বা DRS (Diffused Reflectance Spectroscopy) পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।” নতুন এই গবেষণা কৃষিকে নতুন দিশা দেখাবে বলে তাঁর মত।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, নামমাত্র খরচে এবং দ্রুততার সঙ্গে কোনও এলাকার তথা কৃষি খামারের মাটি পরীক্ষা করা সম্ভব এই পদ্ধতিতে। নতুন এই পদ্ধতিতে মাটি পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) বিজ্ঞানীরা। স্বাভাবিকভাবে এই আবিষ্কার আগামীতে কৃষি ক্ষেত্রে যে আমূল পরিবর্তন আনতে চলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
রঞ্জন চন্দ